বিভিন্ন মণ্ডপে চলছিল শেষ মুহূর্তের কাজ।
আলোর বড় বড় ‘ফনমাইকা’ বোর্ডগুলিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন আলোক-শিল্পীরা।
তার মধ্যেই, সোমবার পঞ্চমীর দিন গঙ্গাপাড়ের চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে রাস্তায় নেমে পড়লেন মানুষ। বেশ কিছু পুজোর উদ্বোধন হয়ে গেল এ দিন।
নামে ‘চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী’। পুজো ছড়িয়ে রয়েছে ভদ্রেশ্বর, মানকুণ্ডু এবং চুঁচুড়া শহরের একাংশেও। প্রতি বছরই কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে থেকে মানুষ আসেন পুজো দেখতে। কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকা চন্দননগরের বাসিন্দারাও ঘরে ফেরেন পুজোর দিনগুলিতে। ভিড় সামলাতে এ বারেও কোমর বেঁধেছে হুগলি জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলি। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন মহলে চলেছে বৈঠক। |
নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করতে এ বার চোখে পড়ার মতো পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। সোমবার চন্দননগরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানান, অফিসার এবং কর্মী মিলিয়ে ১৬৮০ জন পুলিশকর্মী রাস্তায় নামবেন। তার মধ্যে ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার থাকছেন ১৪ জন, ইনস্পেক্টর ২৮ জন। সাব-ইনস্পেক্টর এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর মিলিয়ে ৩৫০ জন থাকছেন। এ ছাড়াও, ৬০০ পুরুষ কনস্টেবল এবং ১০৮ জন মহিলা কনস্টেবল মোতায়েন করা হবে। থাকছে শ’তিনেক হোমগার্ড এবং এনভিএফ কর্মী। চারটি শহর মিলিয়ে ৩০টি ‘পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র’ খোলা হচ্ছে। ওই বুথ থেকেই দর্শনার্থীরা সহায়তা পাবেন। ২০টি জায়গায় ক্লোজ সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) বসানো হচ্ছে। এ ছাড়াও, ৫৫ জন পুলিশকর্মী মোটরবাইকে শহরের অলিগলিতে নজরদারি চালাবেন। মোট ৬টি ভিন্ন জায়গায় মেডিক্যাল টিম রাখা হচ্ছে।
দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য এ বারও যান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। পুজোর দিনগুলিতে বিকাল ৪টে থেকে পরের দিন ভোর ৬টা পর্যন্ত চন্দননগরের তালডাঙা মোড় থেকে ভদ্রেশ্বর চৌমাথা পর্যন্ত জিটি রোডে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। আজ, ষষ্ঠীর দিন থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। পাশাপাশি, শহরের কেন্দ্রস্থলে ঢোকার ৮টি জায়গায় ‘নো-এন্ট্রি’ থাকবে। বাইরে থেকে যাঁরা গাড়ি নিয়ে পুজো দেখতে আসবেন, তাঁদের গাড়ি রাখার জন্য ৬টি জায়গায় পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মানকুণ্ডু রেল স্টেশনের পশ্চিম দিক, ধীতারা নিবেদিতা ক্লাবের মাঠ, শ্বেতপুর মোড়, কেএমডিএ পার্ক, তালডাঙা এবং ডিভিসি খালের কাছে চাঁপদানি এলাকা। |
বৈদ্যবাটির বৈদ্যপাড়া সর্বজনীনের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা।
|
চন্দননগরের চার মন্দিরতলা জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির মণ্ডপ।
|
নিয়োগীবাগান নব বালক সঙ্ঘের মণ্ডপ।
|
|
চন্দননগরের নিয়োগীবাগান নববালক সংঘের প্রতিমা।
|
সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন তাপস ঘোষ ও প্রকাশ পাল। |
|
দর্শনার্থীদের জন্য পুরসভাগুলির তরফে বেশ কয়েকটি জায়গায় শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য জিটি রোড-সহ সমস্ত রাস্তা ঘাট মেরামতির কাজও প্রায় শেষের মুখে। পুজোর দিনগুলিতে পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে বিশেষ ট্রেন চালানো হবে।
এ বার চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর ও মানকুণ্ডু মিলিয়ে ১৪২টি বারোয়ারি পুজো হচ্ছে। এ ছাড়াও, বাড়ির পুজো এবং ছোট বারোয়ারি মিলিয়ে আরও প্রায় ৪০টি পুজো হচ্ছে। ‘কেন্দ্রীয় কমিটি’র আওতায় চন্দননগরে ১০৬টি পুজো, ভদ্রেশ্বরে ৩৬টি পুজো।
বিসর্জনের দিনেও অতিমাত্রায় সতর্ক থাকতে চাইছেন পুলিশকর্তারা। বহু পুজো কমিটি রাতভর শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। ‘কেন্দ্রীয় কমিটি’র সহ-সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এ বার ৬৪টি পুজো কমিটি দশমীর শোভাযাত্রায় যোগ দিচ্ছে। মোট ২৪৫টি ট্রাক থাকছে। সে দিন ২৪ ঘণ্টাই পানীয় জলের বন্দোবস্ত করা হবে পুরসভাগুলির তরফে। দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশের তরফে লঞ্চ ও স্পিড বোটের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। |