তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ সূর্যকান্তর
বাঁকুড়ায় গুলিতে সিপিএম সমর্থক খুন, আহত ছয়
ততায়ীদের গুলিতে প্রাণ গেল সিপিএম সমর্থক পরিবারের এক যুবকের। গুলিবিদ্ধ হলেন নিহতের বৌদি। আততায়ীরা মারধর করল পড়শিদের। ভাঙচুর চালাল কয়েকটি ঘরে।
রবিবার ভোরে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার হিজলডিহা গ্রামের ওই হামলায় নিহত বলরাম সিংহকে (৩৫) দলের ‘সক্রিয় কর্মী’ হিসাবে দাবি করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের অভিযোগ, ‘তৃণমূল-আশ্রিত’ দুষ্কৃতীরাই রয়েছে এই ঘটনার পিছনে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়।
অমিয়বাবুর আর এক অভিযোগ, “শনিবার রাত থেকে পাশের যাদবনগর গ্রামে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা যখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হচ্ছিল, সেই সময়ই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তবু পুলিশ না আসায় পরিকল্পিত ভাবে দুষ্কৃতীরা হিজলডিহায় তাণ্ডব চালাতে পেরেছে। যার পরিণতিতে আমাদের এক সক্রিয় কর্মী প্রাণ দিলেন। গুরুতর আহত হলেন ছ’জন।” জেলা পুলিশ সুপার প্রণব কুমার জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে জয়পুর থানার ওসি প্রণবেশ মাহাতো এবং এএসআই গৌতম ধাড়াকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
তখনও বেঁচে বলরাম সিংহ। হিজলডিহায়। শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
বলরাম হিজলডিহার বকুলতলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। হামলায় তাঁর বৌদি-সহ আহত ছ’জন বিষ্ণুপুর হাসপাতাল ও বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। বস্তুত, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই জেলায় একাধিক বার সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই খুন হয়েছেন ৩ সিপিএম নেতা-কর্মী। প্রত্যাশিত ভাবেই এই ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, “এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে আশঙ্কা করে শনিবার রাতেই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ডিজি, আইজি-কে এসএমএস করি। রাত ১১টা নাগাদ পার্থবাবু এসএমএসের জবাব দিয়ে আশ্বস্ত করেন, এমন কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও ভোরে এ ঘটনা ঘটল।” তাঁর অভিযোগ, “আগে বারবার মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত ভাবে সন্ত্রাসের বিষয়ে জানিয়েছি। এ বার পার্থবাবুকে আগাম জানালাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। পুলিশ-প্রশাসন যে নিরপেক্ষ নয়, এ ঘটনা তাই প্রমাণ করছে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “ওখানে আমাদের তেমন সংগঠন নেই। বিধানসভা ভোটে হারার পর থেকেই ওখানে সিপিএমে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। এই ঘটনাও সিপিএমের নিজেদের মধ্যে লড়াইয়েরই পরিণাম।” সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের দাবি, নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’ বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের বহু কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। মাস দু’য়েক ঘরছাড়া থাকার পরে সম্প্রতি মানিক রায় নামে সিপিএমের এক যুব নেতা হিজলডিহায় নিজের বাড়িতে ফিরেছিলেন। শুক্রবার ‘তৃণমূলের দুষ্কৃতী’রা তাঁকে ‘বেধড়ক মারধর’ করে। অমিয়বাবুর কথায়, “এ দিন যাঁদের বাড়িতে হামলা হয়, তাঁরা শুক্রবার দুষ্কৃতীদের বাধা দিয়েছিলেন। তখনই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেয়।”
ঘটনাস্থলে এ দিন সকালে গিয়ে দেখা যায়, চার-পাঁচটি বাড়ির দরজা ভাঙা। ভিতরের জিনিসপত্র তছনছ। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও আতঙ্ক কাটছে না গ্রামবাসীদের। অনেক মহিলাই কাঁদছেন। গ্রামে পুলিশ পিকেট বসেছে। তবে পুলিশের ‘ভূমিকা’য় অসন্তুষ্ট অনেকেই। নিহত বলরামের ভাই জিতেন সিংহ বললেন, “ভোর ৩টে নাগাদ দু’টো গাড়িতে ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী গ্রাম ঘিরে হামলা চালাল। গুলি চালাল। লাঠিপেটা করল বাড়ির মেয়ে-বউদের। এত জন জখম হল। আর খবর দেওয়ার সত্ত্বেও পুলিশ গ্রামে ঢুকল দুষ্কৃতীরা চলে যাওয়ার পরে!” তাঁর ক্ষোভ, “আমরা সিপিএম করি। কিন্তু তা বলে গুলি খেতে হবে, লাঠি খেতে হবে? আইন-কানুন বলে কি কিছুই নেই?”
বিষ্ণুপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জিতেনের বৌদি অলকাদেবীরও অভিযোগ, “আমরা সিপিএম করি বলেই হামলার শিকার হলাম। বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট হল। স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মীর নেতৃত্বে এই কাজ করেছে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা ছিল বন্দুকবাজদের। ‘সিপিএম করা শেষ করে দিচ্ছি’ হুমকি দিয়ে বলরাম আর আমাকে লক্ষ করে ওরা গুলি চালায়।” বলরামের ডান কাঁধে গলার নীচে গুলি লাগে। প্রথমে বিষ্ণুপুর ও পরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পরেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অলকাদেবীর ডান পা ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে গিয়েছে। ওই পরিবারের তরফে অবশ্য কারও বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। দুষ্কৃতীদের মারে হাত ও কোমর ভেঙেছে বকুলতলার বধূ মালতি সিংহের। বাঁকুড়া মেডিক্যালের পথে তিনি বললেন, “দুষ্কৃতীরা খালি বলছিল, ‘সিপিএম করার শিক্ষাই দিচ্ছি’!’’ হামলায় বাঁ পা ভেঙে যাওয়া প্রৌঢ় শীতল সিংহ বলেন, “কাউকে চিনি না। ঘর থেকে বার করে লাঠিপেটা করল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.