দু’বছর আগে যে বাস ‘ধরতে পারেনি’ বামফ্রন্ট সরকার, এ বার তা ধরতে পড়িমড়ি ছুটছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
দু’বছর আগে রাজ্যে তাঁত শিল্পের উন্নতিতে এ রাজ্যের নদিয়ায় ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ হ্যান্ডলুম টেকনোলজি’ খোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাব দিয়েছিল তৎকালীন রাজ্য সরকারকে। সেই সময়ে নদিয়ার ফুলিয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের জন্য জমির সন্ধানও দিয়েছিলেন শান্তিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক অজয় দে। কিন্তু রাজ্য সরকারের ‘গড়িমসি’তেই সেই প্রকল্প এখনও হয়নি।
নদিয়ায় এই ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলার প্রয়োজনীয়তা বুঝেই কেন্দ্রীয় বস্ত্রশিল্প মন্ত্রী আনন্দ শর্মার কাছে আর্জি
|
মানস ভুঁইয়া |
জানাতে সম্প্রতি যান রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং বস্ত্র শিল্প দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। মানসবাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আমায় বললেন, ‘দু’বছর আগেই আপনারা বাস মিস করেছেন। বাস তো এখন ভুবনেশ্বর আর গুয়াহাটিতে পৌঁছে গিয়েছে।’ অর্থাৎ ওই প্রকল্প আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য অসম ও ওড়িশা পেয়ে গিয়েছে।” মানসবাবু এখন চেষ্টা করছেন, কী ভাবে রাজ্যে ওই প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যায়।
সেই কাজ করতে গিয়েই মানসবাবু পূর্বতন সরকারের জমিয়ে রাখা ফাইলের স্তূপ থেকে উদ্ধার করেছেন একটি ফাইল। ধুলো ঝেড়ে সেই ফাইলে চোখ বোলাতে গিয়ে মানসবাবু উদ্ধার করেন, সেটি রাজ্যের হস্তশিল্প কারিগর ও তাঁত শিল্পীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প। রাজ্যের তাঁত ও হস্তশিল্প কারিগরদের চিহ্নিত করে তাঁদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা (রাজীব গাঁধী স্বাস্থ্য বিমা যোজনা নামে পরিচিত) ও ক্রেডিট কার্ড বিলির প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকার করেছিল দু’ বছর আগেই। এই প্রকল্প কার্যকর করতে কেন্দ্র বছর দু’য়েক আগে রাজ্যের তাঁত ও হস্তশিল্প কারিগরদের একটি সুমারিও করে। সেই সুমারি অনুযায়ী, রাজ্যে ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬ জন তাঁত শিল্পী ও হস্তশিল্পে যুক্ত সাড়ে পাঁচ লক্ষ কারিগর আছেন। তাঁত শিল্পীদের সংখ্যা নদিয়াতেই সব চেয়ে বেশি। সেখানে ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯৭৪ জন তাঁতশিল্পী আছেন। বর্ধমানে প্রায় ৮৫ হাজার, মুর্শিদাবাদে ৭৫ হাজার, মালদহে ৫০ হাজার তাঁত শিল্পী আছেন।
মানসবাবু বলেন, “এই প্রকল্প অনুসারে তাঁত ও হস্তশিল্প কারিগরদের একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার অনুমোদন করলেই কেন্দ্র ওই সচিত্র পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট শিল্পীকে দেবে। ওই কার্ড থাকলে কোনও অসুস্থ শিল্পী যেমন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয়ের সুবিধা পাবেন, তেমনই শিল্পীরা তাঁদের কাজের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও পাবেন।” বর্তমানে নদিয়া, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার মতো জেলায় তাঁত ও হস্তশিল্প কারিগরদের যে ‘প্রতিকূলতা’র মধ্যে দিয়ে রুজি-রোজগার করতে হচ্ছে’, এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হলে সেই অসুবিধা অনেকটাই কাটবে বলে মন্ত্রীর বক্তব্য।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বিক্ষিপ্ত ভাবে ওই প্রকল্পের কাজ হয়েছিল বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। মানসবাবুর দাবি, “আমরা সরকারে আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত প্রকল্পের সুফল যেন উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছয়। এই নির্দেশ মেনেই আমরা এ পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৪৪টা সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরি করতে পেরেছি।” রাজ্যের ক্ষুদ্র ও হস্তশিল্প দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অনুপ চন্দ জানিয়েছেন, আগামী মার্চের মধ্যে সমস্ত পরিচয়পত্র তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। দফতরের বিশেষ সচিব নিলয় ঘোষ জানিয়েছেন, সেই পরিচয়পত্র ব্লক ও জেলা স্তরে শিবির করে শিল্পীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরির পাশাপাশি মানসবাবু অবশ্য তাঁর দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের নতুন করে তাঁত ও বস্ত্রশিল্পীদের আরও একটি সুমারি করার কর্মসূচি নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “গত দু’বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার যে সুমারি করেছিল, তার পরে নতুন শিল্পীর সংখ্যা সংযোজিত হয়েছে কিনা, সেটা দেখা দরকার। আমাদের লক্ষ্য, দরিদ্র ও রীতিমতো লড়াই করে বেঁচে থাকা তাঁত-হস্তশিল্প কারিগরদের সহযোগিতা করা।” |