‘সিপিএম করায়’ ‘জরিমানা’ চেয়েছিল গ্রামের কিছু লোক। দেওয়া হয়েছিল ‘খুনের হুমকি’। রবিবার ভোরে হুগলির গোঘাটের পূর্ব ফলুই গ্রামে বাড়ির অদূরে গাছের ডালে গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় মিলল এলাকার সিপিএম নেতা রাজারাম রায়ের (৬৫) ঝুলন্ত মৃতদেহ। থানায় লিখিত ভাবে জরিমানা চাওয়া এবং হুমকি দেওয়া অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি, পরিবারের দাবি, ওই সিপিএম নেতাকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ জানানো হয়নি। কারও নামও করা হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে হচ্ছে, আত্মহত্যার ঘটনা।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়িতে ছিলেন রাজারামবাবু। কখন তিনি বাড়ি থেকে বেরোন, কেউ খেয়াল করেননি। রাতে খাওয়ার সময়েও তিনি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। শেষে বাড়ির উত্তর দিকে একটি খালের ধারে চালতা গাছে রাজারামবাবুর দেহটি ঝুলতে দেখা যায়।
সংবাদমাধ্যমের কাছে রবিবার রাজারামবাবুর ছোট ছেলে শ্রীকান্ত রায় দাবি করেন, “দিন পনেরো আগে এলাকার পাঁচ তৃণমূল সমর্থক বাবাকে হুমকি দেয়। বাবা না কি সিপিএম নেতা হিসেবে আগে অনেক অন্যায় করেছেন! তাই তাঁকে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। না দিতে পারলে ওঁকে খুন করা হবে। বাবা খুব চাপে ছিলেন। বাড়ি থেকে বেরোতে চাইতেন না। শুধু বলতেন, ‘ওরা মেরে ফেলবে’। বাবাকে খুনই করা হয়েছে।” তা হলে ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হল না কেন? শ্রীকান্তর জবাব, “থানায় খুনের অভিযোগ করলে বা কারও নাম জানালে বাড়ির অন্যদের উপরেও হামলা হতে পারে।”
সরাসরি কারও দিকে অভিযোগের আঙুল না তুললেও, সিপিএমের গোঘাট জোনাল কমিটির সম্পাদক অরুণ পাত্রও বলেন, “আমাদের ওই সদস্যের মৃত্যু রহস্যময়। তাঁর পরিবার যা মনে করছে, তা অমূলক নয়।” অরুণবাবুর দাবি, গোটা গোঘাট জুড়ের বিধানসভা ভোটের পর থেকে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে নানা ভাবে ‘অত্যাচার’ চালাচ্ছে তৃণমূূল। জরিমানা আদায়, হুমকি, ধর্ষণ কিছুই বাদ থাকছে না। তাঁদের অনেকে এখনও ঘরছাড়া। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগ মানেননি। আর শ্রীকান্তবাবু সংবাদমাধ্যমের কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তা অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশোক লাগা। তাঁর দাবি, “জরিমানা আদায় বা ভয় দেখানোর গল্প কাল্পনিক। পারিবারিক অশান্তির জন্য ওই প্রৌঢ় আত্মঘাতী হতে পারেন।”
রাজারামবাবুর পরিবারের দাবি, যে গাছে দেহটি ঝুলছিল, তার সামনের দিকের অনেকটা জমির ধানগাছ দলে-পিষে গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিল, অনেকে সেখান দিয়ে হেঁটে গিয়েছেন। তা ছাড়া, রাজারামবাবুর জামা ছেঁড়া ছিল। যা দেখে তাঁর আত্মীয়দের অনুমান, “এটা আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না।” পুলিশ সুপার বলেন, “পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।” |