|
খেলাধুলা... |
|
|
ককপিটে থাকা বিশ্বজয়ী চোখগুলো খেয়াল করুন |
রেস দেখতে বসার আগে জেনে নিন কী দেখবেন, কেন দেখবেন, আর কী-ই বা মাথায় রাখবেন।
বলে দিচ্ছেন ভারতের অন্যতম সফল র্যালি এবং রেস চালক দেবর্ষি সাধন বসু
|
আগামী কাল টিভিতে কী দেখব? |
ফর্মুলা ওয়ান ভারতীয় দর্শকরা টিভিতে দেখছেন সেই ১৯৯৩ সাল থেকে। যদি এত দিন সে ভাবে না দেখে থাকেন, তা হলে কয়েকটা জিনিস খেয়াল রাখুন। রেসের দিন টেলিকাস্ট শুরু হবে রেস শুরুর অনেক আগে। রেসের ধারাবিবরণী দেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথাবার্তা থেকে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। আজ কোয়ালিফাইং রাউন্ড। মিস করলে আগামী কাল রেসের আগে ঝলক দেখতে পাবেন।
ফর্মুলা ওয়ান গাড়ির নাড়িনক্ষত্র দেখানো হবে। সেটা থেকেও অনেক কিছু বুঝবেন। ড্রাইভারদের মতামত শুনবেন। তার সঙ্গে জানবেন এফ-ওয়ান নামক রূপকথার হালের নানা খবর, গল্প। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হল গ্যারাজের ভেতরে রেসের জন্য তৈরি হওয়ার দৃশ্য।
এমনিতে মনে হবে একই ট্র্যাকে গাড়িগুলো বাঁই বাঁই করে ঘুরছে তো ঘুরছেই। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন আসল মজাটা কোথায়। রেস শুরুর আগে গাড়িগুলোর চাকায় জামা পরানো থাকে। চাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এই জামার প্রয়োজন। রেস শুরুর ঠিক আগে সেগুলোকে খোলার দৃশ্য দেখার মতো। তার পাশাপাশি দেখতে হবে ড্রাইভারদের কনসেনট্রেশনের বহর। চোখগুলোর দিকে লক্ষ রাখুন। বুঝবেন বিশ্বজয়ী হওয়ার রোখ কাকে বলে। লাল আলো যেই সবুজ হবে দেখবেন গাড়িগুলো কী ভাবে প্রথম বাঁকে পৌঁছয়। রেসের অন্যতম উত্তেজনার মুহূর্ত এটা।
যে কোনও এফ-ওয়ান গাড়ির পেছনে একটা ডানার মতো অংশ থাকে। সেটা খোলা-বন্ধ করা যায়। রেসের সময় সামনের গাড়ির সঙ্গে দূরত্ব কমানোর জন্য পেছনের গাড়ির ড্রাইভার হঠাৎ করে গাড়ির ডানা খুলে দেন। এফ-ওয়ান গাড়িগুলো পুরোপুরি এরোডাইনামিক্সের ওপর ভিত্তি করে চলে। ছুটন্ত যে কোনও গাড়ির পেছনে তাই একটা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়। পেছনের গাড়ি ডানা খুলে এই ভ্যাকুয়ামের মধ্যে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। এটাকে বলে ড্র্যাগ রিডাকশন সিস্টেম বা ডিআরএস। আর মুহূর্তের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে ফেলে। এর পরই সামনের গাড়িকে ওভারটেক করবে পেছনের গাড়ি। কিন্তু এই ওভারটেক নেহাত রাস্তায় গাড়ি চালাবার মতো ওভারটেক নয়। ২৩০ কি.মি প্রতি ঘণ্টায় চলতে চলতে গাড়ি না উল্টে ওভারটেক করা একটা দেখার মতো জিনিস। ২৩০ কি.মি গড় স্পিড থেকে ৩২০ কি.মি প্রতি ঘন্টায় টপ স্পিডে পৌঁছনোটাও দেখার মতো। ট্র্যাকের তিন এবং চার নম্বর বাঁকে সবচেয়ে বেশি স্পিড নেয় গাড়িগুলো। যাঁরা আগে পিএস-২ ফর্মুলা ওয়ান গেমটা কম্পিউটারে খেলেছেন, তাঁরা আসল রেসের সঙ্গে খেলার গ্রাফিক্সের তুলনা করতে পারেন।
