উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরাতে নতুন উদ্যোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কোথাও ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। কোথাও আবার খসে পড়ছে চাঙড়। পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনই জীর্ণ। যথাসময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি খোলা হয় না বলেও অভিযোগ। এই সব ‘রোগ’ সারিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে পুরোদমে সচল করতে তৎপর হয়েছে রাজ্যের নতুন সরকার। প্রথমেই জোর দেওয়া হচ্ছে কর্মী-সমস্যা সমাধানে। ইতিমধ্যেই জেলায় ৪৮ জন নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৬ জন জঙ্গলমহলে কাজ করবেন। জেলার মুখ্য-স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কর্মী-সঙ্কটে অনেক জায়গাতেই পরিষেবা ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ। নতুন করে ৪৮ জন নার্স নিযুক্ত হওয়ায় কাজের কিছুটা সুবিধে হবে।”
জেলায় মোট ৮৫৮টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য গ্রামের মানুষের ভরসা এই কেন্দ্রগুলিই। সামান্য জ্বর-সর্দি-কাশি থেকে অন্তঃসত্ত্বা অসুস্থ হলেও এখানেই নিয়ে আসা হয়। রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে কর্তব্যরত নার্সরা তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন কিংবা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বলেন। রবিবার বাদে সপ্তাহের বাকি ছ’দিনই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকার কথা। কিন্তু, অনেক এলাকাতেই সময়মতো এই কেন্দ্রগুলি খোলে না বলে অভিযোগ। ফলে, দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য কর্মী-সঙ্কটকেই দুষছেন। এক স্বাস্থ্য অধিকারিকের কথায়, “পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ এড়াতে গেলে প্রথমেই দরকার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো। তা না-হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিষেবা দেবেনই বা কী করে? দীর্ঘদিন ধরেই জেলার একাংশে গ্রামীণ স্বাস্থ্য-পরিষেবা কার্যত ধুঁকছে। পরিস্থিতি পাল্টানোর উদ্যোগ নামমাত্র!” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সবক’টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র সচল রাখতে হলে আরও অন্তত ১৮ জন নার্স প্রয়োজন। সম্প্রতি জেলায় যে ৪৮ জন নার্স নিয়োগ হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জঙ্গলমহলের শালবনিতে ২, বেলপাহাড়িতে ১, গোপীবল্লভপুর-১’এ ৩, চিল্কিগড়ে ৩, খড়িকামাথানিতে ৭, কেয়াকোনে ৩, ভাঙাগড়ে ২, তপসিয়ায় ৫ জন নিযুক্ত হবেন। তবে, তাঁরা সবাই এখনও কাজে যোগ দেননি। কয়েক জন আবার অন্যত্র কাজে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ‘অস্থির পরিস্থিতি’র প্রশ্ন তুলেছেন। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “প্রত্যেককেই অবশ্য জানানো হয়েছে, এ ক্ষেত্রে কিছু করণীয় নেই। সংশ্লিষ্ট এলাকাতেই কাজে যোগ দিতে হবে। জোর-জুলুম হলে বিএমওএইচ তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন।” পাশাপাশি, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মানোন্নয়নেও নতুন সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি। কোন কেন্দ্রের কী পরিস্থিতি, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। কোথায় কত কর্মী প্রয়োজন, তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোও হয়েছে। জেলার মুখ্য-স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।” |