‘কভি খুশি কভি গম’ নাকি ‘চক দে ইন্ডিয়া’!
এই ‘উইক এন্ড’টা কোন মেজাজে কাটাবেন বলিউড সুপারস্টার? তাঁর নিজের দু’টি ছবির নামের ভিতরেই কি লুকিয়ে আছে উত্তরটা?
বহু-প্রতীক্ষিত দেড়শো কোটি টাকা বাজেটের ‘রা ওয়ান’ নিয়ে উন্মাদনা তো প্রথম দু’দিনেই টের পাওয়া গিয়েছে। তা হলে সপ্তাহ শেষে শাহরুখের খোশমেজাজে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন?
কারণ ‘রা ওয়ান’ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। দীপাবলির দিন মুক্তির পরে গত তিন দিনে যে ভাবে হলমুখী হতে দেখা গিয়েছে শাহরুখ খানের ভক্তকুলকে, তাতে প্রাথমিক ভাবে কোনও সন্দেহ নেই যে ‘জি ওয়ান’কে তাঁরা এ বারও হতাশ করেননি। শাহরুখ শিবির তথা রেড চিলিজের দাবি, দেড়শো কোটির ‘রা ওয়ান’ এই তিন দিনে যথাক্রমে ১৮ কোটি, ২৫ কোটি এবং ১৪ কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে। অর্থাৎ মোট ৫৭ কোটি।
শাহরুখের জন্য দীপাবলির দিনটা অবশ্য বরাবরই পয়া। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ বা ‘ওম শান্তি ওম’ উৎসবের এই মরসুম তাঁকে ‘হিট’ ছবি দিতে কার্পণ্য করেনি। ‘রা ওয়ান’-এও বাবা-ছেলের গপ্পো, সুপারহিরো বনাম ‘ভয়াল’ খলনায়ক, সঙ্গে ঝকঝকে করিনা কপূরের ‘ছম্মক ছল্লো’ উপস্থিতি এর মধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে সব বয়সের দর্শকের মনে। ‘সবার সঙ্গে দেখার মতো ভরপুর বিনোদনমূলক ছবি’ ‘রা ওয়ান’ দেখে বেরিয়ে আসা দর্শকরা একবাক্যে এটা মেনেই নিচ্ছেন। তা ছাড়া, ‘রা ওয়ান’-এর পাশাপাশি খুব বড় ব্যানারের কোনও ছবিও ওই সময় মুক্তি পায়নি। ফলে পালে একলাই হাওয়া কাড়তে পেরেছেন শাহরুখ। |
তবু এই হইচইয়ের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রির পোড় খাওয়া মাথা এবং বিপণন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মনে উঁকি দিচ্ছে একটা প্রশ্ন। দেড়শো কোটি টাকার এলাহি আয়োজন ঠিক কতটা সফল? সলমন খানের ‘বডিগার্ড’ এবং আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’কে পিছনে ফেলে সত্যিই কি নতুন রেকর্ড তৈরি করতে পারবে শাহরুখের ‘রা ওয়ান’? এখানেই দ্বিধাবিভক্ত শাহরুখের ভক্তকুল এবং ফিল্ম বিশেষজ্ঞদের একটা অংশ।
যেমন, বক্স অফিস নিয়ে শাহরুখ-শিবিরের দেওয়া পরিসংখ্যান মিলছে না পরিবেশ-প্রযোজকদের একাংশের দেওয়া অঙ্কের সঙ্গে। বিপণন বিশ্লেষকদের একাংশ সেই অঙ্ক উল্লেখ করে জানাচ্ছেন, গত তিন দিনে ‘রা ওয়ান’-এর সংগ্রহ যথাক্রমে ১৪ কোটি, ২১ কোটি এবং ১০ কোটি টাকা। সব মিলে ৪৫ কোটি টাকা। তবে এখন তো শুধু বক্স অফিসের উপর ছবির বাজার নির্ভর করে না। অন্য মাধ্যমগুলো, অর্থাৎ স্যাটেলাইট (৩৭ কোটি), ডিজিট্যাল মিডিয়া (৮ কোটি), সঙ্গীতের সত্ব বিক্রি (১০ কোটি), গান প্রকাশ অনুষ্ঠানের সত্ব বিক্রি (১৫ কোটি), ছবি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক প্রচার (৮ কোটি) থেকে ইতিমধ্যেই ভাল টাকা উঠেছে। তাই সব মিলিয়ে অন্তত ১৩০-১৩৫ কোটি টাকা জমা হয়েই গিয়েছে ‘রা ওয়ান’-এর ঝুলিতে। এই ১৩০-১৩৫ কোটির মধ্যে অন্তত ৮-১০ কোটি তুলে দিয়েছে ‘রা ওয়ান’-এর তামিল, তেলুগু, কন্নড় রূপান্তর। দেড়শো কোটির মধ্যে মোটামুটি চোখে পড়ার মতো অর্থ তা হলে উঠেই গিয়েছে বলা যায়। তবু বিপণন বিশ্লেষকদের একাংশ কেন ভাবছেন যে, সলমনের ‘বডিগার্ড’ এবং আমিরের ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর মতো বিপুল ব্যবসা করতে পারবে না ‘রা ওয়ান’?
