নভেম্বর থেকেই ইস্টার্ন কোলফিল্ডসের (ইসিএল) কয়লা কিনতে ৪০ শতাংশ বাড়তি দাম দিতে হবে সিইএসসি-কে। ফলে সিইএসসি এলাকায় আরও এক দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রবল সম্ভাবনা। সংস্থার তরফে ইঙ্গিত, তারা জ্বালানি সারচার্জ বাড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার ঘাড়ে ইউনিট প্রতি ১৬ পয়সা বাড়তি দায় চাপার সম্ভাবনা।
কিন্তু কেন এই বাড়তি দাম?
সিইএসসি-র বক্তব্য, গত এপ্রিল মাস থেকে চালু হওয়া ইসিএল-এর নতুন নীতির জন্যই এই বাড়তি দাম। বছরের গোড়ায় ইসিএল জানিয়ে দেয়, সিইএসসি-র সঙ্গে ‘ফুয়েল সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট’ বা এফএসএ অনুসারে ২০১১-১২ আর্থিক বছরে তারা ৯ লক্ষ টন কয়লা সরবরাহ করবে। তার চেয়ে বেশি কয়লা কিনতে হলে ওই একই কয়লার জন্য ৪০% বাড়তি দাম বা ‘প্রিমিয়াম’ দিতে হবে সিইএসসি-কে। ওই ৯ লক্ষ টনের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টন অক্টোবর মাসের মধ্যেই নিয়ে নিয়েছে সিইএসসি। কাজেই চলতি আর্থিক বছরের বাকি পাঁচ মাসে তাদের আর যে পরিমাণ কয়লা কিনতে হবে ইসিএল-এর কাছ থেকে, তার জন্যই ৪০ শতাংশ বাড়তি দাম দিতে হবে। সিইএসসি-র হিসেব অনুযায়ী, এই আর্থিক বছরে আরও ৪ লক্ষ টন কয়লা কেনা হবে ইসিএল-এর কাছ থেকে। তার জন্য বাড়তি দাম পড়বে কমবেশি ৮০ কোটি টাকা। এই বাড়তি দামের দায় চোকাতেই গ্রাহকদের বিলে ইউনিট-প্রতি অন্তত ১৬ পয়সা হারে মাসুল বাড়বে। সংস্থা সূত্রে বলা হচ্ছে, এই বাড়তি সারচার্জ আপাতত স্থায়ী হবে চলতি আর্থিক বছরের বাকি পাঁচ মাস। তবে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরেও যদি ইসিএল একই শর্তে কয়লা বিক্রি করে, তা হলে গ্রাহকদের ঘাড় থেকে বাড়তি দামের বোঝা কিন্তু নামবে না। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ইসিএল ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেড কয়লার দাম দ্বিগুণ করার পরে সিইএসসি ইউনিট প্রতি ৪৬ পয়সা সারচার্জ বাড়িয়েছিল।
বস্তুত, ফেব্রুয়ারিতে কয়লার দাম বৃদ্ধি এবং তার পরে এ বার ৯ লক্ষ টনের বেশি কয়লা কিনলে ৪০ শতাংশ বাড়তি দামের শর্তের ধাক্কায় ইসিএল-এর কাছ থেকে কয়লা কেনা কমিয়ে দিয়েছে সিইএসসি। ২০১০-২০১১ আর্থিক বছরে তারা ইসিএল-এর থেকে বার্ষিক ১৬ লক্ষ টন কয়লা নিয়েছিল। এ বারে ১৩ লক্ষ টনের বেশি কয়লা কিনবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সিইএসসি-র চাহিদা অনুযায়ী তাদের বছরে আগের মতো ১৬ লক্ষ টন কয়লা সরবরাহ করছে না কেন ইসিএল? বিদ্যুৎ কর্তাদের অভিযোগ, ইসিএল তাতে রাজি হচ্ছে না। তাদের নীতি হল, তারা খানিকটা কয়লা তুলনায় কম দরে দেবে, বাকিটা প্রিমিয়াম চাপিয়ে। এ সম্পর্কে এক বিদ্যুৎকর্তার অভিযোগ, “আমাদের তো কয়লা না কিনে উপায় নেই। কোল ইন্ডিয়া যা শর্ত দেবে, সেটাই মেনে নিতে হয়।”
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বারবার ইসিএল-এর দরবৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি খোদ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডেকে অনুরোধ করেছেন, কয়লার দর নির্ধারণের জন্য একটি নিরপেক্ষ সংস্থা তৈরি করা হোক। ঠিক যেমন বিদ্যুতের দাম স্থির করে দেয় নিরপেক্ষ বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। রাজ্যের এই অসন্তোষ প্রকাশে আগে কোনও ফল হয়নি। এ বারেও যে হবে, এমন ইঙ্গিত মেলেনি।
সিইএসসি-র বছরে কয়লার প্রয়োজন ৬০ লক্ষ টন। তার মধ্যে তাদের নিজস্ব কয়লাখনি থেকে আসে অর্ধেক ৩০ লক্ষ টন। এর বাইরে সর্বোচ্চ সরবরাহ আসে ইসিএল-এর কাছ থেকে প্রিমিয়াম ছাড়া ৯ লক্ষ টন, প্রিমিয়ামে আরও ৪ লক্ষ টন। বিসিসিএল দেয় সাড়ে ৬ লক্ষ টন, মহানদী কোলফিল্ডস ২.৫ লক্ষ টন, বিদেশ থেকে আমদানি সাড়ে ৩ লক্ষ টন। বাকি কয়লা আসে ইসিএল ও বিসিসিএল-এর নিচু গ্রেডের কয়লার খনিগুলি থেকে। |