|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ১... |
|
নারী জানি না, অনেক ছবি হাতে |
দাবি করলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। যিনি এখন টালিগঞ্জের সবচেয়ে বড় গুঞ্জন। মুখোমুখি নিবেদিতা দে |
পত্রিকা: এত দিন ক্যামেরার সামনে ছিলেন প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিত, জিৎ....আর এখন ক্যামেরার পিছনে সৃজিত...
সৃজিত: শুধু তা কেন, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় আছেন, রঞ্জিত মল্লিক আছেন।
পত্রিকা: টালিগঞ্জ কিন্তু বলছে পরিচালক হয়েও নারীমনে আপনি হিরোর স্টেটাস পাচ্ছেন।
সৃজিত: (লাজুক হাসি, দৃষ্টি পায়ের দিকে)...আমি বলতে চাইছি আমার মতো যাঁরা ক্যামেরার পিছনে কাজ করছেন, অভিনেতাদের মতো তাঁদের প্রতিও মানুষের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। আর এই অ্যাওয়ারনেস থেকেই তো আসে অ্যাটেনশন।
পত্রিকা: বাবা রে, আপনি তো দেখছি ‘বিনয়’ সৃজিত মুখুজ্জে। এই সব অ্যাওয়ারনেস, অ্যাটেনশন...সব মিলিয়ে কী দাঁড়াল? ফ্যান মেল আসছে, না আসছে না?
সৃজিত: (মাপা ও চাপা হাসি) তা আসছে। প্রচুরই আসছে। দেখুন ফ্যান তো দুম করে হয় না, আমার কাজ দেখে তাঁদের ভাল লাগছে নিশ্চয়ই।
পত্রিকা: বুঝলাম। মহিলা ফ্যান-সংখ্যা বেশি?
সৃজিত: সে ভাবে তো আমি ক্লাসিফাই করে মাপিনি, তবে হ্যাঁ, মহিলা ফ্যান মেলও আসছে (লাজুকস্য লাজুক হাসি), আবার পুরুষ মেলও আসছে...কিন্তু একটা কথা আমি বলতে চাইছি, এই যে বাংলা ছবি ঘিরে ইন্টারেস্ট তৈরি হচ্ছে, আর সেই জন্যেই কলাকুশলীদের প্রতি কৌতূহলী হচ্ছে মানুষ।
পত্রিকা: সোজাসুজি বলুন তো ফ্যান মেলে প্রেম নিবেদন কত আসছে?
সৃজিত: না, প্রেম নিবেদন এখনও আসেনি।
পত্রিকা: এ বার কিন্তু আমরা মানে ‘মিডিয়া’রা হা হা করে হাসব...
সৃজিত: সত্যি বলছি। তার কারণ হতে পারে আমার দাড়ি।
পত্রিকা: বলতে চাইছেন দাড়িওয়ালা পুরুষ মেয়েরা পছন্দ করে না?
সৃজিত: তা নয়, আসলে আমার এই কাঁচা-পাকা দাড়ি, আমার চার পাশে একটা গাম্ভীর্যের প্রাচীর তৈরি করে। সেটা সব সময় ‘স্মাইলি’ দিয়ে ভেঙে দেওয়া যাচ্ছে না।
পত্রিকা: হি হি হি...
সৃজিত: হাঃ হাঃ হাঃ...বলতে পারেন একটা শ্রদ্ধা মিশ্রিত নিবেদন আসছে।
পত্রিকা: বলুন, শ্রদ্ধামিশ্রিত আবেগ...বা বেগ।
সৃজিত: বেগতিকও হতে পারে (হাসি)।
পত্রিকা: আচ্ছা ধরুন আপনি যদি ছবি না করতেন, তা হলে কী করতেন?
সৃজিত: আমি তো অ্যাকচুয়ালি ছবি করতাম না, তখন একটা কিছু করতাম। আমি স্ট্যাটিস্টিক্যাল মডেলিং করতাম। মানে ইকনোমেট্রিশিয়ানের কাজ করতাম। মানে সংখ্যাতত্ত্ব,...আমার মনে আছে একবার আমাকে এক জন জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনি কী করেন? আমি বলেছিলাম, মডেলিং। উনি আমাকে আপাদমস্তক দেখে বললেন, চেনাচেনা লাগছে না তো। তো এখন আমি বলতে পারি, আমার একটা শিফ্ট হয়েছে স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেলিং থেকে ক্লে-মডেলিং-এ। এখন আমি একটা কাদা-মাটিকে ছবিতে রূপ দিই, এই আর কী!
