|
|
|
|
দমদম |
দিনেদুপুরে খুন তৃণমূল কর্মী, প্রশ্ন আইনশৃঙ্খলা নিয়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
দিনেদুপুরে শাসক দলের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে এক তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুন করে ট্যাক্সি চেপে পালিয়ে গেল দুই দুষ্কতী। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দমদমে, যশোহর রোডের এইচএমভি বাসস্টপের উল্টো দিকে। পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম মনোজ সহানি (৩৫)।
|
মনোজ সহানি |
জনবহুল পথে দিনের বেলায় এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশের নজরদারি নিয়ে। শাসক দলের কার্যালয়ে এ ভাবে খুনের ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ, উঠেছে সেই প্রশ্নও। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি খুন হয়েছে বেলঘরিয়া এলাকায়। একটিরও কিনারা হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিনের ঘটনায় ফের পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রবিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনাতেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “যে ট্যাক্সিতে দুষ্কৃতীরা পালিয়েছে, সেটির খোঁজে তল্লাশি চলছে। একটি সূত্রে ট্যাক্সির নম্বর প্লেটের কয়েকটি সংখ্যা জানতে পেরেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মনোজের পরিচিতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” কিন্তু যে ভাবে দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে মনোজকে খুন করা হল, তা নিয়ে কী বলছে পুলিশ? চম্পকবাবুর উত্তর, “পুলিশি টহলদারি থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হবে।” সিআইডি ও জেলা পুলিশ যুগ্ম ভাবে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী মনোজ নির্মাণকাজে ইট-বালি সরবরাহ করতেন। আগে দমদমের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে যশোহর রোডের ধারে নিউ কোয়ার্টার্সে ভাড়ায় থাকতেন। সম্প্রতি দুর্গানগরের রামকৃষ্ণপল্লি এলাকায় নিজের একতলা বাড়িতে এসেছিলেন। ওই বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী উমারানি, মা সুমনাদেবী, চার বছরের মেয়ে সিমরন, আট মাসের ছেলে সিদ্ধার্থ এবং ভাই জগ্গু। জগ্গু এ দিন বলেন, “রোজই সকাল দশটা-সওয়া দশটার মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কার্যালয়ে যেত দাদা। ফিরতে ফিরতে মাঝেমধ্যেই বিকেল হয়ে যেত।” এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ঘটনার সময়ে কার্যালয়ের উঠোনে ক্যারম খেলছিলেন স্থানীয় যুবক রাজেশ সাউ। তাঁর কথায়, “মনোজদা ঘরে টিভি দেখছিল। ট্যাক্সিটাকে থামতে দেখে অবশ্য তেমন কিছুই মনে হয়নি।” রাজেশ পুলিশকে জানিয়েছেন, হলুদ রঙের ওই ট্যাক্সি থেকে জিন্স পরা যে দু’জন নেমেছিল, তাদের বয়স চব্বিশ-পঁচিশ। এক জনের গায়ে কালো গেঞ্জি, অন্য জনের হলুদ। রাজেশ বলেন, “ওরা দরজার সামনে পৌঁছনোর কয়েক সেকেন্ড পরেই গুলির শব্দ পাই। কিছু বোঝার আগেই ট্যাক্সিতে উঠে নাগেরবাজারের দিকে চলে গেল ওরা। আমরা ঘরে ঢুকে দেখি মনোজদা লুটিয়ে পড়ে আছে। মেঝেতে চাপচাপ রক্ত।” দমদম মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে মনোজকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং বিধায়ক সুজিত বসু। ফিরহাদ বলেন, “মনোজ এই এলাকার প্রথম সারির কর্মী। জনবহুল পথে সকলের সামনে গুলি চালিয়ে কী করে দুষ্কৃতীরা পালাল, ভাবতে অবাক লাগছে।” মদনবাবুর অভিযোগ, “বেশ কিছু দিন ধরেই দমদম, বরাহনগর, বেলঘরিয়া এলাকায় দুষ্কৃতীদের ঢুকিয়ে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে সিপিএম। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।” এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই।” তাঁর মতে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা। এ দিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং খাদ্য ও সরবরাহমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ‘ওয়ান শটার’ দিয়ে গুলি করা হয়েছে মনোজকে। যে ভাবে ‘পয়েন্ট ব্ল্যাক’ রেঞ্জ থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে, তা কোনও পেশাদারের কাজ বলে ধারণা পুলিশের। ট্যাক্সির নম্বরের শেষ চারটি সংখ্যা ৫১৫৪ বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জেনেছে পুলিশ। রাজনৈতিক না ব্যবসায়িক শত্রুতায় এই খুন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মনোজ আগে যেখানে থাকতেন, সেখানে মাস কয়েক আগে একটি খুন হয়। মনোজ তাতে জড়িত ছিলেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। পুলিশের একাংশের সন্দেহ, ওই খুনের ‘বদলা’ হিসেবেই মনোজ খুন হয়েছেন।
জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “নিউ কোয়ার্টার্সে যে ব্যক্তি খুন হন, তাঁর সঙ্গে মনোজের যোগাযোগ এখনও প্রমাণিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|