‘জরুরি বার্তা’য় বিভ্রান্ত অফিসারেরা
পুলিশ কমিশনারেরই ই-মেল হ্যাকারের কব্জায়
তিনি কলকাতার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার শেষ কথা। মহানগরের পুলিশবাহিনীর সর্বময় কর্তা।
তিনিও নিস্তার পেলেন না হ্যাকারদের খপ্পর থেকে!
গত বৃহস্পতিবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ওয়েবসাইটে বিদেশি হ্যাকারেরা হানা দিয়েছিল। তার জের না-মিটতেই, গত রবিবার রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি)-এর ‘হোম পেজে’ পাক-হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ ধরা পড়ে। এখন জানা যাচ্ছে, এই তিন দিনের মধ্যে স্বয়ং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের ব্যক্তিগত ই-মেলও হ্যাক করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাঁর মেল আইডি থেকে শুক্রবার রাতে রাজ্যের একাধিক আইপিএস এবং বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বার্তাও পাঠানো হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
সেই বার্তা পেয়ে পর দিন সকালে কমিশনারের এক সহকর্মী তাঁকে ফোন করে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন। সিপি তখনই প্রথম ব্যাপারটা জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা পুলিশের একাধিক শাখা তদন্তে নামে। পুলিশ অফিসারদের মধ্যে কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজে যাঁরা দক্ষ, তাঁদেরও আলাদা ভাবে বিষয়টি দেখতে বলেছেন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা।
সিপি’র ই-মেল কব্জা করে হ্যাকারেরা কী করেছিল?
লালবাজার সূত্রের খবর: শুক্রবার রাত পৌনে তিনটে নাগাদ কমিশনারের ব্যক্তিগত মেল আইডি থেকে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বেশ ক’জন শীর্ষ কর্তা একটি বার্তা পান। কার্যত নির্দেশ আকারে দেওয়া বার্তাটির বয়ান অনেকটা ছিল এই রকম: ‘এটি জরুরি। কারণ, আপনাকেই (প্রাপক) এই মেল সরাসরি পাঠানো হয়েছে।’ তাতে নির্দেশ কী ছিল?
পুলিশের এক সূত্র জানাচ্ছেন, মেলের ওই ‘টেক্সট’ অংশটি পড়া গেলেও ‘নির্দেশ’টি জানা যায়নি। কারণ, তা পড়তে যে ‘লিঙ্ক’ ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল, তা খোলা যায়নি। বিভ্রান্ত হয়ে পর দিন, অর্থাৎ শনিবার সকালে একাধিক আইপিএস অফিসার সিপি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখনই ধরা পড়ে, খোদ পুলিশ কমিশনারেরই ই-মেলে হানা দিয়েছে হ্যাকারেরা!
এর পরে পচনন্দা নিজে সকলকে মেল করে জানান, তিনি শুক্রবার রাতে তাঁদের কোনও মেল করেননি। ফলে নির্দেশ পাঠানোরও প্রশ্ন ওঠে না। এ দিকে শনিবার দুপুর নাগাদ কমিশনারের ‘হ্যাক করা’ ব্যক্তিগত মেল আইডি থেকেই ফের বার্তা যায় ওই পুলিশ অফিসারদের কাছে, সেই সঙ্গে বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছেও। ওই তালিকায় ভারতীয় সেনার একাধিক কর্তা এবং কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েরও কয়েক জন রয়েছেন। ঘটনাটি তদন্তকারীদের আরও নাড়িয়ে দেয়। মেল প্রাপকদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করেন। যদিও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তাই সোমবার মুখ খুলতে চাননি।
সিআইডি-ও তাদের সাইটে হ্যাকার-হানা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তাতে এখন পর্যন্ত কী জানা গেল? ভবানী ভবন সূত্রের খবর: ১২ অক্টোবর থেকে সিআইডি-র সাইট হ্যাক করার চেষ্টা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েছে। অবশেষে শনিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ হ্যাকারেরা সফল হয়। সিআইডি-র সাইটে ঢুকে ‘হোম পেজ’-এ নিজেদের বক্তব্য সাঁটিয়ে দেয় ‘মুসলিম লিবারেশন আর্মি’ নামে এক সংগঠন, যারা ২৭ সেপ্টেম্বর পাটিয়ালা পুলিশের সাইটও হ্যাক করেছিল। তারা সিআইডি’র হোম পেজের তথ্য উড়িয়ে সেখানে কাশ্মীরে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের দু’টো ছবি দিয়ে সরকার-বিরোধী স্লোগান লিখে দেয়। যে কম্পিউটার সংযোগ মারফত সাইটটি হ্যাক করা হয়েছিল, তার ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) অ্যাড্রেস’ যাচাই করে সিআইডি জেনেছে, করাচিতে বসে এই কাণ্ড করা হয়েছে। সিআইডি-র ওয়েবসাইটটি বানিয়েছিল শিলিগুড়ির এক সংস্থা। তার সার্ভার আমেরিকায়।
এ দিকে দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সাইটে একের পর এক হ্যাকার-হানার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব রাজ্যের পুলিশকে ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর: সিআইডি-র ওয়েবসাইট দেখভালের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাত থেকে নিয়ে ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার (এনআইসি)-কে দেওয়ার কথাবার্তা বেশ ক’দিন ধরেই চলছিল। এ নিয়ে সিআইডি-কর্তারা একাধিক বার এনআইসি-র সঙ্গে বৈঠকও করেন।
আর তার মধ্যেই এই ঘটনা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.