ছাত্রের মৃত্যুতে পড়শিদের কোপে বাবা
স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি, আর থাকতে চাই না
বাঁশদ্রোণীর উঠতি টেবল টেনিস খেলোয়াড় বিশ্বদীপ ভট্টাচার্যের পরে মহেশতলার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাগ্নিক রায়চৌধুরী (১৭)। অভিভাবকদের প্রত্যাশার অস্বাভাবিক চাপ অকালে কেড়ে নিল আরও এক কিশোরের প্রাণ।
ছেলের মৃত্যুতে জেল হয়েছিল বিশ্বদীপের বাবার। আর মহেশতলা থানা এলাকার উত্তর সোনামুখীর জগন্নাথপুরের বাসিন্দা সাগ্নিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় পড়শিদের অভিযোগের ভিত্তিতে তার বাবা অলোক রায়চৌধুরীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে না-পারায় বিশ্বদীপকে বেদম মারধর করেছিলেন তার বাবা। তার জেরেই ছেলেটি মারা যায়। সাগ্নিক প্রি-টেস্টে খারাপ ফল করায় তাকেও যে বকাঝকা এবং মারধর করা হয়েছিল, তার বাবা অলোকবাবু পুলিশের জেরায় তা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে সাগ্নিক। ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেছিলেন তাঁরাই। একটি ‘সুইসাইড নোট’-ও পাওয়া গিয়েছে। অলোকবাবু এবং তাঁর পড়শিদের বক্তব্যে ফারাক থাকায় সাগ্নিকের অপমৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে।
তবে বিশ্বদীপের মতো সাগ্নিকের উপরেও যে অভিভাবকদের পাহাড়-প্রমাণ প্রত্যাশার চাপ ছিল, সেই ব্যাপারে কোনও ধোঁয়াশা নেই। মারধরেই মৃত্যু হোক বা আত্মহত্যা, এই ধরনের অকালমৃত্যুর জন্য ছেলেমেয়েদের কাছে বাবা-মায়েদের বিপুল প্রত্যাশাকেই দায়ী করছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
তাঁদের বক্তব্য, সন্তান আশা পূরণ করতে না-পারায় অনেক বাবা-মা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সেই অসুস্থতা থেকেই ছেলে বা মেয়ের উপরে নির্দয় হয়ে উঠছেন তাঁরা। নিজের ব্যর্থতার ভার তো আছেই, সেই সঙ্গে সহানুভূতির বদলে বাবা-মায়ের এই বিরূপতায় দিশাহারা হয়ে পড়ছে সন্তান।
সাগ্নিকের ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছিল?
ধৃত অলোক রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে অলোকবাবুর বাড়িতে সাগ্নিকের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। পাড়ার লোকেদের বক্তব্য, ওই রাতে কাউকে কিছু না-জানিয়েই সাগ্নিককে হাসপাতালে নিয়ে যান অলোকবাবুরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাবার প্রচণ্ড মারধরেই ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে এবং তার পরে তার দেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
রবিবার সকালে সাগ্নিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষুব্ধ পড়শিরা অলোকবাবুর বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করেন। তাঁর বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় অলোকবাবুকে।
সাগ্নিক ওই ব্যক্তির প্রথম পক্ষের সন্তান। পুলিশের জেরায় ধৃত ব্যক্তি জানিয়েছেন, বরাহনগরের একটি আশ্রমিক স্কুলে পড়ত সাগ্নিক। থাকত সেখানকার ছাত্রাবাসে। সম্প্রতি মাধ্যমিকের প্রি-টেস্টে চারটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল সে। শনিবার দুপুরে এই নিয়ে তাকে বকাঝকা এবং একটু-আধটু মারধর করা হয়। সন্ধ্যায় তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী সুস্মিতাদেবীকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন অলোকবাবু। রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখেন, সাগ্নিক সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। তখনও তার শরীর গরম ছিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থলে একটি ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমি নিজের মতো চলতে গিয়ে তোমার (অলোকবাবুর) স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি। প্লিজ, প্লিজ আমাকে ক্ষমা কোরো। আমি আর থাকতে চাই না।’ তলায় ইংরেজিতে সাগ্নিকের নাম লেখা। পুলিশ জানায়, ওই চিরকুটের হাতের লেখা সত্যিই সাগ্নিকের কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই ছেলেকে মারধর করতেন অলোকবাবু। পাড়ার লোকেদের সঙ্গেও তাঁর সদ্ভাব ছিল না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিবারটি আগে বরাহনগরেই থাকত। বছর দেড়েক আগে জগন্নাথপুর এলাকায় বাড়ি কিনে উঠে আসেন অলোকবাবুরা। সুস্মিতাদেবী তাঁর তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী। তাঁর প্রথমা স্ত্রী অর্থাৎ সাগ্নিকের মা মারা গিয়েছেন ছ’বছর আগে। তার পরে অলোকবাবু দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি। বিচ্ছেদের পরে তিনি ফের বিয়ে করেন।
পড়শিরা জানান, মাঝেমধ্যেই অলোকবাবুর বাড়িতে অনেক মহিলা আসেন। তখন সেখানে দিনভর বাউল গানের আসর চলে। সাগ্নিক স্কুলের হস্টেলে থাকত। পুজোর ছুটিতে সে বাড়িতে ফিরেছিল। পাড়ায় মেলামেশার ব্যাপারে অলোকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও ওই কিশোর যথেষ্ট মিশুকে ছিল বলেই জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।

 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.