রেসের মধ্যেই চাকা পাল্টানো হয়। যেখানে থামে গাড়িগুলো, সেটাকে বলা হয় পিট স্টপ। পিট স্টপে থামার সময় গাড়ির ক্রমসংখ্যা পাল্টে যায়। সেটা খেয়াল রাখুন।
|
কেন দেখব? |
এফ-ওয়ান ব্যাপারটা কী, তা বুঝতে রেসের মাঠে দেখার থেকে টিভিতে দেখা অনেক সুবিধের। কে আগে যাচ্ছে, কে পিছিয়ে পড়ছে, তা প্রতি মুহূর্তে টিভিতে দেওয়া হয়। খুঁটিনাটি নানা জিনিস বিশেষজ্ঞরা কমেন্ট্রিতে বলে দেন। এফ-ওয়ান বিশ্বের মাদকতা কী সেটা রেস চলাকালীন টিভিতে দেখতে পাবেন। আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিরা ট্র্যাকের আশেপাশে। চেনা সেলিব্রিটিদেরও দেখবেন। সচিন তেন্ডুলকরকে তো এফ-ওয়ান-এর পক্ষ থেকে সরকারি নেমন্তন্ন জানানো হয়েছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও থাকবেন ‘ভার্জিন রেসিং’-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে। শাহরুখ খানও থাকবেন। এক কথায় সেলিব্রিটিদের ছড়াছড়ি থাকবে বুদ্ধ সার্কিটে।
গাড়িগুলি তৈরি হয় কার্বন ফাইবার দিয়ে। মানুষ এবং মেশিনের মেলবন্ধন, একজন মানুষের ফিটনেস কোন পর্যয়ে পৌঁছতে পারে, সেটাও দেখার মতো এখানে। সেকেন্ডের হেরফেরে এখানে বিরাট ফারাক তৈরি হতে পারে। তাই শুধু গাড়ি চালালেই হয় না, বিদ্যুৎগতির সঙ্গে তাল রেখে নিতে হয় স্ট্র্যাটেজির সিদ্ধান্ত। এবং সে সময় গাড়ির ককপিটে একজনই থাকেনযিনি গাড়িটা চালাচ্ছেন।
|
গ্যালারিতে না থাকলে কী হারাব? |
থ্রিল। সবচেয়ে দামি হোম থিয়েটারও ফর্মুলা ওয়ানের দানবীয় ইঞ্জিনগুলোর আওয়াজ আপনার ড্রইংরুমে এনে দিতে পারবে না। পারবে না ট্র্যাকের ওপর টায়ারের আঘাতে রবার পোড়ার গন্ধ পৌঁছে দিতে। এবং কার্নিভালের মতো আবহাওয়ায় বসে গতির লড়াই দেখার অভিজ্ঞতাটা তো মিস করবেনই। নাচগান, খাওয়া দাওয়া, সব ক’টা টিম নিজেদের মার্চেন্ডাইস বিক্রি করছেএ সব তো আর বাড়ি বসে পাবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি যদি ‘পিট পাস’ জোগাড় করতে পারেন, তা হলে ড্রাইভার আর তাঁর টিমের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ আসবে একমাত্র ট্র্যাকে থাকলেই। অবশ্য ‘পিট-পাস’ আর ‘গ্যালারি পাস’ সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।
|
এফ-ওয়ান ড্রাইভাররা ক্রিকেটার, ফুটবলারদের থেকেও বেশি ফিট |
