সূর্যোদয়ের ভাইফোঁটা
রা কেউ-ই কথা বলতে ও শুনতে পায় না। ওদের কারও অভিভাবক নেই। সারা বছর ওরা চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকে। এ রকমই ৭৭ জন মূক ও বধির কিশোর-কিশোরীকে ভাইভোঁটার আনন্দে সামিল করতে অভিনব উদ্যোগী হয়েছিলেন রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ার সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোম কর্তৃপক্ষ। এ দিন হোম কর্তৃপক্ষ মূক ও বধির আবাসিকদের জন্য ভাইফোঁটার আয়োজন করেন। পাশাপাশি, দুপুরে বিশেষ খাওয়াদাওয়ারও ব্যবস্থা করেন। হোম কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে এ দিন সকালে মূক ও বধির আবাসিকরা ভাইফোঁটার পর দিনভর হোম চত্বরে আতসবাজি ফাটিয়ে খেলাধূলা ও হইহুল্লোড়ে মেতে ছিল। সময়মতো খেতে বসা, পড়াশোনা করা বা ঘুমোতে যাওয়ার কোনও কড়াকড়ি নির্দেশ ছিল না এ দিন। হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথী দাস বলেন, “হোমের মূক ও বধির আবাসিকদের অভিভাবক নেই। সারা বছর ওরা হোমের তার দেওয়ালে আটকে থাকায় একঘেয়েমি জীবনযাত্রা ও হতাশার শিকার হয়। তাই আবাসিকদের ভাইফোঁটার আনন্দে সামিল করতেই এ দিন এমন উদ্যোগ নেওয়া। হোমের নিজস্ব তহবিল থেকেই সমস্ত খরচ করা হয়েছে।”
সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীনস্থ সূযোর্দয় মূক ও বধির আবাসিক হোমে ৭৭ জন মূক ও বধির আবাসিক রয়েছে। এদের প্রত্যেকেরই বয়স ৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ৪৪ জন কিশোর ও ৩৩ জন কিশোরী হোমে ঠাঁই হয়েছে। সেখানে আবাসিকদের থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা ও খেলাধূলা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। আবাসিকদের জন্য পৃথক দুটি হস্টেল রয়েছে। হোম কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এ দিন সকালে ভাইফোঁটা উপলক্ষে মূক ও বধির আবাসিক কিশোরীরা হোমের অফিস ঘরের বারান্দায় আল্পনা দেয়। এর পর তারা মাঠে গিয়ে দুর্বা তুলে আনে। হোম কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ততক্ষণে বারান্দায় সার দিয়ে বসে গিয়েছে মূক ও বধির আবাসিক কিশোররা।
ভাইফোঁটা উপলক্ষে এ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে। সমস্ত আবাসিকই স্নান করে হোমের তরফে পুজোয় দেওয়া নতুন পোশাক পড়ে ভাইফোঁটায় সামিল হয়েছিল। মূক ও বধির কিশোরীরা এ দিন মূক ও বধির কিশোরদের কপালে চন্দন, দই, কাজল ও হলুদের ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা পালন করে। ভাইদের মাথায় ধান ও দুর্বা ছড়িয়ে প্রদীপ ও ধূপকাঠি নাড়িয়ে মঙ্গল কামনা করে বোনেরা। এর পর বোনেরা ভাইদের ও ভাইয়েরা বোনেদের দই, মিষ্টি খাইয়ে দেয়। ভাইফোঁটার পর মূক ও বধির আবাসিকরা দিনভর আতসবাজি ফাটিয়ে খেলাধূলা ও হইহুল্লোড়ে মেতে ছিল। এ দিন দুপুরে ও রাতে হোম কর্তৃপক্ষ আবাসিকদের পোলাও, মাছ, মাংস, ডাল, সব্জি, ও মিষ্টি ও চাটনি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। পার্থবাবু বলেন, “অভিভাবকহীন মূক ও বধির আবাসিকদের এ দিন আনন্দে মেতে উঠতে দেখে হোমের শিক্ষকদের অনেকেরই চোখে জল এসে যায়। আবাসিকদের আনন্দে রাখাটাই আমাদের প্রধান কর্তব্য।
এ দিন দুপুরে রায়গঞ্জের শিশু সদন কর্তৃপক্ষ অনাথ আবাসিক কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ভাইফোঁটার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। তার আগে এ দিন সকালে রায়গঞ্জের সোহারই মধুপুর এলাকায় একটি বেসরকারি প্রাইভেট টিউশন কোচিং সেন্টারের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০ জন পড়ুয়া নিজেদের মধ্যে ভাইফোঁটা পালন করেন। অনুষ্ঠানে ফোঁটা নেন উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.