বুদ্ধ-‘ঘনিষ্ঠ’ স্বপনকে পদ থেকে সরাচ্ছে সিপিএম
মি কেলেঙ্কারির অভিযোগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ যাদবপুরের নেতা স্বপন (সমরেন্দ্রনাথ) রায়কে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে অপসারিত করার সিদ্ধান্ত নিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যান স্বপনবাবুকে জেলা কমিটির সদস্যপদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দক্ষিণ জেলা সিপিএম সূত্রের খবর। স্বপনবাবু যাদবপুর-১ নম্বর জোনাল কমিটিরও সম্পাদক ছিলেন। ওই পদ থেকেও তাঁকে অপসারিত করা হচ্ছে। তাঁর দলীয় সদস্যপদটিই শুধু রেখে দেওয়া হচ্ছে। সিপিএমের সাংগঠনিক নিয়মমাফিক, জেলা কমিটির এই সুপারিশ রাজ্য কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
মুখ্যমন্ত্রী তথা বিধায়ক থাকাকালীন বুদ্ধবাবুর নির্বাচনী কেন্দ্র যাদবপুরে সিপিএমের অন্যতম ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নেতা ছিলেন স্বপনবাবু। বুদ্ধবাবুর নির্বাচন পরিচালনা এবং নির্বাচনী কেন্দ্র দেখভালের কাজে খোকন ঘোষ দস্তিদারের পাশাপাশিই উচ্চারিত হত স্বপনবাবুর নাম। যাদবপুরে এ বার বুদ্ধবাবুর পরাজয়ের পরে স্বপনবাবুর মতো নেতার বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ সিপিএম-রাজনীতিতে যথেষ্টই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
সিপিএম সূত্রের খবর, স্বপনবাবুর ক্ষেত্রে জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মৌখিক ভাবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানানো হয়েছিল।
স্বপন রায়
মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছিল বুদ্ধবাবুকেও। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “বুদ্ধবাবু ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তার পরে নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে জেলা কমিটি রাজ্য কমিটির কাছে শাস্তিমুলক সুপারিশ পাঠিয়ে দিয়েছে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “ওই শাস্তিমূলক সুপারিশ রাজ্য কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” স্বপনবাবু অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
জেলা কমিটির একাংশের ব্যাখ্যা, দুর্নীতির অভিযোগে ‘আগমার্কা’ নেতারাও যে এখন শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন না, দলীয় সম্মেলনের আগে সেই ‘বার্তা’ই দেওয়া হল। দুর্নীতি বা দল-বিরোধী কাজের অভিযোগে সর্ব স্তরের নেতাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে দল যে পিছপা হবে না, কৌশলে তা-ই বুঝিয়ে দেওয়া হল জেলা কমিটির তরফে। দলেরই একাংশের মতে, নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে ভাবমূর্তি উদ্ধারে এবং শুদ্ধকরণের প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসাবে ‘প্রভাবশালী’ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আলিমুদ্দিনের ‘সবুজ সঙ্কেত’ আছে বলেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়া সত্ত্বেও রেহাই দেওয়া হল না স্বপনবাবুকে।
জেলা কমিটির বৈঠকে গৃহীত শাস্তিমূলক সুপারিশ বৃহস্পতিবার রাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ই এম বাইপাস সংলগ্ন ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর স্বপনবাবু ১২ নম্বর বরো-র চেয়্যারম্যান ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় বেনামে জমি কেনা-বেচার ব্যবসার অভিযোগ আছে। দলীয় ‘প্রভাব’ বিস্তার করে স্বপনবাবু জমির ব্যবসা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। কয়েকটি ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। স্বপনবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ পূর্ব যাদবপুর লোকাল কমিটির ৭ জন সদস্যকেও শো-কজ করা হয়েছে বলে জেলা সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে। বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জেলা কমিটির কাছে জমা পড়েছিল। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের সময় ওই অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বুদ্ধবাবু শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন। তার পরে জেলা কমিটির তরফে তাঁর পরাজয়ের কারণ খুঁজতে তদন্ত শুরু হয়। বাইপাস সংলগ্ন ১০৭, ১০৮, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় যাদবপুর-১ নম্বর জোনাল কমিটির অধীনে অনেক দলীয় কর্মী জমির দালালির ব্যবসা করে প্রচুর টাকা কামিয়েছেন বলে জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। তার পরেই জোরদার তদন্ত শুরু হয়। জেলা কমিটির কাছে খবর, স্বপনবাবুর মদতেই ওই সব ব্যবসা করেছেন কিছু দলীয় কর্মী। গত পুরসভা নির্বাচনেও ওই সব এলাকায় সিপিএমের ভরাডুবি হয়েছে। স্বপনবাবু নিজেও ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে পুর-নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। জমির ব্যবসা নিয়ে অনিয়ম সার্বিক ভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন জেলা নেতৃত্ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.