কয়েক মাসে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার প্রতারণা চক্রে ধৃত তিন যুবককে জেরা করে আরও ‘বিস্ফোরক’ তথ্য ও পরিসংখ্যান সামনে এসেছে বলে দাবি করল পুলিশ। তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসারের দাবি, ওই মামলায় শিলিগুড়ি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের খোঁজ চলছে। শনিবার গভীর রাতে পুলিশ ওই চক্রে থাকার অভিযোগে জীবন বিমার কর্মী রাজীব ভদ্র, বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মী রণবীর দাস এবং অন্য এক যুবক দেবব্রত পালকে গ্রেফতার করে। রবিবার তাঁদের শিলিগুড়ির অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক বিভূতি খেসাংয়ের এজলাসে হাজির করা হয়। ধৃতদের জামিনের দাবিতে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী সুনীল সরকার, পার্থ চৌধুরী এবং শৌভিক সেনগুপ্ত। বিচারক ধৃত ২ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২১ অক্টোবর পুলিশ মুম্বই থেকে ওই অর্থলগ্নি সংস্থার অন্যতম ম্যানেজিং ডিরেক্টর রামশাজীবন সাহেবরাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। ধৃত ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে জেরা করেই পুলিশ রাজীব ভদ্র, রণবীর দাস এবং দেবব্রত পালের নাম জানতে পারে। ওই তিনজনই-সহ শিলিগুড়িতে বেশ কিছু এজেন্ট তঁদের হয়ে কাজ করতেন বলে ধৃত ম্যানেজিং ডিরেক্টর পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। তিনি জানান, ভাল ব্যবসা দিতে পারায় ৭০ জনের বেশি এজেন্টকে গাড়ি, এবং নগদ টাকা দেওয়া হয়। পুলিশ ধৃতদের জেরা করে কারা গাড়ি অথবা নগদ টাকা পেয়েছে তার তালিকা তৈরি করে। রণবীর দাসের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়ার ২৩ লক্ষ টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়িটি যে ওই অর্থলগ্নি সংস্থার দেওয়া তাও স্পষ্ট হয়। রণবীর ৩ লক্ষ টাকা দামের একটি বাইকও কেনে বলে জানা যায়। পুলিশের দাবি, রাজীব স্বীকার করেন, লাভের আশায় গাড়ি এবং অন্যান্য পুরস্কার বাবদ পাওয়া প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা তিনি পুনরায় ওই অর্থলগ্নি সংস্থায় বিনিয়োগ করেন। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “গাড়ির মালিকদের তালিকা তৈরি হয়েছে। সেগুলি প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি নিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হবে।” এদিন আদালতে রাজীবের আইনজীবী সুনীল সরকার শিলিগুড়ি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর অভিযোগ, ওই শিক্ষক-সহ ৮ জন রাজীবের বিরুদ্ধে ১৫ জুন শিলিগুড়ি আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আবার রাজীবের সঙ্গেই গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষক শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে অর্থলগ্নিকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। আদালতে সুনীলবাবু বলেন, “রাজীব প্রথম থেকেই পুলিশকে সহযোগিতা করছে। মূল অপরাধীদের ধরতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মুম্বইয়ে যান। ওই শিক্ষক পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও প্রতারণার ঘটনায় তাঁর ভুমিকা স্পষ্ট হোক। তিনি কেবল আয়ই করেছেন বলে আমার সন্দেহ।” আইনজীবী পার্থ চৌধুরী বলেন, “রণবীর কাউকে প্রতারণা করেনি। পুলিশের উচিত রণবীরকে মামলায় সাক্ষী হিসাবে পেশ করা।” এই প্রতারণার ঘটনায় শিলিগুড়ি থানায় আরও তিনটি মামলা দায়ের করেছেন অন্য চার ব্যক্তি। তাঁদের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, “বহু লোককে প্রতারণা করা হয়েছে। পুলিশ সমস্ত অভিযুক্তকে ধরে বিচারকের সামনে হাজির করুক, আদালতে সেই দাবি জানাব।” |