শুরু হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। মাঝে কেটে গিয়েছে ২৫টা বছর। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি রঘুনাথপুরের উপসংশোধনাগারের নির্মাণ কাজ। পূর্তদফতর ও প্রশাসনের সাফাই, অর্থের অভাবে ধীর গতিতে এগিয়েছে উপসংশোধনাগারের কাজ। প্রশাসন সূত্রে খবর, মহকুমা স্তরে উপসংশোধনাগার থাকা আবশ্যক। সেই জন্য ১৯৮৬ সালে মহকুমাশাসকের কাযার্লয়ের অদূরে গোবিন্দপুর গ্রামের পাশে শুরু হয় উপ-সংশোধনাগারের নির্মাণ কাজ।
রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক আবিদ হোসেন বলেন, “চলতি বছরের মার্চ মাসে পুলিশের তৎকালীন আইজি(কারা) এই উপসংশোধনাগার নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে এসেছিলেন। বিধানসভা ভোটের পরে ফের পরিদর্শন করেছেন আইজি। আমরা চেষ্টা করছি কাজ দ্রুত শেষ করতে।” |
অন্য দিকে, সংশোধনাগারটি অবিলম্বে শুরু করার দাবিতে সরব হয়েছেন রঘুনাথপুর আদালতের আইনজীবীরা। কারণ যে কোনও প্রয়োজনে তাঁদের ছুটতে হয় ৪০ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়া সংশোধনাগারে। রঘুনাথপুর বাস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সমিতির সদস্য দেবব্রত সরকার জানান, বিচারাধীন মামলা-সহ বিচার সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে জেলেবন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে বা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য আইনজীবীদের পুরুলিয়ায় যেতে হয়। বার অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষোভ, “সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলে ওই উপসংশোধনাগার চালু করার দাবি জানিয়েও ফল হয়নি।” আইনজীবীদের পাশাপাশি ভুগতে হচ্ছে পুলিশকেও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারাধীন মামলার ক্ষেত্রে অপরাধীদের রঘুনাথপুর আদালতে নিয়ে আসা হয় পুরুলিয়ে জেলা সংশোধনাগার থেকে। প্রতিদিন একটি গাড়িতে এত দূর পথ পেরিয়ে বন্দিদের নিয়ে আসা রীতিমতো ঝুঁকির বিষয়। সময় মতো বন্দীদের আদালতে নিয়ে যেতে না পারলে নাজেহাল হতে হয় পুলিশকে। রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “বিচারাধীন মামলা ও অপরাধের তদন্ত-সহ বেশ কিছু বিষয়ের জন্য মহকুমাস্তরে উপসংশোধনাগার থাকা জরুরি।
বস্তুত পুরুলিয়া থেকে বন্দিদের নিয়ে রঘুনাথপুর আদালতে সকালে নিয়ে আসার পরে গাড়িটি বিকেলে ফেরত পাঠাতে হয়। আইনজীবীদের বক্তব্য, “কোনও বন্দির সাজা হওয়ার পরে নিয়ম অনুযায়ী তাকে পুরুলিয়ায় ফেরত নিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই ছাড়া হবে। এক্ষেত্রে সন্ধ্যার সময়ে জামিনে মুক্ত বন্দিরা যানবাহনের অভাবে বাড়ি ফিরতে পারে না।” এ ছাড়া, নিতুড়িয়া, সাঁওতালডিহি, সাঁতুড়ি থানা এলাকার বন্দিদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে পুরুলিয়ায় যেতে হয়।
রঘুনাথপুরের সহকারী বাস্তুকার দীপ নারায়ণ শীল বলেন, “১৯৮৬ সালে বরাদ্দ ১৪ লক্ষ টাকায় সীমানা প্রাচীর হয়েছে। ১৯৯৬-৯৭ সালে ৫০ লক্ষ টাকা পাওয়ার পরে বন্দিদের সেল, পুলিশের বাসস্থান, অফিস, রান্নাঘর নির্মাণ শুরু হয়েছিল। সামান্য অর্থে কাজ শেষ করা যায়নি।” তিনি জানান, ২০০৭-০৮ আর্থিক বর্ষে মিলেছে প্রায় এক কোটি টাকা। সেই অর্থে কাজ শুরু করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “এক সঙ্গে অর্থ না মেলায় কাজে দেরি হয়েছে।”
উপসংশোধনারে গিয়ে দেখা যায়, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রান্নাঘর উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এই অবস্থায় কবে কাজ শেষ হয়ে উপসংশোধনাগার চালু হবে সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছে রঘুনাথপুর মহকুমা। |