সিপিএম রাজ্য কমিটি
সম্মেলনের প্রস্তুতিতেও সমালোচনার মুখে নেতৃত্ব
ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এমনিতেই দল সঙ্কটে। দলের ভাঁড়ারেও টান। এই অবস্থায় অনাড়ম্বর ভাবে সম্মেলন-পর্ব সম্পন্ন করে তার মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়েও ‘বিড়ম্বনা’ কাটছে না সিপিএমের। কারণ, সম্মেলন-পর্বের প্রস্তুতি-বৈঠকেও সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
সম্মেলনের আগে সিপিএমের শেষ রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক শুরু হয়েছে রবিবার। সম্মেলনের জন্য রূপরেখা বেঁধে দিতে গিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অনাড়ম্বর ভাবে ওই প্রক্রিয়া সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। অসুস্থ এবং ‘নিষ্ক্রিয়’দের সরিয়ে বিভিন্ন কমিটিতে যুব-মহিলাদের তুলে আনার কথা বলেছেন। কমিটি গড়ার সময় ‘ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ’কে প্রাধান্য দিতেও নিষেধ করেছেন। কিন্তু সম্মেলনের এই রূপরেখা বাঁধার আলোচনার আসরেও দলের নেতৃত্বে আগাগোড়া বদলের আহ্বান শোনা গিয়েছে। জনমানসে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পেতে নেতৃত্বে আমূল বদলের কথা যেমন বলেছেন এক প্রাক্তন মন্ত্রী, তেমনই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতেই দিনের পর দিন পলিটব্যুরো বৈঠকে তাঁর না-যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে! বৈঠকে তখন হাজির ছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও।
রাজ্য কমিটির বৈঠকের গোড়াতেই বিমানবাবু এ দিন সম্মেলনের রূপরেখা ঠিক করে দেওয়ার পরে জেলার নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলায় সম্মেলন প্রক্রিয়া চালানোর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে মতামত জানাতে শুরু করেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে রাজ্য কমিটির সদস্য, প্রাক্তন এক ডাকসাইটে মন্ত্রী সরাসরিই দলীয় নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সিপিএম সূত্রের খবর, দলকে ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ নেতৃত্বকেই আগে সরে দাঁড়াতে হবে বলে সওয়াল করেন ওই নেতা। তিনি বলেন, কেউ শুরু থেকে একেবারে ভোটে না-হারা পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রীই হয়ে থাকবেন, কেউ কোনও স্তরে বছরের পর বছর সম্পাদক পদেই থেকে যাবেন এই ভাবে চললে হবে না। দলকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়োজনে তিনি নিজে দলের স্রেফ সাধারণ সদস্য হয়ে কাজ করতে চান বলেও মন্তব্য করেন ওই নেতা। এরই পাশাপাশি, কিছু জেলার নেতা বলেন, খোদ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পলিটব্যুরোর বৈঠক ক্রমাগত এড়িয়ে চলছেন। কেন বৈঠকে যাচ্ছেন না, তা নিয়ে নিজে নীরব থাকছেন। এতে দলের নিচু তলায় ‘ভুল বার্তা’ যাচ্ছে।
আলিমুদ্দিনে কারাট ও বুদ্ধ। নিজস্ব চিত্র
ঘটনাচক্রে, এই সব আলোচনার মাঝেই সন্ধ্যায় আলিমুদ্দিন ছেড়ে বেরিয়ে যান কারাট। আজ, সোমবার সকালে তাঁর দিল্লি ফেরার বিমান ধরার কথা। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, বিধাননগরে তাঁর দীর্ঘ দিনের পরিচিতের বাড়িতে আমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্যই নিজের বক্তব্য আগে সেরে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন কারাট। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের সামনে পলিটব্যুরোর বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বুদ্ধবাবুর সমালোচনা হচ্ছে, এই ‘অস্বস্তি’ এড়ানোর জন্যই একটু বেশিই আগে কারাট আলিমুদ্দিন ছাড়লেন কি না, তা নিয়ে ‘জল্পনা’ তৈরি হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। তা ছাড়া, সম্মেলনের প্রস্তুতি-পর্বের কথা জেলার নেতাদের কাছ থেকে স্বকর্ণে শুনবেন বলে যিনি কলকাতায় বৈঠকে এসেছেন, তিনি মাঝপথেই আমন্ত্রণ রক্ষায় বেরিয়ে যাচ্ছেন এই ঘটনাও সিপিএম-রাজনীতিতে ঈষৎ চর্চার বিষয়।
বিগত দু’টি পলিটব্যুরোর বৈঠকে কারাটের সঙ্গে বুদ্ধবাবুর দেখা হয়নি। কারাট রাজ্য দফতর ছাড়ার আগে এ দিন একান্তে দু’জনের মধ্যে নানা বিষয়ে কথা হয় বলে দলীয় সূত্রের খবর। মূলত, রাজ্যে বাম কর্মী-সমর্থকদের উপরে সন্ত্রাস এবং মতাদর্শগত দলিল নিয়েই তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত। দলীয় নেতৃত্ব এবং নিজের সমালোচনা শোনার পরে আজ, সোমবার রাজ্য কমিটির শেষ দিনে বুদ্ধবাবু মুখ খোলেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে জেলার নেতাদের মধ্যে।
তবে আলিমুদ্দিন ছাড়ার আগে কারাট বৈঠকে বলেন, এ বার এ রাজ্যে সম্মেলন হচ্ছে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’তে। ক্ষমতার বাইরে থেকে সম্মেলন প্রক্রিয়া এ রাজ্যে দলীয় সদস্যদের অধিকাংশেরই অভিজ্ঞতায় নেই। ক্ষমতায় কবে আবার ফেরা যাবে, তা নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে এ বারের সম্মেলন প্রক্রিয়াকে ‘রাজনৈতিক, মতাদর্শগত ও সাংগঠনিক’ ভাবে দলকে আরও ‘শক্তিশালী’ করে গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করার কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক। যে ভাবে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের উপরেও জোর দেন তিনি।
দলের আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে গেলেও বিমানবাবু স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন, সম্মেলনের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তোলা যাবে না। অনাড়ম্বর ভাবে সম্মেলন করা হলেও আলোচনার মধ্যে স্থানীয় বিষয়গুলিকে তুলে আনতে হবে। এ বার সিপিএমে শাখা সম্মেলন হচ্ছে না। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বা পূর্ব মেদিনীপুরের মতো ‘সন্ত্রাস কবলিত’ জেলায় ‘গোপন’ সম্মেলন, এমনকী, একাধিক লোকাল কমিটির সম্মেলন এক সঙ্গে করার নির্দেশও দিয়েছে রাজ্য কমিটি। বস্তুত, জেলার নেতারাই এ ব্যাপারে সওয়াল করেছেন। সব মিলিয়েই অতীতে সিপিএমের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যে ‘সাজ সাজ রব’ দেখা দিত, এ বার আর তা দেখা যাবে না। আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মত ভাবে কমিটি গঠনের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের রূপরেখা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিমানবাবু স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের কমিটিতে নেওয়ার কথা যেমন বলেন, তেমনই আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে আরও যুবদের স্থান দেওয়ার নির্দেশ দেন। দলীয় সূত্রে খবর, অসুস্থতার কারণেই মালদহ ও জলপাইগুড়ির জেলা সম্পাদকেরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.