এক দিনে মৃত ১২
বর্ধমান মেডিক্যালে শিশুমৃত্যু ‘স্বাভাবিক’, মত স্বাস্থ্যকর্তাদের
মাত্র এক দিনে মারা গিয়েছে ১২টি শিশু। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই শিশুমৃত্যুর ঘটনা আদৌ তেমন ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছে না রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। বরং ‘সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচার’ বলেই কোনও কোনও কর্তা বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করছেন।
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতি রাত পর্যন্ত বর্ধমান মেডিক্যালের শিশু বিভাগে পেডিয়াট্রিক ও নার্সারি ওয়ার্ডে একের পর এক শিশুর মৃত্যু হয়। পেডিয়াট্রিকে সাতটি এবং নার্সারি ওয়ার্ডে মারা যায় পাঁচটি শিশু। এর মধ্যে ছ’টির বয়স ১ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে। পাঁচটি সদ্যোজাত, বয়স ১ থেকে ৬ ঘণ্টা। একটির বয়স প্রায় ১০ মাস। চারটি শিশু অন্য হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছিল। বাকি আটটির জন্ম মেডিক্যালেই।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শুক্রবারই রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বাস্থ্য কমিশনার দিলীপ ঘোষ হাসপাতালে পরিস্থিতি দেখতে যান। তবে সুশান্তবাবুর মতে, “এই ঘটনা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। ৭০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুরা মারা যেতেই পারে।” এ দিন তাঁরা পৌঁছনোর আগেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শিশু বিভাগ সাফসুতরো করে ফেলা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্তেরাও যথাস্থানে হাজির। পরে সুশান্তবাবু বলেন, “আমি নিজে ওয়ার্ডে ঘুরে এসেছি। যাঁদের শিশু এখানে ভর্তি রয়েছে, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছি। সকলেই বলেছেন, ভাল চিকিৎসা হচ্ছে।” দিলীপবাবুরও বক্তব্য, “সবই ঘটেছে স্বাভাবিক ভাবে। সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচারেই আমাদের অহেতুক হয়রান হতে হচ্ছে।” হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “শিশুগুলি অধিকাংশই নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মেছিল। জন্ম থেকেই গুরুতর অসুস্থ ছিল।” তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে শিশুমৃত্যুর তিনটি কারণ জানা গিয়েছে। কয়েকটির জন্ডিস ছিল। দ্বিতীয়ত, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কম হচ্ছিল কয়েকটির। সে কারণে হৃদপিণ্ডেও যথেষ্ট অক্সিজেন যাচ্ছিল না, যার ফল ‘জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট’। যে পরিকাঠামোয় এই ধরনের অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা করা যায়, তা বর্ধমান মেডিক্যালে নেই। তৃতীয় কারণ সময়ের আগে জন্মানো ও অপুষ্টি। ভাতার থেকে আসা ১০ মাসের শিশুটিরও ওজন ছিল মাত্র ৬ কিলোগ্রাম। এনকেফেলাইটিসে তার মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।
বর্ধমান মেডিক্যাল সূত্রের খবর, সেখানে প্রতি দিন গড়ে তিন থেকে পাঁচটি শিশু মারা যায়। বস্তুত, সেই সংখ্যাটা এক লাফে তিন গুণ বেড়ে যাওয়াতেই পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোনও শিশুর পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ জানানো না হলেও কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছেন। হাসপাতালে গিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনাও। হাসপাতাল সুপার গদাধর মিত্র বলেন, “দু’টি বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। এক, পরিকাঠামোর কোনও ত্রুটি ছিল কি না। দুই, হাসপাতালে উপস্থিত চিকিৎসক বা নার্সেরা গাফিলতি করেছেন কি না।” কালীপুজোর রাতে যাঁরা ‘গরহাজির’ ছিলেন, তাঁদের ‘ভূমিকা’ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সুপার বলেন, “সেটাও আমরা তদন্ত করে দেখব।”
শিশুমৃত্যুর ঘটনায় ‘অস্বাভাবিক’ কিছু না দেখলেও শিশু বিভাগে স্থান সংকুলানের সমস্যা নিয়ে কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তারা উদ্বিগ্ন। সুশান্তবাবু বলেন, “শিশুবিভাগে মোট ৬০টি শয্যা। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সেখানেই ১৫১টি শিশু ভর্তি ছিল।” স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “মুশকিল হল, অনেকেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বদলে শিশুকে সরাসরি বড় হাসপাতালে নিয়ে চলে আসছেন। সে কারণেই ভিড়ের চাপে পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে। পরিকাঠামোর উন্নতি না ঘটলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো যাবে না। বড় হাসপাতালের উপরে চাপও কমবে না। স্বাস্থ্য দফতর সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।” নভেম্বরের মধ্যে বর্ধমান মেডিক্যালে ১৯০ শয্যার শিশুবিভাগ চালু হবে বলেও সুশান্তবাবু আশ্বাস দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.