রাতভর ফেলে আসা পাঠশালায়
‘সহজপাঠের’ পাতা উল্টে ছেলেবেলাকে ফিরে দেখার খেলা! কারণ, খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় রাত জেগে অনেকে আওড়ালেন---‘তিনটে শালিক ঝগড়া করে রান্না ঘরের চালে’। কেউ ডুবে গেলেন ‘আজ মঙ্গলবার পাড়ার জঙ্গল সাফ করার দিনের’ পাঠে। ‘গুরুমশায়’ সেজে বড়দের যারা সহজপাঠ দিচ্ছেন তারা প্রত্যেকে খুদে। বয়স পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে। ময়নাগুড়ির উজ্জ্বলা শ্যমাপুজো মণ্ডপে ওই অভিনব পাঠশালা শুরু হয়েছে। চলবে আজ, শনিবার পর্যন্ত। পড়া যে নিছক মলাট বন্দি বিষয়কে জবরদস্তি গেলা নয় তা মঞ্চে তৈরি শখের পাঠশালায় দেখাল শিশুরা। খেলার ছলে পাঠের আসরে কত সহজে মগজে চালান হয়ে যায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের কুশিলবরা সেটাও হাতেকলমে শিখিয়ে দিল। খুদে গুরুমশায়দের আবেদনে বেশ সাড়া দিলেন বড়রা। স্মৃতির মরচে ঘসেমেজে নিতে অনুগত ছাত্রের মতো চুপটি দাঁড়িয়ে পুরো ক্লাস করে তবেই অন্য মণ্ডপে পা বাড়ালেন প্রত্যেকে। কেন মন টানবে না? অশুভ শক্তির সঙ্গে যুদ্ধরত মহাশক্তির দেবীকে দেখছেন এমন সময় ঝপাত করে আলো চলে যায়। দর্শনার্থীদের অবাক করে ফোকাসে উঠে আসে চলমান ‘সহজপাঠ’। বড় প্ল্যাকার্ডে কবিগুরুর সবুজ ও লাল হরফে লেখা বইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের মলাট। দুই শিশু প্ল্যাকার্ড নিয়ে মঞ্চ জুড়ে চক্কর কাটে। আড়ালে দাঁড়িয়ে নির্দেশ দেন শাওনা দাস ও জয়া দত্ত। শুরু হয় অ-আ পড়া-পড়া খেলা। ছড়ার ছন্দে রকমারি অক্ষরের সাজে শিশুরা মঞ্চে হাজির। মধ্যে দাঁড়িয়ে নিখুঁত মুকাভিনয়ে স্বর ও ব্যাঞ্জনের কারসাজি দেখায় একজন। ওই শিশু শিল্পীর সাজ এবং অভিনয় বড়দের মগজে যোগেশ দত্তের স্মৃতিকে উস্কে দেয়। টানা ২০ মিনিটের অনুষ্ঠানে ঠায় দাঁড়িয়ে প্রত্যেকে। পলক পড়ছে না খুদে দর্শকদেরও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথমবার শখের পাঠশালা খোলার পরে পুজো কমিটির দুই কর্তা স্বপন দাস ও বাণীব্রত চক্রবর্তী মনে করেছিলেন ৪৫ মিনিট ব্যবধানে অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন। কিন্তু দর্শণার্থীদের উৎসাহ দেখে বিরতির আধ ঘন্টা ফুসরত মেলেনি। টিফিনের প্যাকেট হাতে নিতেই শিল্পীদের কাছে চিরকুটে আবদার এসেছে ‘কুমোরপাড়াকে’ ফের দেখানোর।
অনেকে বলেছেন আবার পড়তে চাই অ-আ। স্বপনবাবু বলেন, “খুব কম সময়ে ১১ জন শিশুকে তালিম দিয়ে অনুষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের এত ভাল লাগবে বুঝতে পারিনি।” উজ্জ্বলার পুজো মণ্ডপের এক দিকে সাগরদ্বীপ ক্লাবের পরিবেশ দূষণের উপরে অলোকসজ্জা। অন্য দিকে সুভাষনগর সর্বজনীনের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনাবলীর উপরে মণ্ডপ এবং জাগরণী ক্লাবের ইঁদুর দৌড়ে ক্লান্ত বর্তমান সমাজের খণ্ড ছবি। ভিড়ে ঠাসা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি এবং সার্ক রোড। দর্শনার্থীরা আলো ও থিমের পুজো দেখার পরেই যেন শৈশবকে ফিরে পেতে উজ্জ্বলার মণ্ডপে হামলে পড়ছেন। ক্লান্তি জুড়াতে শিশু শিল্পীদের সঙ্গে ঠোঁট নাড়ছেন-এসেছে শরত হিমের পরশ বা গাড়ি চালায় ভাগ্নে মদনের মতো ছড়ার কলি। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান দেখে অভিভূত বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী। তিনি বলেন, “শিশুশিক্ষার এত ভাল আয়োজন অন্য কিছু হতে পারে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.