|
|
|
|
সিপিএমের ধাঁচেই সংগঠন চায় তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
যাদের বিরুদ্ধে ‘লড়াই’কে পুঁজি করেই ১৯৯৮-এ দলের জন্ম আর যাদের সরিয়েই ২০১১-য় রাজ্যে ক্ষমতায় আসাসেই সিপিএমকেই কি না এখন অনুসরণ করতে চাইছে তৃণমূল! বুথ থেকে সর্বভারতীয় স্তর পর্যন্ত সিপিএমের ধাঁচেই দলীয় সংগঠন সাজাতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
দলের জন্ম ও দীর্ঘ লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জননেত্রী’ হিসাবে উত্থানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়ের বক্তব্য, “জল পচে গেলে যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনই মানুষ সঙ্গে না থাকলে সরকারও থাকবে না। মানুষকে সঙ্গে রাখতে গেলে মজবুত সংগঠন জরুরি।”
নতুন এই সাংগঠনিক কাঠামোর রূপরেখা তুলে ধরে মুকুলবাবু বলেন, “পরিচিতিদের ধরে-করে প্রদেশ কমিটির সদস্য হওয়ার দিন গিয়েছে। তৃণমূলস্তর থেকে নির্দিষ্ট নীতি মেনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটির সদস্য মনোনয়ন হচ্ছে।” এর পরেই সিপিএমের উদাহরণ টেনে বলেন, “বুথ, ব্লক, জেলা, রাজ্য ও সর্বভারতীয় স্তরে সংগঠন পুনর্গঠন হবে। সিপিএমের জোনাল কমিটির মতো বিধানসভা কমিটি তৈরি হবে। কোনও এলাকা বড় হলে সেখানে দু’টি কমিটি করা হবে। বিশেষত, শহরে।” |
|
মেদিনীপুরে তৃণমূলের সম্মেলনস্থল। নিজস্ব চিত্র। |
সোমবার মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের মাঠে হয়ে গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাস্তরে ‘দলীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনাসভা’। যা তৃণমূল-শিবিরে একপ্রকার সম্মেলনেরই মর্যাদা পেয়েছে। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়েই মুকুলবাবু মজবুত সংগঠনের উপরেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। আগামী ২ নভেম্বর কলকাতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন। সেখানে গোটা রাজ্য থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন ১৯০০ জন। প্রতি ব্লক থেকে ২ জন ও পুরসভা-স্তর থেকে ২ জন করে প্রতিনিধি থাকবেন। যাঁরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কমিটিরও সদস্য হবেন। সেই মতো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯টি ব্লক ও ৮টি পুর-এলাকা থেকে ৭৪ জন প্রতিনিধি মনোনীত হবেন। প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সদস্য হয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা জেলার কোনও পদে থাকতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয় এ দিন। এই ব্লক ও পুর-স্তরের প্রতিনিধি ছাড়াও দলের সব বিধায়কও অবশ্য প্রদেশের সদস্য হবেন।
আপাতত অবশ্য সহমতের ভিত্তিতেই ব্লক ও পুর-স্তরের ২ জন করে নেতাকে প্রদেশ তৃণমূলের সদস্য বেছে নেওয়া হচ্ছে। প্রদেশ কমিটি গঠনের পর তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন বুথ, ব্লক বা জেলাস্তরে কী ভাবে নির্বাচন হবে। তার পর বুথ-ব্লক-জেলাস্তরেও শুরু হবে নির্বাচন-পর্ব। মুকুলবাবু বলেন, “এর ফলে নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আর প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না। কাজও ভাল হবে।” সেই সঙ্গেই তিনি পরিষ্কার করে দেন, যাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাঁকে সেটাই পালন করতে হবে। যিনি যত দক্ষ ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তিনিই সবচেয়ে গুরুত্ব পাবেন দলে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অন্য কোনও ধরনের অভিযোগ উঠলে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন তিনি। মেদিনীপুরে এ দিনের সভায় প্রায় ২৬০০ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। কাউকেই নির্দিষ্ট কার্ড ছাড়া সভাস্থলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে গড়বেতার মতো কোনও কোনও এলাকা থেকে কার্ড নিয়ে আসা ‘প্রতিনিধি’দের নিয়ে দলেই কিছুটা অসন্তোষ ছড়িয়েছে। সদ্য সিপিএম ছেড়ে আসা কেউ কেউ প্রতিনিধি হয়ে যাচ্ছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে।
জঙ্গলমহলের জেলায় দলের অভ্যন্তরীণ এই কর্মসূচির মঞ্চেও মাওবাদীদের এক হাত নিয়েছেন মুকুলবাবু। তাঁর কথায়, “সিপিএম ও পুলিশ বন্দুক নিয়ে আমাদের রুখতে পারেনি। হয়তো কিছু সমর্থকের প্রাণ গিয়েছে। এখন কয়েক জন যুবক যদি মনে করেন তৃণমূলকে শেষ করে দেবেন, তা হবে না। মানুষই রুখে দেবে।” |
|
|
|
|
|