হাতি খেদানো নিয়ে সমস্যায় বন দফতর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঘমুণ্ডি |
সীমান্ত ছাড়িয়ে, এমনকী অযোধ্যা পাহাড় টপকে হাতির পাল পাহাড়ের পূর্বদিকে চলে আসায় হাতি তাড়ানো নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়েছে পুরুলিয়ার বন দফতর। গত ১২ অক্টোবর ঝাড়খণ্ড সীমান্ত পার হয়ে হাতির দলটি ঝালদার দিকে ঢুকে পড়ে। তার পর থেকেই হাতিগুলি পাহাড় সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চাষজমি তছনছ করছে।
শনিবার ভোরে ওই দলটিরই এক দলছুট দাঁতালের হানায় বাঘমুণ্ডির চিকনাবাগান গ্রামে পল্টু মাহাতো এক যুবকের মৃত্যু ঘটনায় গ্রামবাসীদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বনকর্তারা অবশ্য বলছেন, ওই দলটির গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে দলটিতে কোনও খুনে হাতি নেই। এই মৃত্যুর ঘটনা বিচ্ছিন্ন। হাতিদের স্বাভাবিক যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টির কারণেও ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। অথবা আচমকা সামনে পড়ে যাওয়ায় দাঁতালের আক্রমণের মুখে পড়েন ওই যুবক।
সপ্তাহ তিনেক আগে ২৩-২৪টি হাতির ওই দল ঝালদায় ঢুকেছিল। মাঝে বনকর্মী ও হুলাপার্টির অভিযানের জেরে দলটি দু’ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অযোধ্যা পাহাড়ের পশ্চিম দিক থেকে প্রায় গোটা পাহাড় ডিঙিয়ে পূর্বদিকে বর্তমানে বাঘমুণ্ডির ডাউরিখালের কাছে এসে ফের গোটা দলটি মিলিত হয়েছে। দলটিতে ৫টি শাবক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএফও (পুরুলিয়া) অজয়কুমার দাস। ডাউরিখাল লাগোয়া জঙ্গলে হাতিগুলি আপাতত আস্তানা গাড়ায় স্থানীয় ভবানীপুর, কুদলুং, কুদনা, খটকান্ডি, চিকনাবাগান গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কুদনা-সহ আশপাশের এলাকায় রাতে চাষজমিতে নেমে গোটা পাল ফসল খাচ্ছে। নষ্ট করছে আরও বেশি। চোখের সামনে এ ভাবে হাতিদের ধানের খেত সাবাড় করে দেওয়া দেখে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, “এ বার বৃষ্টির কল্যাণে যা-ও কিছুটা ভাল ফসলের মুখ দেখেছিলাম, হাতি এসে সব বরবাদ করে দিচ্ছে। অবিলম্বে দলটাকে এখান থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করুক বন দফতর।” কুদনা গ্রামের বাসিন্দা মকর মাহাতো বলেন, “সন্ধ্যার পর তো বটেই, দিনেও গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় করছে। পাছে হাতির দলের সামনে পড়ে যাই!”
বনকর্মীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, হাতিগুলি ঝাড়খণ্ডের দিকে ফেরার কোনও লক্ষ্মণই দেখাচ্ছে না। এক জায়গা থেকে তাড়ানো হলে তারা অন্য জায়গায় গিয়ে ঘাঁটি গাড়ছে। এ সময় ধান পাকছে। পাকা ধানের গন্ধেই হাতিগুলি নড়তে চাইছে না বলে বনকর্মীদের অভিমত। ডিএফও বলেন, “আমরা দলটাকে তাড়ানোর সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছি। ওরা যাচ্ছে না। রবিবার রাত থেকে ফের অভিযান চলবে।” পাশাপাশি বিধি মনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে তাঁর আশ্বাস। |