পত্রিকা: আপনার স্কুলিং...
সৃজিত: প্রথমে ‘দোলনা ডে স্কুল’, তার পর এগারো-বারো সাউথ পয়েন্ট, তার পর প্রেসিডেন্সি কলেজ... অর্থনীতি বিভাগ...জেএনইউ-তে মাস্টার্স, এম ফিল।...পিএইচডি-টা শুরু করেছিলাম, ফার্স্ট ইয়ারের পর ছেড়ে দিই।
পত্রিকা: সিনেমায় ইন্টারেস্টটা কী ভাবে?
সৃজিত: আমার বাবা ছিলেন সিনেমাপ্রেমী, উনিই ছবি দেখতে এনকারেজ করতেন। মা-রও ইন্টারেস্ট ছিল, কিন্তু বাবার বেশি ছিল।
পত্রিকা: আপনার বাবা তো...
সৃজিত: হ্যাঁ, বাবা যাদবপুরের আর্কিটেকচরের হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট ছিলেন।
পত্রিকা: মা ডাক্তার, বাবা ইঞ্জিনিয়ার, আর ছেলে অর্থনীতি থেকে শিল্পে ঝাঁপ?
সৃজিত: নান্দনিক দিকটা প্রফেশন বেসড নয় কিন্তু। একটা সুন্দর বাড়ি, মানে আর্কিটেকচার এমন একটা বিষয়, যাতে অঙ্কও আছে, শিল্পও আছে।
পত্রিকা: শুনেছি আপনি নাকি ভীষণ ঘুমোন। স্ক্রিপ্ট লেখেন কখন?
সৃজিত: আমার শরীরে নানা দেশের টাইম জোন আছে। মাঝে মাঝে আমি ইউএস টাইম জোনে চলি, মাঝে মাঝে ইউকে টাইম জোনে চলি, মাঝে মাঝে ভারতীয় টাইম জোনে।
পত্রিকা: ভারতীয় টাইম জোনে কখন চলেন?
সৃজিত: পুজোর সময় বা যখন ভারতে ক্রিকেট খেলা হয়। যখন অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট খেলা হয়, তখন আমি অস্ট্রেলিয়ান টাইম জোনে চলি।
পত্রিকা: ক্রিকেট খুব প্রিয় নাকি?
সৃজিত: খুব খুব খুব।
পত্রিকা: প্রিয় ক্রিকেটার?
সৃজিত: গোটা দশেক বলি। সচিন, লারা, জাক কালিস, সৌরভ, রাহুল, লক্ষ্মণ, ভিভ, ওয়াসিম, শেন ওয়ার্ন, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার । আক্রমের বল হাতে ছুটে আসাটা ভাবুন, কবিতা কবিতা...
পত্রিকা: কবিতা?
সৃজিত: কবিতা কেন ক্রিকেট তো জীবন। কী ডিগনিটি দিয়ে হার-জিৎ মেনে নেওয়া হয়। আমার তো মনে হয় ক্রিকেট একটা ধর্ম।
পত্রিকা: ক্রিকেট নিয়ে ছবি করবেন নাকি?
সৃজিত: করবই তো। ডেফিনেটলি করব।
পত্রিকা: আচ্ছা আপনার পরের ছবির বিষয় কিছু বলুন।
সৃজিত: পরের ছবিটা নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু করছি।
পত্রিকা: এ বারও কি মুখ্য চরিত্রে প্রসেনজিৎ?
সৃজিত: না। প্রধান চরিত্রে থাকছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও কোয়েল মল্লিক। বুম্বাদা আছেন, একটা গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সে।
পত্রিকা: তার মানে প্রসেনজিতের সঙ্গে হ্যাট্রিকটা হল না?
সৃজিত: (হাসি) বুম্বাদা ছবিতে থাকুন না থাকুন, উনি সব সময়ই আমাকে গাইড করেন। সেই জায়গাটায় উনি সব সময়ই আছেন।
...হ্যাঁ ছবিটা প্রেমের। প্রেমটা হয় সেই মানুষের সঙ্গে যিনি একটি স্কুল বা সোসাইটি চালান, যেখানে সফল ভাবে সুইসাইড করতে শেখানো হয়।
পত্রিকা: কোনও জঙ্গি সংগঠনের ছবি নাকি?
