কিশোর ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে বাবা গ্রেফতার হয়েছেন। মা প্রয়াত হয়েছেন আগেই। বিমাতা আছেন। কিন্তু কোনও পরিজন হাজির না-হওয়ায় সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাগ্নিক রায়চৌধুরীর মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হল না। ফলে ঠিক কী ভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, এ দিনও সেই রহস্যের কিনারা হয়নি।
তদন্তকারীরা সাগ্নিকদের বাড়ি থেকে তার নাম লেখা একটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করেছেন। ওই চিরকুটের হাতের লেখা সত্যিই সাগ্নিকের কি না, তা যাচাই করতে বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মহেশতলার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা অলোক রায়চৌধুরী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলে সাগ্নিককে শনিবার রাতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখা যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু পড়শিদের অভিযোগ, সাগ্নিক তার স্কুলে মাধ্যমিকের প্রি-টেস্টে খারাপ ফল করায় অলোকবাবু তাকে বেদম মারধর করেছিলেন। তার ফলেই মারা গিয়েছে সাগ্নিক। পড়শিদের অভিযোগের ভিত্তিতে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলা দায়ের করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় অলোকবাবুকে। সোমবার তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। তাঁকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
কিন্তু ময়না-তদন্ত হল না কেন? নিয়ম অনুযায়ী ময়না-তদন্তের আগে মৃতের কোনও আত্মীয়কে দেহটি শনাক্ত করতে হয়। অলোকবাবু হাজতে থাকায় পুলিশ তাঁর এক আত্মীয়কে সাগ্নিকের দেহ শনাক্ত করার জন্য অনুরোধ করেছিল। সোমবার পুলিশ জানায়, অলোকবাবুর জামিনের জন্য আদালতে ব্যস্ত থাকায় ওই আত্মীয় এ দিন মৃতদেহ শনাক্ত করতে আসতে পারেননি। তাই বিদ্যাসাগর হাসপাতালের মর্গে দেহটির ময়না-তদন্ত করা যায়নি। তবে দেহটির সুরতহাল হয়েছে। পর্ণশ্রী থানার পুলিশ সাগ্নিকদের ওই আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এর মধ্যে একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে অলোকবাবুর বিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অলোকবাবুর প্রথম স্ত্রীর ছেলে সাগ্নিক। ছ’বছর আগে তিনি মারা যান। অলোকবাবু ফের বিয়ে করেন। এ দিন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী করুণাদেবী মহেশতলা থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান, তাঁর সঙ্গে অলোকবাবুর বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়নি। তা সত্ত্বেও বছর
দুয়েক আগে অলোকবাবু তাঁকে ছেড়ে মহেশতলায় এসে অন্য এক মহিলাকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
রবিবার জেরার মুখে অলোকবাবু পুলিশকে জানিয়েছিলেন, শনিবার রাতে তিনি তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী সুস্মিতাদেবীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখেন, সাগ্নিক সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে। সোমবার দ্বিতীয়া স্ত্রী করুণাদেবীর অভিযোগের পরে ওই ব্যক্তি আদৌ তৃতীয় বিয়ে করেছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেল। |