একুশ বছর পর কাশ্মীরের হিন্দু পণ্ডিতরা শ্রীনগরে দীপাবলির উৎসব পালন করিলেন। শুধু তাহাই নহে, এই উৎসবে উপত্যকার মুসলিমরাও ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করিলেন। ঝিলম নদীর উপরকার পায়ে-হাঁটা সেতুটি দুই সম্প্রদায়ের মানুষই সোৎসাহে আলোকমালায় সজ্জিত করিয়া তোলেন। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে প্রতীকী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক কাশ্মীরে বড় প্রয়োজন। আপাতদৃষ্টিতে দীপাবলির বিষয়টিকে অবান্তর বলা যাইত, যদি প্রায় সমসময়ে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার কণ্ঠে উপত্যকা হইতে সেনাবাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং উপদ্রুত এলাকা আইন প্রত্যাহার করার কথা শুনা না যাইত। ওমর যে এ ক্ষেত্রে হুরিয়ত সম্মেলনের দীর্ঘ দিনের দাবিরই প্রতিধ্বনি করিয়াছেন, তাহাতে সংশয় নাই। তবে তিনি গোটা কাশ্মীর নয়, তাহার চারটি জেলা হইতে কেবল ওই দুই কালা-কানুন রদের প্রস্তাব করিয়াছেন। সেই সঙ্গে তাঁহার এই অভিপ্রায় যে সেনাবাহিনীর ভূমিকা লইয়া কোনও বিরূপ মন্তব্য নয়, তাহাও স্পষ্ট করিয়াছেন। সম্ভবত সেনাবাহিনীকে আরও দীর্ঘ কাল কাশ্মীরে মোতায়েন রাখিতেই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি গত দুই দিনে পাঁচ-ছয়টি হামলা চালাইয়াছে। তবে বিপুলসংখ্যক সশস্ত্র সেনার উপস্থিতিই যে যে-কোনও স্থানে সামান্য প্ররোচনায় সমূহ উত্তেজনা ও প্রতিবাদের জন্ম দিতে পারে এবং তাহাকে গণ-চরিত্র দিতে পারে, ইহা বারংবার প্রমাণিত। কোনও উত্তেজনার এলাকাতেই অনন্ত কাল সেনা মোতায়েন রাখার অর্থ সেখানকার অসামরিক প্রশাসনের ব্যর্থতা। স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সেই প্রশাসনের প্রধান হিসাবে একটা পর্যায়ের পর সেনা-অপসারণ চাহিবেন, ইহা স্বাভাবিক। অসামরিক প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বমূলক বৈধতা এবং সাংবিধানিক কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার জন্যও এই অপসারণ অনিবার্য। তবে তিনি যে তড়িঘড়ি কিছু করিতে ব্যগ্র নন, তাহাও দ্ব্যর্থহীন জানাইয়া দিয়াছেন।
জঙ্গি তৎপরতা যে কাশ্মীরে বহুলাংশে প্রশমিত, তাহার এক প্রমাণ সে রাজ্যে এ বছর পর্যটকদের ঢল। তাঁহারা যে নির্ভয়ে উপত্যকার দ্রষ্টব্যগুলি ঘুরিয়া দেখিতে পারিতেছেন, জঙ্গিদের দ্বারা আক্রান্ত হইতেছেন না, ইহা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দিকেই ইঙ্গিত করে। হুরিয়ত নেতৃত্বের কট্টরপন্থী অংশের নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি যখন হিজবুল মুজাহিদিন-এর পাকিস্তানস্থ কমান্ডার সালাহউদ্দিনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করিয়া ভারত সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি শান্তি-আলোচনায় বসিবার সদিচ্ছা প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে সালাহউদ্দিনের এক্তিয়ার লইয়া সংশয় ব্যক্ত করেন, তখন আশা জাগে, হয়তো এ বার কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। গিলানিই আবার হুরিয়তের তরফে উপত্যকায় বন্ধ-এর ডাক দিয়াছেন। হয়তো আন্দোলন জিয়াইয়া রাখার তাড়না হইতেই এই বন্ধ, কারণ কাশ্মীরি মুসলিমদের আন্দোলনই যদি থিতাইয়া যায়, তবে গিলানি, সাব্বির শাহদের প্রাসঙ্গিকতাও তো ফুরাইয়া যাইবে। রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতে চাকুরি পাওয়ার যে ব্যাকুলতা কাশ্মীরি যুবকদের মধ্যে সম্প্রতি প্রত্যক্ষ করা গিয়াছে, তাহাতে মনে হয়, রাজ্যের গভীর ও ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত করিলেই সমস্যার বেশ কিছুটা নিষ্পত্তি হইতে পারে। |