সৃজিত: না, না, না, না, না। নর্মাল মানুষদের কথা। যিনি স্কুলটা চালান তিনি দেখেছেন, ম্যাক্সিমাম লোক সুইসাইড করতে গিয়ে পারেন না। কারণ, তাঁরা জানেন না ঠিক কোন ওষুধটা খেতে হয়। গলায় দড়িটা কী ভাবে দিতে হয়। হাত কাটলে কী ভাবে কাটতে হয়।
পত্রিকা: মানেটা কী!
সৃজিত: হ্যাঁ, ডিপ্রেশনের পেশেন্টের সঙ্গে প্রেম হয়ে যায়।
পত্রিকা: কিন্তু সমাজে তো এ রকম কিছু নেই? ভূতের গল্প নাকি?
সৃজিত: না, আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করছি গল্পটা। তবে হ্যাঁ ছবিটা খুব লাইট হার্টেড অপটিমিস্টিক একটা মিষ্টি ছবি।
পত্রিকা: একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে, ধরুন ‘মোহাব্বতেঁ’-তে যেমন সামনে ছিলেন অমিতাভ, আর পাশে ছিলেন শাহরুখ-ঐশ্বর্যা, কিংবা ‘কভি খুশি কভি গম’। সামনে আবার অমিতাভ আর পাশে ঋত্বিক-করিনা, ঐশ্বর্যা-কাজল, অথবা ‘বিরুধ’, ‘বাবুল’, যেগুলোতে পাশে পাশে ইয়ং কাপল। তো আমার জিজ্ঞাস্য, কবে একটা ‘বাগবান’ দেখতে পাব যেখানে অমিতাভ-হেমার মতো প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী বা প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা বা প্রসেনজিৎ-শতাব্দীকে পাব আপনার ছবিতে?
সৃজিত: দেখুন, আমি তো গল্প ভেবে ছবি বানাই। আগে অভিনেতার কথা ভাবি না।
পত্রিকা: আপনি কিন্তু আপনার স্ক্রিপ্টের মতো মশলাদার কথা বলেন না!
সৃজিত: কথক আর কথার মধ্যে মিল নাও থাকতে পারে। রাজশেখর বসু মানে যাঁকে আমরা পরশুরাম নামে চিনি, তিনি কিন্তু চুপচাপ মানুষ ছিলেন। আর আমার যদি জীবনে পাঁচফোড়ন না থাকে কী বলব বলুন।
পত্রিকা: কাজের মাঝে কোনও ‘ব্যায়াম’ নেই বলছেন?
সৃজিত: হা হা।
পত্রিকা: কত বার প্রেমে পড়েছেন?
সৃজিত: প্রেমে বহু বার পড়েছি।
পত্রিকা: প্রেম থেকে উঠেছেন কী করে?
সৃজিত: দু’রকম ভাবে প্রেম থেকে ওঠা যায়, হয় কাজে মন দিয়ে কিংবা আবার প্রেমে পড়ে। সব সময় যে নারী থেকে আরেক নারীতে চলে যেতে হবে তা নয়, একটা ভাল বই বা ভাল একটা কাজের প্রেমে পড়েও পুরনো প্রেম থেকে ওঠা যায়।
পত্রিকা: খুব ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব?
সৃজিত: শুনি?
পত্রিকা: ৩৪ বছর বয়সে এত কিছু করে ফেললেন, বিয়ে...
সৃজিত: হ্যাঁ বিয়ে একটা ছিল। কিন্তু ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তবে সুখের কথা আমরা এখনও বন্ধু, প্রায়ই কথা হয়...উনি বেঙ্গালুরুতে থাকেন...চাকরি করেন। মার্কেটিং-এ আছেন।
পত্রিকা: নামটা জানতে পারি?
সৃজিত: থাক। এখানেই দাঁড়ি।
পত্রিকা: আবার সেই দাড়ি, যাতে মেয়েরা পিছিয়ে যান বলছেন?
সৃজিত: (হাসি)।
পত্রিকা: একটা অভিযোগ আছে, আপনার ছবি নাকি তসরের শাড়ি আর পার্ল সেট পরে দেখতে যেতে হয়, যা আগে অপর্ণা সেন ও ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি দেখতে যাওয়ার সময় হত।
সৃজিত: (খুব হেসে) এ রকম কোনও নির্দেশ থাকে না কিন্তু হলের বাইরে। আর আপনি বিশ্বাস করুন, ‘২২শে শ্রাবণ’ দেখতে তসর, সুতি, জিনস, এমনকী লুঙ্গিও এসেছেন। শ্রেণি বিভাজন ভেঙে দিয়েছে বলতে পারেন।
পত্রিকা: তার কারণ এই নয় তো, ছবিটাতে চার অক্ষরের ‘ব’কার বা দু’ অক্ষরের ‘বা’-জাতীয় চোখা চোখা বাছা বাছা যাকে বলে খিস্তি আছে?
