নন্দীগ্রাম-তদন্ত
খেজুরির মাঝি, গোকুলনগরের ভ্যানচালককে জেরা সিআইডির
‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র ৯ নিখোঁজ কর্মী-সমর্থক সম্পর্কে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক জনের জবানবন্দি নিল সিআইডি। ২০০৭-এর ১০ নভেম্বর সিপিএমের নন্দীগ্রাম ‘পুনর্দখল’-পর্বে তাঁরা নিখোঁজ হন। সোমবার তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিআইডি দফতর এবং খেজুরি থানায় ডেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
নন্দীগ্রামের আহতদের এবং কয়েক জন নিহতের দেহ খেজুরিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং নিহত কয়েক জনের দেহ সেখান থেকেই ট্রলারে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে গিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। দেহ ভাসানোয় জড়িত সন্দেহে খেজুরি এলাকার ট্রলারের কয়েক জন মাঝিকে এ দিন থানায় ডেকে দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে জেরা করে ডিএসপি তাজ মহম্মদের নেতৃত্বে সিআইডি-র দল।
তমলুকে জবানবন্দি দিতে এসেছিলেন সোনাচূড়ার নিখোঁজ নারায়ণ দাসের ছেলে শঙ্কর দাস। জবানবন্দি দিয়ে বেরিয়ে শঙ্কর বলেন, “সে দিন ভূমি-কমিটির শান্তি-মিছিলে বাবাও ছিল, আমিও ছিলাম। আমি একটু পিছনে আর বাবা সামনের দিকে। বেলা ১১টা নাগাদ মিছিল তেখালিতে পৌঁছতেই আচমকা গুলি চলে। বাবার গুলি লাগে। আমরা ছড়িয়ে পড়েছিলাম। বাবাকে আর খুঁজে পাইনি।” গোকুলনগরের বৃদ্ধ সুনীল মাকুর বলেন, “কালো পোশাক পরা কিছু লোক তেখালির উঁচু একটা বাড়ির ছাদ থেকে সে দিন গুলি চালাচ্ছিল।” সেই বন্দুকবাজদের সঙ্গে স্থানীয় সিপিএম নেতা প্রতাপ সাহু ও শ্রীপতি জানাকেও তিনি দেখেছিলেন বলে দাবি সুনীলবাবুর।
তমলুকে জবানবন্দি দেওয়ার পরে নন্দীগ্রামে প্রত্যক্ষদর্শীরা
আর এক প্রত্যক্ষদর্শী গোকুলনগরেরই করপাড়ার কার্তিক প্রামাণিক বলেন, “১০ তারিখের দিন কয়েক আগেই সিপিএমের সশস্ত্রবাহিনী মহেশপুর বাজার পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিল। স্থানীয় এক স্কুলে আর পারুলবাড়ির এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে ওদের শিবির ছিল।” তিনি জানান, ১০ তারিখে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। শুনেছিলেন ভূমি-কমিটির মিছিল আসছে। তাঁর কথায়, “তেখালিতে মিছিল আসতেই গোলাগুলির আওয়াজ পাই। গুলি চলা বন্ধ হলে বাইরে গিয়ে দেখি দু’জন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমাদের মতো কয়েক জনকে কালো পোশাক পরা কয়েকটা লোক বলে, জল এনে রক্ত ধুইয়ে দিতে। তার পরেই ভ্যান-রিকশায় ওই দু’জনকে তুলে খেজুরির দিকে নিয়ে চলে যায় কালো পোশাকের লোকগুলো।”
সে দিন সেই ভ্যান-রিকশা চালিয়েছিলেন যিনি, গোকুলনগরের পঞ্চমদোলের সেই অশ্বিনী মান্নাও এ দিন জবানবন্দি দিতে এসেছিলেন তমলুকে। অশ্বিনীবাবু বলেন, “গোলাগুলি থামার পরে বন্দুকধারী কয়েক জন আমার বাড়ি আসে। আমি ভ্যান চালাই জেনেই এসেছিল। গুলি লাগা কয়েক জনকে ভ্যানে খেজুরি নিয়ে যেতে বলে ওরা। রাজি হচ্ছিলাম না বলে শাসায়। বাধ্য হয়েই যাই। রক্তাক্ত দু’জনকে ভ্যানে খেজুরি নিয়ে যাই। সেখান থেকে অন্য গাড়িতে আহতদের যে কোথায় নিয়ে গেল, বুঝতে পারিনি। আমি ফিরে আসি।” সিআইডি-কে জবানবন্দি দিয়ে বেরিয়ে কথা বলার সময়েও সে দিনের সেই বীভৎস স্মৃতি হাতড়ে অনবরত কাঁপছিলেন প্রৌঢ় অশ্বিনীবাবু।
এক সিআইডি অফিসারের বক্তব্য, নানা জনের জবানবন্দিতে উঠে আসা সূত্র ধরে নন্দীগ্রাম, খেজুরিতে গিয়েও লোকজনকে জিজ্ঞসাবাদ করা হবে। খেজুরির একটি স্কুলে হতাহতদের প্রাথমিক ভাবে রাখা হয়েছিল বলে জেনেছে সিআইডি। দু’এক দিনের মধ্যেই সেই স্কুল-পরিদর্শনে যাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ওই অফিসার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.