তাঁদের মতে, দু’টো বিষয় রয়েছে। প্রথমত, মুক্তির পাঁচ দিনের মাথায় ৮৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল ‘বডিগার্ড’। সেখানে প্রযোজক-পরিবেশকদের একাংশের দেওয়া তথ্য অনুসারে বিপণন বিশ্লেষকদের অনেকের দাবি, দীপাবলির পর থেকে তিন দিনে ৪৫ কোটি টাকা তুলেছে ‘রা ওয়ান’। আর রেড চিলিজের হিসেবে ওটাই দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটিতে। দু’টো অঙ্কই কিন্তু ‘বডিগার্ড’-এর চেয়ে অনেকটা কম। এখন শনি-রবিবারের বিক্রিবাটায় ‘বডিগার্ড’-এর ৮৫ কোটির অঙ্কটা কি ‘রা ওয়ান’-এর পক্ষে ছোঁয়া সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকদের ওই অংশ।
দ্বিতীয়ত, আমিরের ‘থ্রি ইডিয়টস’ মোট ১৮৯ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। এখনও পর্যন্ত শাহরুখের ‘রা ওয়ান’ নিয়ে যতটা ‘মাতামাতি’ হয়েছে, তাতে সিনে-বিশেষজ্ঞদের কারও কারও অনুমান, ‘থ্রি ইডিয়টস’কে পেরিয়ে যাওয়া ‘রা ওয়ান’-এর পক্ষে একটু কঠিন হবে।
কিছুটা সে রকম ইঙ্গিত অবশ্য পাওয়া গেল কলকাতায় প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্তর কথায়। বললেন, “মুক্তির দিন ভালই সাড়া ফেলেছিল ‘রা ওয়ান’। কিন্তু শুক্রবার থেকে ভিড় কমতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে প্রিয়ায় আমরা থ্রি-ডি আনছি। আশা করি তাতে লাভ হবে। তবে ‘বডিগার্ড’ বা ‘থ্রি ইডিয়টস’কে হারানো শক্ত।” একই সুর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাল্টিপ্লেক্স কর্তার গলায়, “কলকাতায় ‘রা ওয়ান’-এর প্রথম দিনের সংগ্রহ ১ কোটি ১৫ লক্ষ। দ্বিতীয় দিনে যেটা ছিল ১ কোটি ৫ লক্ষ। কিন্তু তৃতীয় দিনে অঙ্কটা দুম করে নেমে গেল মাত্র ৮৭ লক্ষে! ‘বডিগার্ড’-এর ক্ষেত্রে অঙ্কটা কিন্তু কখনওই নামেনি।” শাহরুখ ভক্তরা অবশ্য এই সব ‘নিন্দামন্দে’ কান দিচ্ছেন না। তাঁদের সাফ কথা: ‘রা ওয়ান’ নিজের ছন্দে চলতে শুরু করলে ‘বডিগার্ড’ বা ‘থ্রি ইডিয়টস’ নিয়ে যে সব অঙ্ক তুলে ধরা হচ্ছে, সেগুলো অর্থহীন হয়ে যাবে।” শাহরুখ ঘনিষ্ঠদের মধ্যে এক জনের দাবি, “ভারতে ‘রা ওয়ান’-এর ব্যবসা সব চেয়ে তাক লাগিয়ে দেবে।”
এই বিতর্কের মধ্যে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে। বলিউডের ‘খান’রা ছবি মুক্তির সময় হিসেবে বেছে নিচ্ছেন উৎসবের মরসুমকেই। ইদের সময় এসেছিল ‘বডিগার্ড’। বড়দিনে মুক্তি পেয়েছিল ‘থ্রি ইডিয়টস’। আর এ বার দীপাবলিতে এল ‘রা ওয়ান’। দর্শক টানতে কাজে লাগানো হচ্ছে উৎসবে ভিড়টা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, দীপাবলিতে মুক্তি পেলেও এই ‘ফ্যাক্টর’ রা ওয়ান-এর ক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি।
বর্ষীয়ান এক পরিচালক জানালেন, “ইদে সন্ধের খাওয়াদাওয়া সেরে দর্শকরা সোজা হলমুখী হতে পারেন। বড়দিনেও সব সময় একটা জমজমাট মেজাজ থাকে। কেউই সিনেমা দেখতে পেলে আর কিছু চান না। কিন্তু দীপাবলির রাতে ভারতীয়রা বাড়িতে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। একই রকম হয় ভাঁইফোঁটার দিনেও। এই দু’দিনের হিসেবেই ‘রা ওয়ান’ হেরে গিয়েছে ‘বডিগার্ড’-এর কাছে। বলিউডের কাছে এটা বড় শিক্ষা।”
শাহরুখের ‘রা ওয়ান’ বক্স অফিসে আপাতত সাড়া জাগালেও সমালোচক-বিশেষজ্ঞদের অনেকের কিন্তু মনে হচ্ছে, আমির বা সলমনের ছবিগুলি অনেক ‘নিরাপদ’ ছিল। তাঁদের মধ্যে কারও কারও সংশয়, ‘স্পেশ্যাল এফেক্ট’-এর দৌলতেই না শেষে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে ‘রা ওয়ান’! |