অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, রোগী -সারমেয়র সহাবস্থান। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এই দৃশ্য চোখ -সওয়া হয়ে গিয়েছে। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দূর করতে তৎপর হয়েছে রাজ্যের নতুন সরকার। কাল, ১ নভেম্বর থেকে টানা ১৫ দিন জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে হতে চলেছে বিশেষ সাফাই অভিযান। কিন্তু অর্থ -সঙ্কটে শুরুর আগেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে এই উদ্যোগ।
সাফাই অভিযান সংক্রান্ত নির্দেশ ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে। কিন্তু এর জন্য বাড়তি কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। নির্দেশে বলা হয়েছে, রোগী কল্যাণ সমিতি বা অন্য কোনও তহবিলের টাকায় এই কাজ করতে হবে। আর এতেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। কারণ, অধিকাংশ রোগী কল্যাণ সমিতির ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ দশা। পরিস্থিতির কথা মানছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্রও। তবে তিনি বলেন, “এর মধ্যে থেকেই সাফাই অভিযান চলবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির হাতে কিছু অর্থ রয়েছে। অন্য তহবিলও আছে। আপাতত, সেই অর্থেই কাজ হবে।”
|
প্রবেশপথেই আবর্জনা। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ছবি তুলেছেন রামপ্রসাদ সাউ। |
শুধু সাফাই নয়, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বেশ কিছু হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নতুন রং করা, পর্যাপ্ত পানীয় জলের বন্দোবস্ত, রোগীর পরিজনেদের বসার ব্যবস্থা -সহ অন্য কাজও চলবে। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘সিটিজেন সেন্ট্রিক ফোর্টনাইট’। ক’দিন আগেই স্বাস্থ্যভবন থেকে এই সংক্রান্ত নির্দেশ এসে পৌঁছয় স্বাস্থ্য দফতরে। পরে স্বাস্থ্য দফতর থেকে তা বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ৮২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ হাসপাতালের সংখ্যা ২৯টি। মহকুমা হাসপাতাল ৩টি, আর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল একটি। সর্বত্রই এই কর্মসূচি পালিত হবে। তবে অর্থ -সঙ্কট ভাবাচ্ছে সকলকেই। খড়্গপুর হাসপাতালে সুপার দেবাশিস পাল বলেন, “রোগী কল্যাণ সমিতির হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।” কেশপুরের বিএমওএইচ জয়দেব মণ্ডলের মতে, “যে অর্থ রয়েছে তাই দিয়েই এই সময়ের মধ্যে কিছু কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
‘পিছিয়ে পড়া’ পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়েই বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এর মূলে রয়েছে পরিকাঠামোগত সমস্যা। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন পরিষেবা পেতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরই ভরসা করেন। কিন্তু এই কেন্দ্রগুলি নানা সমস্যায় জর্জরিত। পরিস্থিতি পাল্টাতে নতুন সরকার উদ্যোগী হয়েছে। নানা প্রকল্পের কাজও শুরু হচ্ছে। খড়্গপুর হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর পরিজনদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই বলে অভিযোগ। এই কর্মসূচি চলাকালীনই এখানে বসার ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতাল সুপার বলেন, “এই ১৫ দিনে কয়েকটি বেঞ্চ কেনা হবে।” হাসপাতালে নতুন রং -ও করা হবে। পূর্ত দফতরের সহযোগিতায় হবে এই কাজ। তাই কিছুটা সময় লাগতে পারে। |