এফ-ওয়ান গাড়ি যাঁরা চালান, তাঁদের ১০০ শতাংশেরও বেশি ফিট থাকতে হয়। ২৩০ কিমি ঘণ্টায় গাড়ি চালানোর সময়ে ট্র্যাকের প্রত্যেক বাঁকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পাঁচগুণ ওজন তাঁদের শিরদাঁড়া আর ঘাড়ের ওপর পড়ে। সেটার সঙ্গে ক্লান্তিহীনভাবে দু’ঘণ্টা বোঝাপড়া করা মুখের কথা নয়। ক্রিকেটার বা ফুটবলারদের সঙ্গে এখানেই এফ-ওয়ান ড্রাইভারদের পার্থক্য। একজন ক্রিকেটার প্রত্যেক বলের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড বিশ্রাম পান। ফুটবলে টিমের সবাই একই সময়ে বলের পেছনে ছোটেন না। এফ-ওয়ান ড্রাইভাররা সে জায়াগায় ‘পিট স্টপে’ থামার ওই পাঁচ-ছ’ সেকেন্ডের বেশি বিশ্রাম পান না। তারপর আছে গাড়ির ভেতরের প্রচণ্ড গরম। এই সবের মধ্যে মনঃসংযোগ করে গাড়ি চালাতে হয় তাঁদের, কারণ একটা ভুল বোতামে চাপ মানে জীবন-মৃত্যুর ফারাক। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি বা টেনিস, সব খেলাতেই ক্ষমা আছে। এফ-ওয়ানে কোনও ক্ষমা নেই।
তাই এফ-ওয়ান ড্রাইভাররা প্রচণ্ড পরিমিত জীবনযাপন করেন। বছরে ১১ মাস কাজ করেন। খাওয়াদাওয়া, ঘুমসব কিছু বিশেষজ্ঞ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সারা বছর। দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হয়। রেসের তিন দিনে একজন ড্রাইভারের ওজন চার থেকে পাঁচ কেজি কমে যায়। মাইকেল শু্যমাখার ৪৩ বছর বয়েসেও সার্কিটে সবচেয়ে ফিট ড্রাইভার।
|
এফ-ওয়ানের টুকরো-টাকরা |
একটা এফ-ওয়ান টিম চালাতে বছরে খরচ ১২০ মিলিয়ন ডলার থেকে ৪৮০ মিলিয়ন ডলার। ৩০০ থেকে ৩৫০ জন একটা টিমে কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে রাঁধুনি থেকে মার্কেটিং ম্যানেজার, ইঞ্জিনিয়র থেকে স্ট্র্যাটেজিস্টসবাই থাকেন। বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল মেশিনগুলো কোনও মেশিন বানায় না। ফর্মুলা-ওয়ান গাড়ির প্রত্যেকটা অংশ হাতে বানানো হয়। তৈরিতে সামান্যতম ত্রুটিও বিরাট ক্ষতি করে দিতে পারে রেসের সময়ে।
বিশ্বে প্রথম মোটর র্যালিটা কিন্তু শুরু হয়েছিল কলকাতায়। ১৯০৫ সালে। ব্যারাকপুরে নাইট হল্ট করেছিল গাড়িগুলো।
|
লক্ষ রাখুন |
শু্যমাখারকে তো দেখবেনই। তা ছাড়া লক্ষ রাখতে হবে ল্যুইস হ্যামিলটন, সেবাস্টিয়ান ভেটেল, ফার্নান্দো আলোনসো, অলগু্যয়েসারি আর ব্রুনোর দিকে। আমি নিজে বহু দিনের বন্ধু করুণ চান্দোক এবং নারায়ণ কার্তিকেয়নের জন্য গলা ফাটাব। বলে রাখি, চান্দোকের লাইসেন্সটায় কলকাতার ঠিকানা দেওয়া আছে। ভারতের নিজের টিম ফোর্স ইন্ডিয়ার জন্যও গলা ফাটাব। আর লক্ষ
রাখব স্টেফানো দোমিনোচেল্লি,
রস ব্রন, ক্রিস্টোফার হর্নারদের ওপরও। ফেরারি, মার্সিডিজ, রেড বুল আর রেনল টিমের ওপরও
নজর থাকবে।
|
ট্র্যাকের খুঁটিনাটি |
• নাম: বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিট। ‘বুদ্ধ’ এখানে শান্তি ও স্বস্তির প্রতীক।
• তৈরি করেছেন: হারম্যান টাইক। ৫.১৪ কিমি লম্বা।
• খরচ: ১৭০০ কোটি টাকা। প্রতি ল্যাপ পেরোতে সময় লাগবে এক মিনিট ২৭.০২ সেকেন্ড।
• গড় গতি: ২১০.০৩ কিমি প্রতি ঘন্টায়। টপ স্পিড: ৩১৮ - ৩২০ কি.মি প্রতি ঘন্টায়, পৌঁছবে তিন এবং চার নম্বর বাঁকে। ১,১০,০০০ দর্শক বসতে পারেন। পরে ২,০০,০০০ জনের বসার জায়গা করা হবে। |
|