প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, হেলদোল নেই পুলিশ-প্রশাসনের
বনগাঁ-চাকদহ সড়কের দু’ধারে ট্রাকের সারি, ক্ষোভ বাসিন্দাদের
দীর্ঘদিন ধরেই বনগাঁ-চাকদহ সড়কে যত্রতত্র ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। তা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। কিন্তু এ বার দুর্গাপুজোর পর থেকে সড়কের দু’ধারে সারি সারি পণ্যবাহী ট্রাক যে ভাবে দাঁড়িয়ে থাকছে, তা অতীতে কখনও হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত।
সংস্কার হওয়ার পরে বনগাঁ-চাকদহ সড়কে যানবাহনের গতি বেড়েছে। যশোহর রোড বা বনগাঁ-বাগদা সড়ক তুলনায় সঙ্কীর্ণ। বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে বেশির ভাগ পণ্যবাহী ট্রাক বনগাঁ-চাকদহ সড়ক ধরে পেট্রাপোলে আসে। কিন্তু দুর্গাপুজোর পর থেকে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যাতায়াত করা বা গাড়ি চালানো সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ গাড়ি-চালক ও সাধারণ মানুষের। দুর্ঘটনাও ঘটছে।
পুর এলাকার মধ্যে ওই সড়ক থেকে ট্রাক সরানোর উদ্যোগ ইতিমধ্যেই নিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। বনগাঁ থানার আইসি অনিল রায়ের নেতৃত্বে শনিবার থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। ওই দিন বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ৬টি ট্রাক আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তিন ট্রাক-চালক এবং এক ট্রাক-মালিককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, অভিযান নিয়মিত চলবে।
কিন্তু পুর এলাকার বাইরে ওই সড়কের পরিস্থিতি একই রকম থাকছে।
রাস্তার দু’ধারে এ ভাবেই সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে পণ্যবোঝাই ট্রাক।—নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁর মিলন পল্লিতে পুরসভার যে ট্রাক পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে, সেখানে ৭০০টি ট্রাক দাঁড়াতে পারে। পেট্রাপোলে সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস কর্পোরেশনের (সিডব্লুসি) টার্মিনাসে ট্রাক থাকতে পারে ৮৫০টি। পুজোর আগে পর্যন্ত রোজ গড়ে ৫০০টি পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল হয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে ঢুকত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫০-৩০০ ট্রাকের মধ্যে। এর কারণ হিসাবে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি চাল-গম বোঝাই ট্রাক আসার সংখ্যা বেড়েছে। অত ট্রাক এক সঙ্গে দু’টি টার্মিনাসে ঢুকতে না পেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকছে। তা ছাড়া, নথিপত্র সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাজ সারতে দেরি হচ্ছে বলেও তাঁরা মেনে নিয়েছেন। ফলে, ট্রাক টার্মিনাসগুলি থেকে ট্রাক বেরোতেও দেরি হচ্ছে।
শুল্ক দফতরের অফিসারদের একাংশের ‘আচরণ’-এ রফতানি সংক্রান্ত নথিপত্র দীর্ঘ ক্ষণ আটকে রাখা হচ্ছে এবং তার ফলে বাণিজ্যে গতি কমছে এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি ‘ক্লিয়ারিং এজেন্ট’রা এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেন। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “সকাল ৭টা থেকে ট্রাক চলাচল শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এখন তা শুরু হয় ৯টা নাগাদ। চালের ট্রাক বেশির ভাগই পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া এ বার ‘রেক’ও আসছে বেশি পরিমাণে। এই সমস্যাগুলি মিটলে যানজট সমস্যা মিটবে।”
সমস্যা মেটাতে বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ সংস্থার সদস্য গোপাল শেঠ সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠান। গোপালবাবুর দাবি, দিন কয়েক আগে ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রক থেকে তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গোপালবাবু বলেন, “বর্তমান পরিকাঠামোয় দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। পেট্রাপোলে পার্কিং এলাকা বাড়াতে হবে। পুলিশ-প্রশাসনকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। আপাতত রাস্তার এক দিকে ট্রাক দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”
সমস্যা মেটাতে রবিবার বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস পেট্রাপোল বন্দরে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। তিনি বলেন, “শুল্ক দফতরের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কাজ করে এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।” মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “রোজই বিভিন্ন রাজ্য থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শহরে ঢুকছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, পুর এলাকার মধ্যে রাস্তায় কোনও ট্রাক দাঁড় করাতে দেওয়া হবে না।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এর আগেও ওই রাস্তায় যত্রতত্র ট্রাক দাঁড় করানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়। প্রচারও করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ বারও কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.