ভাইফোঁটার দুপুরে মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছে শাঁখের আওয়াজ। তিথি ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ভাইকে ফোঁটা দিতে ব্যস্ত বোনেরা। চারিদিকে মিষ্টিমুখ, রোশনাই আর উৎসবের আমেজ। কিন্তু করিমপুরের পাট্টাবুকা গ্রামের সরকার পরিবারে আজ শুধু অন্ধকার। হাহাকার আর কান্না। শাঁখের আওয়াজ শুনলেই ডুকরে কেঁদে উঠছে অনামিকা।
এ বছরও ভাইফোঁটা নিয়ে উৎসাহের অন্ত ছিল না করিমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অনামিকার। সদ্য গ্রাম ছেড়ে ব্যারাকপুরের কলেজে ভর্তি হয়েছিল তার দাদা অনির্বাণ সরকার। ভাইফোঁটা উপলক্ষে দিন কয়েক আগে বাড়ি এসেছিল দাদা। কালীপুজোর রাতে বাড়ির সকলের সঙ্গে হই-হুল্লোর করে নিজের ঘরে ঘুমিয়েও ছিল। পরের দিন সকালে শত ডাকাডাকিতেও আর ঘুম ভাঙেনি অনির্বাণের।
বাড়ির সকলে ছুটে আসেন। শরীরের বাঁ দিকে একটা কালো দাগ। বাঁ হাতের বেশ কিছু জায়গায় চামড়া উঠে গিয়েছে। কান থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
অনির্বাণের মা অসীমাদেবী বলেন, ‘‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে আমার ছেলের এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। কালীপুজোর রাতেই আমার সঙ্গে কত গল্প করল। বলল ওর একটা ল্যাপটপ দরকার। আমি বললাম সামনে মাসেই কিনে দেব। অথচ সকাল হতেই ডাক্তার বলল আমার ছেলে মারা গিয়েছে!’’
অনির্বাণের বাবা বিমলবাবু প্রথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের মোবাইলটা পাওয়া যাচ্ছে না। এই মৃত্যুকে ঘিরে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যেগুলো রীতিমত রহস্যজনক। আমরা পুলিশের কাছে ঘটনার তদন্তের দাবি করব।’’
দাদার ঘরে ঢাকা তবলার দিকে তাকিয়ে অনামিকা বলল,‘‘দাদা দারুন তবলা বাজাত। মাঝে মধ্যে তবলা বাজাতে বাজাতে বলত একটা গান ধর তো! হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়তাম। আমরা কালীপুজোর রাতে ছাদের উপরে প্রদীপ জ্বালিয়েছি। সে দিনও ভাবতে পারিনি দাদা এ ভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।’’ |