আর ফোঁটা নিতে আসবে না বাচ্চু, প্রলাপ দিদিদের
প্রতি বছরের মতো এবারও হইহই করে ভাইফোঁটার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন রিঙ্কু, সুমিতা, মিঠু দেবীরা। কিন্তু, বৃহস্পতিবার মাঝ রাতে কালীপুজো দেখতে বেরিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় বাইক ছিটকে অকালেই দুনিয়ে থেকে হারিয়ে গিয়েছে তিন বোনের আদরের বাচ্চু তথা সুব্রত ভৌমিক। তাই ভাইফোঁটার দিনে ভোমিক পরিবারে শুধুই কান্নার রোল। ছেলের প্রাণহীন দেহ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন মা রেবা দেবী। রিঙ্কু, সুমিতারা কান্নায় ভেঙে পড়লেন। এক প্রান্তে চুপ করে বসে বাবা সুনীলবাবু। তাঁর চোখের জল বাধ মানছিল না। বৃহস্পতিবার রাতে বাগডোগরার এয়ারপোর্ট মোড়ের তরুণ সুব্রত তাঁর ২ বন্ধুকে নিয়ে মোটরবাইকে চেপে শিলিগুড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। খাপরাইল মোড়ে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে ৩ জন। ৩ জনের মৃত্যু হয়। মৃত উত্তম দাস (২০) ও প্রদীপ মণ্ডল (২২)-এর বাড়ি বাগডোগরার বুড়ি বালাসন সংলগ্ন কলেজ পাড়ায়। ৩ তরুণের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েছে গোটা বাগডোগরা। সুনীলবাবু দাজির্লিং জেলা কংগ্রেসের নেতা। বাড়ির একমাত্র ছেলে সুব্রত পাড়াতেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। কদিন কয়েক আগে ছেলের আবদারে সুনীলবাবু তাঁকে একটি মোটরবাইক কিনে দেন। সেই বাইকে বন্ধুদের নিয়ে পুজো দেখতে যাচ্ছিলেন সুব্রত। এদিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই। বাড়ির ভিতরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন তিন বোন রিঙ্কু, সুমিতা ও মিঠু দেবী। সবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁরা ভাইফোঁটা দেবেন বলে বৃহস্পতিবারই চলে যান বাগডোগরার বাড়িতে। সেদিন সমস্ত কিছুর আয়োজনও করেন। কিন্তু রাতেই সেই দুর্ঘটনার খবর পান তাঁরা। সুমিতা দেবী বললেন, “ফোঁটা দেব বলে বাড়িতে এসেছি। কেন এভাবে ভাইয়ের মৃত্যু হল?
শোকাহত সুব্রতের দিদিরা। নিজস্ব চিত্র।
এবারে কাকে ফোঁটা দেব আমরা।” সুব্রতের মা রেবা দেবী প্রলাপ বকছিলেন। বলছিলেন, “ঠাকুর পুজো দেখে বাড়িতে ফিরবে বলে ছেলেটি মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছে। আমাকে জানিয়ে গেল, তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরবে। সে কেন আর ফিরল না। আমি এখন কী করে বেঁচে থাকব।” সুব্রতের বড় বোন বিবাহ সূত্রে পুণেতে থাকেন। দুর্ঘটনার খবর শুনে তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। একই চিত্র দেখা কলেজ পাড়ার উত্তম ও প্রদীপের বাড়িতে। বাড়িতে উপচে পড়েছে ভিড়। বাড়ির ভিতর বাবা, মা, ভাই বোনেরা কেঁদে চলেছেন অনবরত। উত্তমের বাবা অসীমবাবু মাছের ব্যবসা করেন। ২ ভাই ও ১ বোন তাঁরা। উত্তম বড় ছেলে। উত্তমের কাকাত দাদা সঞ্জীত বলেন, “শিলিগুড়িতে ঠাকুর দেখবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। আর ফিরল না।” প্রদীপরা দুই ভাই। মাধববাবুর ছোট ছেলে প্রদীপ। বড় ছেলে সুদেব গাড়ি চালক। এদিন চোখের জল মুছতে মুছতে সুদেব বলেন, “আমি কালিম্পংয়ে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। রাত ২টা নাগাদ সেখানেই খবর পাই। তার পর দেরি করিনি। রাতেই গাড়ি নিয়ে নেমে আসি। এভাবে ভাইয়ের মৃত্যু হবে ভাবতে পারছি না।” এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “এভাবে এত কম বয়সে ৩ তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় আমি মর্মাহত।” মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার সুনীলবাবুর বাড়িতে যান। পরে তিনি মর্গেও যান। তিনি বলেন, “ভাইফোঁটা দেবে বলে তিন বোন বাড়িতে এসেছে। আর ওই দিনই ভাইয়ের মৃত্যু হল!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.