বেড়াল হটিয়ে এখন ধেড়ে ইঁদুরে নাকাল বিমানবন্দর
গে ছিল বেড়াল। এখন ইঁদুর!
কলকাতা বিমানবন্দরে এক সময় বেড়ালের উৎপাতে নাভিশ্বাস উঠেছিল যাত্রীদের। এই নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আসতে থাকায় আসরে নামেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অবশেষে বিমানবন্দর বেড়ালমুক্ত হয়। কিন্তু যাত্রীদের নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইঁদুর। বিমানবন্দরের শুল্ক দফতরের এক অফিসারের আক্ষেপ, “বেড়াল থাকলে আজ আর ইঁদুরের উপদ্রব সহ্য করতে হত না!”
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যেখানে বাইরে থেকে এসে যাত্রীরা কলকাতায় ঢোকেন, সেখানে শুল্ক দফতরের এলাকার মধ্যে রয়েছে বিশাল এক ঘর। সময় মতো যাত্রীদের ব্যাগ না এসে পৌঁছলে শুল্ক দফতরের ওই ঘরেই ঠাঁই হয় সেই ব্যাগের। পরে, খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট যাত্রী এসে নিয়ে যান সেই ব্যাগ। সম্প্রতি চিন থেকে বেড়িয়ে কলকাতায় ফিরেছেন পেশায় ব্যবসায়ী গৌতম দাস। সময় মতো তাঁরও ব্যাগ এসে পৌঁছয়নি। দিন পাঁচেক পরে ব্যাগ আসার খবর পেয়ে বিমানবন্দরে গিয়ে তিনি দেখেন, ইঁদুরের দল সেটি ছিঁড়ে ফর্দাফাই করে দিয়েছে। গৌতমবাবুর কথায়, “এখন ওটাকে আর ব্যাগ বলে চেনাই যাচ্ছে না। ভিতরে জামাকাপড় তো ছিলই, বিদেশ থেকে আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য যা উপহার এনেছিলাম, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। এর জন্য কেউ কোনও ক্ষতিপূরণও দেয়নি।’’
২০ অক্টোবর গৌতমবাবু ‘চায়না ইস্টার্ন’ বিমান সংস্থার উড়ানে কলকাতায় ফেরেন। আত্মীয়-বন্ধু মিলিয়ে দলে ছিলেন ১৩ জন। এঁদের মধ্যে পাঁচ জনের একটি করে ব্যাগ এসে পৌঁছয়নি।
চিত্রণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
২২ তারিখ তাঁদের বিমানবন্দরে ডেকে পাঠানো হয়। হুগলির রিষড়া থেকে সে দিন বিমানবন্দরে পৌঁছে ওই ঘরে ঢুকে রুমাল দিয়ে নাক ঢেকে ফেলেন তাঁরা। গৌতমবাবু বলেন, “বোঝাতে পারব না, কী প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ঘরটা জুড়ে। বমি এসে যাওয়ার মতো অবস্থা। ঘর ভর্তি বিভিন্ন আকারের ব্যাগ। বেশির ভাগই পুঁটলির মতো।” গন্ধমাদন পর্বত থেকে বিশল্যকরণী খোঁজার মতো চেষ্টা করেও সেখান থেকে নিজের ব্যাগ খুঁজে পাননি গৌতমবাবু। বাড়ি ফিরে আসেন। বাকি চার জন অবশ্য তাঁদের ব্যাগ ফিরে পান। সেই ব্যাগগুলির বিশেষ কোনও ক্ষতিও হয়নি।
এর পর ২৫ তারিখ ফের বিমানবন্দরে পৌঁছে সেই দুর্গন্ধযুক্ত ঘরে যান গৌতমবাবু। এ বার অনেক খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার করেন তাঁর ব্যাগটি। গৌতমবাবুর কথায়, “হয়তো আগের দিনও দেখেছি, কিন্তু চিনতে পারিনি। আমরা যখন ঘরে ব্যাগ খুঁজছি, তখনও বিশাল বিশাল ইঁদুর দৌড়োদৌড়ি করছিল।”
ঘরের আসল মালিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অন্যান্য ঘরের সঙ্গে ওই ঘরটিও ভাড়া নিয়েছে শুল্ক দফতর। ফলে কর্তৃপক্ষের এক অফিসারের প্রশ্ন, “ভাড়াটের ঘর কী বাড়িওয়ালার পরিষ্কার রাখার কথা? আমরা লাউঞ্জ পরিষ্কার রাখি। বাথরুম পরিষ্কার রাখি। কিন্তু শুল্ক দফতরের যে ঘর তালা মারা থাকে, যেখানে যাত্রীদের ব্যাগ ও দামি জিনিসপত্র থাকে, সেখানে ঢুকে আমরা কী করে পরিষ্কার করব?”
শুল্ক দফতরের কমিশনার গুরদীপ সিংহ বলেন, “ইদানীং বিমানের প্রচুর ব্যাগ এসে প্রতিদিন জমা হচ্ছে। এই ব্যাগগুলিতে প্রচুর খাবারও থাকে। ফলে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। এর আগে দু’বার ইঁদুর মারা হয়েছে। কিন্তু আবার ফিরে এসেছে ইঁদুরের দল।” এই পাহাড়প্রমাণ ব্যাগপত্র না সরালে এ বার ইঁদুর মারা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন গুরদীপ সিংহ। তাঁর যুক্তি, ঘরে কীটনাশক ছড়ালে ব্যাগে রাখা খাবার নষ্ট হতে পারে। তার দায়ও তখন শুল্ক দফতরের ঘাড়ে এসে পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে ঘরের হাল ফিরবে কী করে, তার সদুত্তর নেই কারও কাছেই।
তাতে অবশ্য কপাল খুলেছে খুদে দস্যুদের। এক দিকে ঘরভর্তি খাবার, অন্য দিকে বেড়ালমুক্ত বিমানবন্দর। ধেড়ে ইঁদুরদের আর পায় কে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.