সম্পাদক সমীপেষু...
পাঁচ কোটি বছর ওরা আছে, আমরা ধ্বংস করব?
এই বছরটি হল আন্তর্জাতিক বাদুড়বর্ষ। বাদুড় একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যে উড়তে পারে। প্রায় ৫ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে বাদুড়েরা বাস করছে। মেরুপ্রদেশ ও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ছাড়া সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বাদুড় দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে প্রায় ১০০০ প্রজাতির বাদুড় আছে। দক্ষিণ এশিয়াতে ১২৩ প্রজাতির বাদুড় মেলে। দক্ষিণ এশিয়ার ৪৫০টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ২০ শতাংশ হল বাদুড়। বেশির ভাগ বাদুড়ই কালো অথবা বাদামি। তবে উজ্জ্বল কমলা, হলুদ, রুপোলি, সাদা ও ধূসর রঙের বাদুড়ও দেখা যায়। কিছু বাদুড়ের গায়ে ও ডানায় ছিটে ছিটে দাগ এবং লম্বা লম্বা দাগ দেখা যায়।
বাদুড়রা বাসা তৈরি করতে পারে না। খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী দু’ধরনের বাদুড় দেখা যায়। প্রথম ধরনটি হল, ফল খায় এবং আকারে বড়। দক্ষিণ এশিয়াতেই ১৪ রকমের ফল খাওয়া বাদুড় আছে। তবে এরা ছোট পোকামাকড়ও খায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায়, এদের ‘মেগাকাইরোপটেরা’ বলে। দ্বিতীয় ধরনটি আকারে ছোট। এরা পোকামাকড়, ইঁদুর, সরীসৃপ, ব্যাঙ, মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। এদের ‘মাইক্রো কাইরোপটেরা’ বলে।
সবচেয়ে বড় বাদুড় ডানা ছড়ানো অবস্থায় প্রায় ৬ ফুট লম্বা এবং ডানা দুটির ওজন প্রায় এক কেজি। একটি মা বাদুড় বছরে একটি বাচ্চা প্রসব করে। বাদুড়ের রক্ত সংবহনতন্ত্র ও পেশি এমন ভাবে তৈরি যে, মাথা নীচের দিকে ঝুলে থাকলেও কোনও অসুবিধা হয় না। বাদুড় আলট্রাসনিক শব্দ ব্যবহার করে খাদ্যের অবস্থান ও সামনে থাকা বাধা বোঝার জন্য। সমস্ত বাদুড় অন্ধ নয়, ফল-খাওয়া বাদুড়রা ভালই দেখতে পায়। বাদুড় কখনও মানুষকে আক্রমণ করে না। এরা পরিচ্ছন্ন প্রাণী। বহু বার নিজের শরীর নিজেরা পরিষ্কার করে। বাদুড় পরাগ-মিলনে সাহায্য করে ও ফলের বীজ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছতে সাহায্য করে। বাদুড় গাঢ় অন্ধকারে চুলের মতো সরু পদার্থকেও বুঝতে পারে, নিজেদের আবাসস্থল নিজেদের মূত্রের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারে।
আগে এ রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই বাদুড়ের দেখা মিলত, এখন খুব কম দেখা যায়। গাছ কেটে ফেলায় বাদুড়ের নিরুপদ্রবে বাস করার জায়গা নষ্ট হচ্ছে। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারে বাদুড়ের খাদ্য পোকামাকড় ধ্বংস হচ্ছে। ফলও হয়ে উঠছে বিষাক্ত। জীববৈচিত্র যদি ধ্বংসের মুখে পড়ে মানুষও যে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে, তা বুঝতে সমাজের মাথাদের আরও কত সময় লাগবে কে জানে!
ছাদখোলা বাস
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলকাতা শহরকে লন্ডন বানানোর প্রয়াস সত্যিই প্রশংসনীয়। (‘স্মৃতি উসকে শহর দেখাতে পথে নামবে দোতলা বাস’, কলকাতা, ১৭-১০) কিন্তু লন্ডনের ধাঁচে ছাদখোলা একটা দোতলা বাস তৈরি করতে গিয়ে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা মানা যায় না। এত আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রাজ্য সরকারের এই বাড়তি ব্যয় একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। উপরন্তু কলকাতার আবহাওয়ার সঙ্গে লন্ডনের আবহাওয়ার মধ্যেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। প্রচণ্ড গরমে কলকাতার রাস্তায় ছাদখোলা বাস পর্যটকদের কতটা আরাম দেবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
পোস্টার দূষণ
আমি দক্ষিণ কলকাতার নেতাজিনগর কলেজের অধ্যক্ষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের পতাকা-ব্যানার-পোস্টারে আমার কলেজের ভিতরে-বাইরে ছয়লাপ। তাদের সঙ্গে বার বার আলোচনা করেও কোনও সদর্থক সমাধান হয়নি। উল্টে সমস্যা আরও বেড়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সরকারি অফিস, আদালত, হাসপাতাল সর্বত্র সুস্থ কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার নিরলস চেষ্টা করছেন। অতি সম্প্রতি তারই প্রতিফলন দেখলাম চিড়িয়াখানায়। খবরে প্রকাশ, (৭-৯) সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে “চিড়িয়াখানাকে রাজনৈতিক পতাকা ও স্লোগানমুক্ত করতে হবে। সেখানে এমন পরিবেশ চাই, যাতে দর্শক ও পশুপাখিদের কোনও রকম সমস্যা না হয়।”
পশু-পাখিরা তবু বেঁচে গেছে। আমাদের আবার ভুল বানানে লেখা, প্রায়শই মিথ্যা তথ্য-সংবলিত কুরুচিপূর্ণ পোস্টার-ব্যানারগুলি পড়তেও হয়। হয়তো অভ্যাসবশেই। তাই এই সরকারি নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমিও চাই, কলেজকে রাজনৈতিক পতাকা ও স্লোগানমুক্ত করতে হবে। সেখানে এমন পরিবেশ চাই, যাতে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের কোনও রকম সমস্যা না-হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.