উলুবেড়িয়া রবীন্দ্রভবনে আজ, মঙ্গলবার কংগ্রেসের হাওড়া জেলা পঞ্চায়েত সম্মেলন। এই জেলায় কংগ্রেস যে ক্রমেই ‘শক্তিশালী’ হয়ে উঠছে, প্রদেশ নেতৃত্বকে সেই বার্তাই দেবেন জেলা নেতারা।
জোটসঙ্গী তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ কংগ্রেসকে তাদের প্রাপ্য ‘মর্যাদা’ দিচ্ছেন না বলে ওই কংগ্রেস নেতাদের দাবি। বহু জায়গায় ‘তৃণমূল-মদতপুষ্ট’ দূষ্কৃতীদের হাতে তাঁদের দলের কর্মীরা মারধর খাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস নেতারা।
নিরাপত্তার দাবিতে পুলিশের সাহায্য চেয়ে বিভিন্ন থানা, জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)-এর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যে জোটসঙ্গীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘটনাটি জেলার রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। জেলা কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “প্রদেশ নেতৃত্বের সামনে আমাদের দলের কর্মীদের উপরে অত্যাচারের বিষয়গুলি সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।”
তৃণমূলের হাতে মার মার খাওয়ার অভিযোগ তুললেও জেলায় কংগ্রেসের ‘পুনর্জাগরণ’ ঘটছে বলে দলীয় নেতাদের একাংশ দাবি করেছেন।
তাঁরা জানান, বিধানসভা নির্বাচনের পরে উদয়নারায়ণপুরে কংগ্রেস কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। পাঁচারুলে দলের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী নেতা তথা পঞ্চায়েতের প্রধান কানাইলাল মাইতি তৃণমূল-মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের হাতে নিগৃহীত হন বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। কংগ্রেসের বক্তব্য, কানাইবাবুর উপরে নিগ্রহ তৃণমূলের অনেক স্থানীয় নেতা-কর্মী ভাল ভাবে নেননি। তৃণমূলের ওই সব নেতা-কর্মীদের একাংশ কংগ্রেসে যোগ দিতে চেয়েছেন বলে জেলা কংগ্রেসের দাবি। কংগ্রেস নেতাদের দাবি, শুধু উদয়নারায়ণপুরে নয়, জেলা জুড়ে চলছে তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে চলে আসার ঘটনা। নিজের দলের নেতাদের কাছে ‘বঞ্চিত’ এবং ‘অত্যাচারিত’ হয়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কর্মীদের একাংশ তাঁদের দলে আসতে চাইছেন বলে কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন।
দলীয় বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, “আমি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে বাঁকুড়ার অবজার্ভার-এর দায়িত্বে রয়েছি। ওই জেলাতেও দেখেছি কংগ্রেসের অনেক পুরনো নেতা-কর্মী ফিরে এসেছেন। অনেকে আসতে চাইছেন। হাওড়ায় ক্ষেত্রেও একটা কথা বলতে পারি, দোকান খুলে রাখতে হবে। এতেই কাজ হবে।”
এ দিন সম্মেলনে যোগ দিতে আসার কথা প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা প্রমুখের। থাকার কথা রয়েছে জেলার একমাত্র দলীয় বিধায়ক অসিত মিত্রেরও। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসবেন ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরের প্রতিনিধিরা। বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই প্রথম এত বড় মাপের সম্মেলনকে ঘিরে জেলায় কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
সম্মেলনে অবশ্য তৃণমূলের সঙ্গে জোট শক্তিশালী করার কথাই বলা হবে বলে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন।
তবে তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূলের সঙ্গে জোট শক্তিশালী করতে হলে কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। কারণ হিসাবে তাঁরা জানান, মূলত বামপন্থী দলগুলি থেকে যে সব কর্মী-সমর্থক বেরিয়ে আসতে চাইছেন, তাঁরা কোনও কারণে তৃণমূলে যেতে না-চাইলে কংগ্রেসে চলে আসবেন। কিন্তু কংগ্রেস শক্তিশালী না-হলে তাঁরা তৃতীয় কোনও দলে ভিড় করবেন, যা কাম্য নয়। এর ফলে জোট দুর্বল হয়ে পড়বে।
একই সঙ্গে তৃণমূলকেও বলা হবে যাতে কংগ্রেসকে ভাঙার খেলায় যাতে তারা না-নামে। এ ক্ষেত্রেও একই যুক্তি দেখিয়েছেন জেলা কংগ্রেস নেতারা। তা-হল কংগ্রেস দুর্বল হলে জোট শক্তিশালী হবে না। আর জোট শক্তিশালী না-হলে রাজ্যেরই ক্ষতি হবে। এই সব বিষয় সবিস্তার তুলে ধরা হবে সম্মেলনে। |