উৎসব-পার্বণীর আবাহন ঈদ থেকে। মাস খানেকের ব্যবধানে দুর্গাপুজো! এর পরে লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজোর উৎসবের জৌলুস ফিকে হতে না হতেই ঈদুজ্জোহা পালনের মধ্য দিয়েই উৎসব মরসুম চলে যায়। কিন্তু এই সময়টাই পর্যটন শিল্পের উপরে নির্ভর করে জেলার অর্থনীতির বুনিয়াদের শক্ত ভিতের উপরে দাঁড়ানোর কথা।
উৎসব মরসুমে এই সময়ে শুধু বহরমপুরের বাজারে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। চেম্বার অফ কমার্সের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি অজয় সিংহ বলেন, “প্রতি বছর এই উৎসব মরশুমে জেলার বাজার-অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে থাকে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে চাহিদা অনুযায়ী পাটের দাম না পাওয়ায় এক শ্রেণির চাষিদের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে।” পাটের দাম বৃদ্ধির আশায় দিন গুনছেন জেলার পাটচাষিরা।
উৎসব মরশুমে জেলার অর্থনীতির উন্নতি প্রসঙ্গে জেলা বণিক সভার এক কর্তা বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে ঈদ ও পুজো একই সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের পুঁজির টান দেখা দেয়। তখন তারা ২-৫ শতাংশ হারে মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার সুদ নিয়ে ব্যবসা করেন। পরে মরসুম শেষে তাঁরা সুদ-সহ ওই টাকা ফিরিয়েও দেন। যদিও এর ফলে তাঁদের লাভের অংশ কমে যাচ্ছে। কিন্তু মোটা অঙ্কের বেচাকেনা হওয়ার ফলেই তাঁরা সময়ের মধ্যে মহাজনদের ঋণ শোধ করতে সক্ষম হচ্ছেন। এটা কিন্তু ব্যবসার পক্ষে ভাল।”
তবে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ওই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে দিয়েছে বলে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের মত। তার মধ্যে লালবাগের পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারি তরফে সদিচ্ছার অভাবের কারণেও ব্যবসায়ী মহলের ক্ষোভ রয়েছে। লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা হিসেব করে দেখেছি, বহিরাগত পর্যটকরা লালবাগে বেড়াতে এসে জনপিছু ৪০০ টাকা খরচ করে থাকেন। ওই টাকা সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ায় অর্থনীতির ভিত তো শক্ত হয়। তবে লালবাগ তথা মুর্শিদাবাদের পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।” পলাশি হয়ে লালবাগ বা জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের ভাগীরথীর পাড় বরাবর দর্শনীয় স্থান নিয়ে ‘কনডাক্টেড ট্যুর’-এর ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত করা গেল না। এছাড়াও হাজারদুয়ারি থেকে কলকাতা যাওয়ার সরাসরি কোনও বাস নেই। সন্ধ্যার পরে বহিরাগত পর্যটকদের হোটেলের ঘরে বন্দি হয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। কেননা, লালবাগে পর্যটকদের আমোদ-প্রমোদের কোনও ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়াও দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনিক স্তরে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’-এর মধ্য দিয়ে মুর্শিদাবাদের ইতিহাসের কাহিনি দেখানোর পরিকল্পনা হলেও তা প্রতিশ্রুতিতেই রয়ে গিয়েছে।
লালবাগের এক হোটেল মালিক আশিস রক্ষিত বলেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্তের রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণেও পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।” স্বপনবাবু বলেন, “হোটেল ব্যবসায়ীরা লালবাগে হোটেল তৈরির জন্য জায়গা খুঁজছেন। কিন্তু লালবাগে জায়গা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সরকারি স্তরে আলোচনা করে জায়গা সংক্রান্ত সংস্যা মেটাতে না পারলে নতুন হোটেল নির্মাণও হবে না।” তবে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি জেলার সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রী তৃণমূলের সুব্রত সাহা। সুব্রতবাবু বলেন, “জেলার সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে পর্যটন শিল্পেরও উন্নয়ন ঘটবে। সেই সঙ্গে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে মুর্শিদাবাদের হাতির দাঁতের কাজ, শোলা, সিল্ক, কাঁসা শিল্পের উন্নয়ন ঘটানো হবে। এতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জড়িত শিল্পী ও ব্যবসায়ীরাও আর্থিক লাভবান হবেন।” |