শিশু ওয়ার্ডে বরাদ্দ মাত্র ১৩টা শয্যা। এক -একটি শয্যায় এ দিক -ও দিক করে শুয়ে রয়েছে দু’জন। কিছু ক্ষেত্রে তিন জনও। বাকিদের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। সব মিলিয়ে ১৩ শয্যার ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে ৪৩টি শিশুর। কান্দি মহকুমা হাসপাতালে বরাদ্দ শয্যা সংখ্যার তিনগুণেরও বেশি শিশুর চিকিৎসা চলছে এভাবেই।
ওয়ার্ডে অবাধ যাতায়াত শিশুর বাড়ির লোকেদের। শিশু বিভাগের ভিতরে বসেই দুপুরের খাওয়া সারছেন কেউ। কেউ বা আবার গুটখা খেয়ে বিনা সঙ্কোচেই নোংরা করছেন ওয়ার্ড। হাসপাতালের ঠান্ডা মেঝেতে ছেলেকে নিয়ে বসে ছিলেন নগরের বাসিন্দা ফরিদা বিবি। তিনি বললেন, “আমার ছেলের পেটের রোগ। এখানে এসে দেখি সব বিছানাই ভর্তি। নার্স দিদিরা বারান্দার এই মেঝেতেই থাকতে বলল। চাদর -কম্বল চাইতে গিয়েছিলাম। বলল, সে সব বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হবে। ছেলেকে কোনও রকমে আগলে রেখেছি। এভাবেই চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। আর তো কোনও উপায় নেই।” একই অভিযোগ করলেন ওয়ার্ডের বাকি শিশুদের বাড়ির লোকেরাও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আড়াইশো শয্যার এই হাসপাতালে মহকুমার খড়গ্রাম, বড়ঞা, কান্দি, ভরতপুর ছাড়াও পুর এলাকা এবং পড়শি জেলা বীরভূম থেকেও বহু মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন। অথচ, শিশু ওয়ার্ড বলতে ১৩ শয্যার একটা ঘর। সেখানে ঠাঁই না মিললে উপায় একটাই। বাইরের বারান্দার মেঝে।
চাইলেও রোগীদের চাদর -কম্বল দেওয়া হয় না কেন? এক কর্তব্যরত নার্সের সাফাই, “চাইলে কম্বল দেওয়া হয় না এমন নয়। তবে অনেকেই ব্যবহারের পরে সেই কম্বল আর ফেরত দেন না। সঙ্গে করে নিয়ে বাড়ি নিয়ে যান। এর ফলে বাধ্য হয়েই চাদক -কম্বল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শিশু ওয়ার্ডের এ হেন অবস্থা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কান্দি পুরসভার কাউন্সিলর কংগ্রেসের রাজকুমার দাস। তিনি বলেন, “শনিবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম কী ভাবে চিকিৎসা হচ্ছে। শিশুরা সব মেঝেতে শুয়ে রয়েছে। এলাকার বিধায়ককে এই ব্যাপারে নজর দেওয়ার আর্জি জানাব।” হাসপাতাল সুপার মৃগাঙ্ক মৌলি কর বলেন, “হাসপাতালে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। সে জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে। তবে ৫০টি শয্যাবিশিষ্ট একটি শিশু ওয়ার্ড তৈরি হচ্ছে। মাস ছয়েকে তা চালু হয়ে গেলে সমস্যা মিটবে বলে আশা করছি।”
|