কাড়া প্রতিযোগিতা দেখতে ভিড় উপচে পড়ল পুঞ্চার গ্রামে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুঞ্চা |
সারা মাঠ জুড়ে তখন একটাই শব্দহো হো...। মাঠ ছেড়ে দর্শকদের দিকে ধাবমান দুই কাড়া (মোষ)। পড়ি মরি করে দৌড় জনতার। মোষের তাড়া খেয়ে মাঠে উপস্থিত দর্শকেরা একবার এপাশ তো পরক্ষণে ওপাশে। আর আড়াই হাতের বাঁশের লাঠি নিয়ে দুই কাড়াকে মাঠের মধ্যে আনার চেষ্টা করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। রবিবার এই কাড়া লড়াইয়ে মেতে রইলেন পুঞ্চার বাসিন্দারা।
মানভূম সংস্কৃতির অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব এই কাড়া লড়াই। রবিবার পুঞ্চার নপাড়া মাঠে এই প্রতিযোগিতা হয়। সপ্তম বর্ষে পা দেওয়া এই কাড়া প্রতিযোগিতা দেখতে প্রায় ১৫ হাজার দর্শক মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই উৎসব কতটা জনপ্রিয় দর্শকদের উপস্থিতিতেই পরিষ্কার। আয়োজক কমিটি হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। কমিটির সভাপতি নকুল মাহাতো, সম্পাদক জগদীশ মাহাতোর কথায়, “কাড়া লড়াই জেলা তথা মানভূম সংস্কৃতিক অন্যতম প্রাচীন উৎসব।” |
প্রাচীন এই উৎসব দেখার জন্য দর্শকেরা কেউ গাছের মগডালে, বাঁচের মাচায় কেউ আবার লরীর ছাদের মাথায় উঠে বসেছেন। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় বার বার মাইকে প্রচার করছেন ঘোষক গুরুপদ মাহাতো। বাজি ছিল কমিটির মোষ দু’বার লড়াইয়ে নামবে। প্রথম দফায় কমিটির মোষকে হারাতে পারলে বিজয়ী মোষের মালিক ১৫ হাজার, দ্বিতীয় দফায় হারাতে পারলে ১০ হাজার টাকা পাবেন। যাই হোক এই কাড়া লড়াই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গড়ালেও দর্শকদের ভিড় হালকা হয়নি। এই কাড়া লড়াইয়ের পরে ছিল মোরগ লড়াই। সেখানও কমিটির মোরগকে হারাতে পারলে হাতে হাতে নগদ এক হাজার টাকা পুরস্কার।
পৌষ সংক্রান্তির এখনও অনেক দেরি। কিন্তু তার মধ্যে রাস্তায় মাদল বাজিয়ে টুসু সঙ্গীতের চটি বই বিক্রি করছিলেন কেন্দা থানার হরিহরপুর গ্রামের। নিবন্ধন মাহাতো। তিনি বলেন, “কাড়া লড়াইয়ের মেলায় ভাল বই বিক্রি হয়েছে।” আড়শা থানার ঝরিয়াডি গ্রামের বৃন্দাবন মাহাতো, বাঘমুণ্ডির দারাডি গ্রামের ফুলু সিংদের কথায়, “কাড়া লড়াই দেখতে এখানে সবাই এসেছি। দুই কাড়া যখন এক অপরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সিংয়ে গেঁথে এ ওকে আসর থেকে সরানোর চেষ্টা করছে, তা অন্য স্বাদ বহন করে।”
এই কাড়া লড়াই উপলক্ষে যে মেলে বসেছিল তাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে রাতে নাচের আসর বসেছিল। ঝাড়খণ্ডের বুণ্ডুতামারের পুষ্পদেবী, পুরুলিয়ার বেলিয়াপাথরের শীলাবতী দেবী, কোটশিলা থানার চৈতনডির বিজলী দেবী নাচ পরিবেশন করেন। উদ্যোক্তারা জানান, সারাদিন ও রাতের মেলাতে বিনোদন মূলত মানভূম সংস্কৃতি ভিত্তিক হয়েছে। প্রত্যেক বছর ভাইফোঁটার পরেই এই কাড়া লড়াইয়ের আসর বসে। |