বর্ধিত শিশু বিভাগ খোলার জায়গা ৯ বছরেও পাননি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২টি শিশুর মৃত্যু নিয়ে হইচইয়ের পরে ফের নড়েচড়ে বসেছেন তাঁরা। জানিয়েছেন, শীঘ্রই হাসপাতালে তৈরি হবে বর্ধিত শিশু বিভাগ। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেছেন, “৩০ নভেম্বরের মধ্যে খালি হয়ে যাওয়া আইসিসিইউ ভবনে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পূর্ত দফতরকে। তার পরেই সেখানে অসুস্থ শিশুদের ভর্তি করানো সম্ভব হবে।”
শনিবারই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সরিৎকুমার চৌধুরী বলেন, “আমাদের হাসপাতালে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট বা এসএনসিইউ নেই। যদি ওই ব্যবস্থা থাকত তাহলে আমাদের চিকিৎসক, নার্সরা ওই ১২টি শিশুর জীবন বাঁচাতে আরও তৎপরতা দেখাতে পারতেন।” কিন্তু এখনই তা গড়ে তোলা যাবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি এ দিন।
২০০২ সালেও পুজোর মুখে হাসপাতালের শিশু বিভাগে দু’দিনে দশটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। প্রথম দিনটি ছিল শনিবার। সে দিন তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়। পরের দিন মৃত্যু হয় আরও সাত শিশুর। তখনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করেননি। হাসপাতালের তৎকালীন সুপার পাঁচুগোপাল সিংহ রায় সে বার বলেছিলেন, “এই শিশুদের মৃত্যুর পিছনে আমাদের গাফিলতি নেই।” তাঁর দাবি ছিল, দশটি শিশু হাসপাতালে এসেছিল খুবই সঙ্কটজনক অবস্থায়। আর একেবারে শেষ মুহূর্তে কয়েকটি শিশুকে আনা হয়েছিল শহরের নার্সিংহোম থেকে। বাকিদের আনা হয়েছিল কালনা, কাটোয়া ও হুগলির আরামবাগের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে। তাঁর দাবি ছিল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাই প্রতিটি শিশুর চিকিৎসা করেছিলেন। শিশু বিভাগে তখন ভর্তি ছিল ১৩২টি শিশু। |
ন’বছর পরে ফের একই ঘটনা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় ১২টি শিশুর মৃত্যুর পরে ফের একই ভাবে নিজেদের দায় অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বারও ওই সময়ে ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল প্রায় ১৫০-রও বেশি শিশু। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বাস্থ্য কমিশনার দিলীপ ঘোষ দু’জনেই অবশ্য জানিয়েছেন, এই ঘটনা মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, কেন গত ন’বছরেও হাসপাতালে গড়ে উঠল না এসএনসিইউ-সহ বর্ধিত শিশু ওয়ার্ডটি। অধ্যক্ষ বলেছেন, “আমাদের হাসপাতালে যথেষ্ট জায়গা নেই। তাই চেষ্টা করেও আমরা ওই বর্ধিত শিশু ওয়ার্ড করতে পারিনি। এখন আমাদের আইসিসিইউ উঠে চলে গিয়েছে অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। তাই ওই ভবনে আমরা বর্ধিত শিশু ও প্রসূতি বিভাগ খুলব। সেখানে অন্তত ১৯০টি শয্যা থাকবে অসুস্থ শিশুদের ভর্তির জন্য।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এই হাসপাতালে প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ হাজার প্রসব হয়। তার মধ্যে শতকরা তিন থেকে চার ভাগ শিশুর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর হার ‘স্বাভাবিক’।
তবে ওই ভবনে শিশুদের জন্য এসএনসিইউ ইউনিটটি স্থাপন করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। এখনও এই বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ ৬০ শয্যার ওই এসএনসিইউতে শয্যা পিছু এক জন করে নার্স দরকার। এত নার্স কোথা থেকে মিলবে? হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেছেন, “ওই ইউনিট চালাতে গেলে অন্তত ৭০ জন নার্স দরকার। দরকার মায়েদের থাকার জায়গাও। অন্যথায় ইউনিট চালানো যাবে না।” তবে সরিৎবাবুর দাবি, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের জানিয়ে গিয়েছেন, নার্সের অভাব হবে না।
শয্যার সঙ্গেই চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা একই অনুপাতে না বাড়লে আসল সমস্যা মিটবে কি, প্রশ্ন থেকেই গেল। |