মুড়িগঙ্গায় দুর্ঘটনার পরেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন নদীতে নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী পারাপারের ছবিটা অপরিবর্তিতই থেকে গিয়েছে। গত বছরের ৩১ অক্টোবর মুড়িগঙ্গায় যাত্রীবোঝাই ট্রলারডুবিতে বেশ কিছু লোক মারা যান। তার পরেই প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের উপরে নিষেধাজ্ঞা জোরদার করা হয়। কিন্তু তা যে ঠিকমতো মানা হচ্ছিল না তার প্রমাণ গত ৩১ অগস্ট ঝড়খালিতে মাতলা নদীতে ভুটভুটি উল্টে যাওয়ার ঘটনা। ওই ঘটনায় মারা যান চারজন। এ ক্ষেত্রেও উঠেছিল প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের অভিযোগ।
সম্প্রতি গোসাবায় গিয়ে দেখা গেল নিষেধাজ্ঞা না মেনেই অনায়াসে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলছে পারাপার। এই ব্লকের হোগল নদীতে গদখালি ও পাঠানখালির মধ্যে বহনের অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নিত্য পারাপার চলছে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, ঘাটগুলিতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ নিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঘাটমালিকেরা সে সবের তোয়াক্কাই করেন না। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি ভুটভুটিতে ৬০ জনের বেশি যাত্রী বহন করা নিষিদ্ধ। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সেই বিধি না মেনে বেশি লাভের জন্য ভুটভুটিগুলিতে বহনের অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়। শুধু তাই নয়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়াও নেওয়া হয়। |
গোসাবা ও গদখালির মধ্যে নিত্য যাতায়াতকারী রাজু দাসের অভিযোগ, “রোজ ক্যানিং থেকে এসে এই নদীপথ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রোজই ভুটভুটিতে বহন ক্ষমতার বেশি যাত্রী তোলা হয়। ঘাটমালিক বা মাঝিকে বলেও কোনও লাভ হয় না। উল্টে তাঁরা ভুটভুটিতে না তোলার হুমকি দেন। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রোজ পারাপার করতে হয়। একই বক্তব্য অন্য যাত্রীদেরও। তাঁদের আরও অভিযোগ, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ নিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ঠিকমতো পালত হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই।
তবে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ নিয়ে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঘাট মালিকেরা। গোসাবা-গদখালি জেটিঘাটের ঘাটমালিক বাবলু সর্দার বলেন, “অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ নিয়ে পুলিশের কড়াকড়ি রয়েছে। তাই কখনওই ৪০-৫০ জনের বেশি যাত্রী তোলা হয় না। অথচ একটি ভুটভুটিতে ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো যাত্রী পরিবহণের ক্ষমতা রয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ঘাট ইজারা নিতে হয়। এত কম সংখ্যায় যাত্রী পরিবহণে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তা সত্ত্বেও অতিরিক্ত যাত্রী যাতে না নেওয়া হয় সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখি।”
অন্যদিকে পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ভুটভুটিগুলি যাতে অতিরিক্ত যাত্রী না নেয়, সে জন্য বিভিন্ন ঘাটে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “সরকারি নিয়মানুযায়ী ছোট নৌকায় ৩০ জন, বড় নৌকায় ৬০ জনের বেশি যাত্রী পারাপার নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও কোথাও কোথাও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ নিয়ে অভিযোগ উঠছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে।” |