সৃজিত: ধ্যাৎ, বিষয়বস্তুটার জন্য এই শ্রেণিটা ভেঙে গেছে।
পত্রিকা: কিন্তু গালাগাল নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক আছে।
সৃজিত: এখানে ব্রাত্য বসুর নাটক ‘অশালীন’টা উল্লেখ করব। খুব সুন্দর তর্জমা করা আছে সেখানে। বলা আছে স্ল্যাংটাও ভাষার অন্তর্গত একটা দিক। যেমন খেউড় একটা আর্ট ফর্ম। আর আমি চুমু দেখাতে গিয়ে দুটো ফুল ও ভোমরা যেমন দেখাব না, তেমনই এক জন পুলিশ অফিসার যার চোখ সব সময় জ্বলছে তার মুখে খিস্তি দিতেও বাধব না। এবং জেনে রাখুন তথাকথিত সেন্সর বোর্ড কিন্তু এই ফ্লেভারটা রাখতে বলেছে।
পত্রিকা: আপনি কী বলবেন ‘সত্যা’, ‘প্রহার’, ‘বাস্তব’ ছবিগুলোতেও একটু স্ল্যাং থাকলে ভাল হত?
সৃজিত: (একটু ভেবে), মনে হয় ভাল হত। তবে, ‘গঙ্গাজল’-এ কিন্তু ছিল।
পত্রিকা: একটু অন্য কথায় যাই, আপনি কি মেয়েদের সাইকোলজি বোঝেন না?
সৃজিত: কেন?
পত্রিকা: না হলে একটা ছবিও মহিলাদের মুখ্য ভেবে করার কথা ভাবছেন না কেন?
সৃজিত: নারী-পুরুষে যাচ্ছেন কেন, চারিদিকে এত ধরনের বিষয়... বহু দিনের ইচ্ছে প্রফেসর শঙ্কু নিয়ে ছবি করার। জীবনীমূলক ছবি করারও খুব ইচ্ছে।
পত্রিকা: কার জীবনী?
সৃজিত: কবীর সুমন হতে পারে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হতে পরে, উত্তমকুমার হতে পারে।
পত্রিকা: তবুও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলবেন না, তাই তো? মানে মহিলাদের কথা কিছুতেই বলবেন না।
সৃজিত: আরে বাবা বলতে দিন, বলার আগেই তো ঝাঁপিয়ে পড়লেন। মাতঙ্গিনী হাজরার জীবন নিয়েও করতে পারি কিংবা সুচিত্রা সেন...।
পত্রিকা: সুচিত্রা সেন হলে কাকে নেবেন?
সৃজিত: দুম করে বলা যায় না। উচিতও নয়।
পত্রিকা: আচ্ছা বাংলায় তেমন নায়িকাকে খুঁজে পাবেন, না কি মুম্বই থেকে কাউকে ভাবতে হবে?
সৃজিত: না, না বাঙালিয়ানা আর ক্যারিশমা দুটোই দরকার। বাংলা থেকেই নেব।
পত্রিকা: মনে হয় এ বার সাক্ষাৎকারটা শেষ হওয়ার মুখে...
সৃজিত: উডি অ্যালেনের কোট দিয়ে শেষ করি। কোটটা এই রকম: যদি ওরা বলে তুমি মহান, তা হলে ওদের বিশ্বাস কোরো না, যদি ওরা বলে তুমি কিস্যু নও, তা হলে চিন্তা কোরো না, জাস্ট নিজের ছবিটা নিজের মতো করে বানাও, সব ঠিক হয়ে যাবে।
পত্রিকা: হুঁ, বুঝলাম। তবুও শেষ জিজ্ঞাস্যজীবনে নারীর সংখ্যা বেশি না ছবির সংখ্যা?
সৃজিত: নারীর কথা বলতে পারব না। (সলজ্জ দৃষ্টি)। তবে অসংখ্য ছবি হাতে। সেগুলো গোছাতে গোছাতেই পাগল হয়ে যাচ্ছি।
পত্রিকা: বলতে চাইছেন নারী নয়, আনাড়ি নয়, স্রেফ কাজ আর কাজ...মানে বন্যেরা বনে সুন্দর, সৃজিত স্টুডিও ফ্লোরে?
সৃজিত: (নীরব হাসি)। |
|
|
|
|
|