শিক্ষা বিস্তারে পুরুষানুক্রমে জমি দান করে চলেছে নানুরের ব্রাহ্মণখণ্ড গ্রামের হক পরিবার। দাদু থেকে নাতি ধারাবাহিক ভাবে জমি দান করে নজির গড়েছেন। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে হক পরিবারের দান করা জমিতে।
পরিবার সূত্রে জানা হিয়েছে, প্রথম তাঁরা জমি দান করেছিলেন ১৯৫৮ সালে। ওই সময় ‘খান সাহেব’ হিসেবে পরিচিত প্রয়াত সৈয়দ আলাউল হল ব্রাহ্মণখণ্ড নিম্নবুনিয়াদি বিদ্যালয়ের জন্য প্রায় আড়াই বিঘে জমি দান করেছিলেন। সেই দানের জামিতে গড়ে ওঠা স্কুল আজও চলছে। নিম্নবুনিয়াদি স্কুলের জন্য দান করা জমির একাংশে তৈরি হচ্ছে আরও একটি জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়। এর পরে ১৯৬৮ সাল। হক পরিবারের সদস্যরাই ব্রাহ্মণখণ্ড-বাসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় তৈরির জন্য দান করেছিলেন প্রায় ৬২ শতক জায়গা। সেই জায়গার উপরেই গড়ে উঠছে
|
সৈয়দ সফিকুল। |
বিশাল স্কুলবাড়ি। এর পরে ১৯৮০ সালে ব্রাহ্মণখণ্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরির জন্য ৬ শতক জায়গা দান করেন আলাউল সাহেবের ছেলে প্রয়াত সৈয়দ মোজাহারুল হক। সম্প্রতি সমস্যায় পড়েন ব্রাহ্মণখণ্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নতুন স্কুলবাড়ি নির্মাণের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে বরাদ্দ হয় ৬ লক্ষের বেশি টাকা। কিন্তু বাড়ি তৈরির জন্য জায়গা না থাকায় ওই টাকা কাজে লাগাতে পারছিলেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। সমস্যার কথা শুনে এগিয়ে আসেন মোজাহারুল হকের ছেলে ব্রাহ্মণখণ্ড বাসাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারি প্রধান শিক্ষক সৈয়দ সফিকুল হক। তিনি ওই স্কুলের জন্য প্রায় তিন শতক জমি দান করেন।
ওই জমি পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রয়োজনীয় জায়গার অভাবে স্কুলঘর তৈরির জন্য টাকা কাজে লাগাতে পারছিলাম না। সফিকুল সাহেব সেই জায়গা দান করে আমাদের চিন্তামুক্ত করেছেন। না হলে টাকা ফিরিয়ে দিতে হত।” সফিকুল সাহেবের কথায়, “বাপ-ঠাকুরদা স্কুলের জন্য জমি দিয়েছিলেন। তাই যখন শুনলাম জমির অভাবে বরাদ্দ টাকা কাজে লাগানো যাচ্ছে না তখন আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারিনি।”
শুধু ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সময় হক পরিবারের দান করা জমিতে গড়ে উঠেছে রোহিনীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থানীয় পোস্টঅফিস, স্কুল পরিদর্শকের কার্যালয়, সমবায় সমিতি-সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ব্রাহ্মণখণ্ডের মীর আতাউর রহমান, ক্ষিরোদ ঘোষ, জটাধারী ধীবররা বলেন, “বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য হক পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য।” |