রাজ্যের নীতিকে সমর্থন
মাওবাদীরা শর্ত মানলে তবেই কথা, পরামর্শ কেন্দ্রের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মাওবাদীরা লিখিত বক্তব্য দাবি করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। কেন্দ্রের বক্তব্য, আলোচনায় বসতে হলে রাজ্য সরকারের শর্তগুলিও মেনে চলতে হবে মাওবাদীদের। তাদের হিংসা ছাড়তে হবে এবং উন্নয়নে বাধা দেওয়াও চলবে না।
গত কাল ও আজ দিল্লিতে রাজ্যপাল সম্মেলনে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল মাওবাদী সমস্যা। পশ্চিমবঙ্গ-সহ মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যগুলিতে যৌথ অভিযানের সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন জানান, আগামিকাল তিনি চিদম্বরমের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসছেন। দিল্লিতে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠকে বসেছিলেন। রাজ্যপালের মাধ্যমে কেন্দ্র মমতাকে এই বার্তাই দিতে চাইছে, মাওবাদীদের মোকাবিলায় এক দিকে অভিযান, অন্য দিকে আলোচনা ও উন্নয়নের যে
দ্বিমুখী রণকৌশল রাজ্য সরকার নিয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সায় রয়েছে। আজ রাজ্যপাল সম্মেলনের শেষে প্রধানমন্ত্রীও জানিয়েছেন, “মাওবাদী দমনে সাফল্যের মূল রসায়নই হল কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়। সেই সমন্বয়ের মাধ্যমে তৈরি রণকৌশলের জোড়া ইঞ্জিন হল পুলিশি অভিযান ও উন্নয়ন।”
কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, মাওবাদীরা আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিচ্ছে মানেই তারা সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে সংসদীয় ব্যবস্থার প্রতি আস্থা জানাচ্ছে, এমনটা নয়। আলোচনা তাদের কৌশলও হতে পারে। পাশাপাশি মাওবাদীদের কোন গোষ্ঠী আলোচনায় বসতে চাইছে, কোন গোষ্ঠী আবার হিংসার পথে থাকতে চাইছে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, মাওবাদী নেতা আকাশ যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে তাদের পলিটব্যুরোর অনুমোদন রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত। মাওবাদীদের মধ্যে যে বিভিন্ন গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গিয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রীরও অজানা নয়। মধ্যস্থদের কাছেও তিনি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মাওবাদীদের এই শর্ত-পাল্টা শর্ত আরোপে রাজ্য সরকারও বিরক্ত। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু আজ বলেন, “এত অজুহাত, এত টালবাহানা কীসের? সরকারের শর্ত মেনে আলোচনায় রাজি থাকলে মাওবাদীরা মহাকরণে চলে আসুক। সরকার আগেই জানিয়েছে, তাদের সেফ প্যাসেজ দেওয়া হবে। আলোচনায় বসতে সরকারের কোনও আপত্তি নেই, আগেও ছিল না।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাফ কথা, মাওবাদীরা যেমন রাজ্য সরকারের উপর যৌথ অভিযান বন্ধ রাখার মতো শর্ত চাপানোর চেষ্টা করছে, তেমন তাদেরও রাজ্য সরকারের দেওয়া শর্তগুলি মানতে হবে। জঙ্গলমহলের উন্নয়ন বা মাওবাদীদের মূল স্রোতে ফেরানোর যে উদ্যোগ মমতা নিয়েছেন, তাতে বাধা দেওয়া চলবে না। তাদের দাবি মেনে কেন্দ্রীয় বাহিনী সরানোও সম্ভব নয়। কারণ তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িয়ে। আবার মাওবাদীদের দেওয়া সাত দিনের সময়সীমা পার হয়ে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী আলোচনার সম্ভাবনা একেবারে খারিজ করে দেননি, তাতেও খুশি কেন্দ্র।
কেন্দ্র মনে করছে, জঙ্গলমহলে গত পাঁচ মাস যৌথ বাহিনীর অভিযান প্রায় বন্ধ থাকলেও মাওবাদী দমন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন দু’টি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছেন। প্রথমত, এখন আগের মতো গোটা গ্রাম ঘিরে অভিযান চলছে না। যে বা যারা হিংসাত্মক কাজকর্মে জড়িত, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে কেউ হিংসার পথে থাকতে না চাইলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারছেন। দ্বিতীয়ত, মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ করানো ও পুনর্বাসন নিয়েও কেন্দ্রের নীতি পর্যালোচনার দাবি তুলেছেন তিনি। রাজ্যপালের মাধ্যমেও মমতা এ কথা কেন্দ্রের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন। কেন্দ্রেরও তাতে সায় রয়েছে। মমতার মতো কেন্দ্রও মনে করছে, আদিবাসী যুবকদের মাওবাদী সংগঠনে নাম লেখানোর পিছনে অনুন্নয়ন ও দারিদ্র একটা বড় কারণ। আজ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, “দেশের যে সব এলাকা মাওবাদী উপদ্রুত, ঘটনাচক্রে ওই সব জায়গাগুলি সব থেকে অনগ্রসর ও দরিদ্র। তাই উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়াটাও আমরা প্রয়োজন বলে মনে করি।”
গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছেন, জঙ্গলমহলে গত পাঁচ মাস অভিযান বন্ধ থাকার সুযোগে সেখানে সংগঠন মজবুত করেছে মাওবাদীরা। অন্য রাজ্য থেকে পালিয়ে মাওবাদীরা পশ্চিমবঙ্গে এসে লুকিয়ে রয়েছে। আবার পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে অসমের মতো রাজ্যে কাজ শুরু করেছে মাওবাদীরা। সেখানকার আদিবাসী জঙ্গি-সংগঠনের সঙ্গে তারা হাত মেলাচ্ছে। আজ রাজ্যপাল সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্মেলনে অসমের রাজ্যপাল এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাওবাদী সমস্যা যাতে নতুন এলাকায় ছড়াতে না পারে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.