|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ৩... |
|
ত্রয়ীর ‘মৌ’তাত |
একসঙ্গে পর্দায় মনোজ মিত্র, রঞ্জিত মল্লিক আর দীপঙ্কর দে।
হাসির ফুলঝুরি তৈরি হল। রাজা সেনের নতুন ছবি। লিখছেন সংযুক্তা বসু |
মনোজ মিত্র মনোজ মিত্রের সঙ্গে দীপঙ্কর দে-র সম্পর্ক সেই ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ পর্ব থেকেই পোক্ত। তারপর কত ছবিতেই ওঁরা একসঙ্গে কাজ করেছেন।
কিংবা ধরা যাক রঞ্জিত মল্লিক আর মনোজ মিত্রর সম্পর্কটা। সেই ‘শত্রু’ থেকে শুরু। বাকিটা ইতিহাস।
তাই এঁরা তিন জন এক ছবিতে কাজ করলে নস্টালজিয়া আর নস্টালজিয়া।
আর এই তিন জন শিল্পীকে ভিত্তি করেই রাজা সেন ‘মৌবনে আজ’ ছবিটি রোমান্টিক কমেডি আকারে বেঁধেছেন।
এ কথা তো সকলেই জানেন এই তিন শিল্পী এক হওয়া মানে দমফাটা কমেডির সপ্তম স্বর্গে উড়ান। রাজা নানা সময় নানা বিষয় নিয়ে ছবি করেছেন। আর তার গল্প বলার ভঙ্গিটাও বেশ সোজা সাপটা। সহজপাচ্য। |
|
|
দীপঙ্কর দে |
রঞ্জিত মল্লিক |
|
কথার ঝিকিমিকি ভরা গান, ঝকঝকে স্মার্টনেস, স্লিক উপস্থাপনা দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর গাঁথার জার্ক, জটিল মানুষজনের মনস্তত্ত্বের সুরিয়াল পোস্টমর্টেম, গিমিকের চটক... এই সব মিলিয়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে স্টাইলিশ সিনেমার যে ঢল নেমেছে, রাজা স্বভাবোচিত ভাবেই তার বাইরে থেকে ‘মৌবনে আজ’এতে একটা সহজ সরল মজাদার গল্প বলার চেষ্টা করেছেন শিল্পী ত্রয়ীকে নিয়ে। যাঁদের অভিনয়ের জেল্লা এখনও অফুরান। এই উৎসবের মরশুমে তাঁরা যেন রংমশাল। গল্পটা একটু ধরিয়ে দিই। মৌবনী গ্রামে কাঠ চেরাইয়ের ব্যবসায়ী রঞ্জিত মল্লিক গ্রামের উন্নয়ন চান। চান তরুণরা ফুটবল খেলা শিখে গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করুক। স্বনির্ভর হোক। বাস্তবে রঞ্জিত মল্লিকের যে ইমেজ তার সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে এ চরিত্র। কথাটা বলতেই, আলো ফুটল রঞ্জিতের মুখে, “সত্যি তাই। চিরকালই চেয়েছি সকলকে নিয়ে সুখে থাকতে। কখনও কারও অনিষ্ট চাইনি। ইন্ডাস্ট্রি থেকে পরিবার পরিজন থেকে পাড়াপড়শি সকলের ভালর কথাই ভাবি। তাই রাজা যখন এমন চরিত্রটার কথা বলল ভাল তো লাগবেই। এ তো একেবারে আমি। তা ছাড়া দীপঙ্কর, মনোজদার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলাম আবার। কত দিনের সম্পর্ক আমাদের। কত কথা
মনে পড়ে....” |
সবচেয়ে তাজ্জব ঘটনা ঘটল যখন জনকল্যাণকামী রঞ্জিত মল্লিকের মৌবনী গ্রামে ফুটবল টিমের কোচ হয়ে এলেন দীপঙ্কর দে ওরফে রেন্টুবাবু। তাঁকে দেখে না হেসে উপায় নেই। ‘আবহমান’ ছবির সেই প্রজ্ঞাবান, দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিন্নভিন্ন পরিচালক কিংবা ‘গানের ওপারে’র সেই গুরুগম্ভীর ঠাকুরদার খোলস পাল্টে দীপঙ্কর দে-র এখানে এক্কেবারে জালিয়াৎচন্দ্র চরিত্র। পরনে রংচঙে স্পোর্টসওয়্যার, পায়ে তেমন জুতো, মুখে বুকনি, সর্বক্ষণ লাফাচ্ছেন ঝাঁপাচ্ছেন-কত কী যে করলেন স্বল্প পরিসরের চরিত্রে। “আমার মতো এমন নানা ভ্যারাইটির চরিত্রে কাজ করার সুযোগ কম শিল্পীই পায়,” বলছেন দীপঙ্কর।
আর রঞ্জিত মল্লিক, মনোজ মিত্রদের সঙ্গে কাজ করার মজাটা? “সেটা তো আছেই। রাজার ছবিতে এই মেলবন্ধনগুলো ঘটে বলেই তো ভাল লাগে। রঞ্জিত কত কালের বন্ধু। ওর সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা থেকে শুরু করে আরও কত রকম বিষয়ে আলোচনা হয়। শু্যটিং করতে করতে আড্ডার মজাটাও তো থাকে। কত দিন ধরে আমরা এই ইন্ডাস্ট্রির কত ওঠাপড়ার সাক্ষী..,” স্মৃতিমেদুর হাসির রেশ রেখে বললেন দীপঙ্কর। |
মনোজ মিত্র |
|
মনোজ, রঞ্জিত, দীপঙ্করেরা থাকলেও লাজুক লাজুক, প্রেমের বন্যা বইয়ে দিয়ে বেশ রসিকতা তৈরি করেছেন রাহুল আর প্রিয়ঙ্কা। যা থেকে বোঝা যায় রাজা এ ছবিতে কান্নাটান্না বাদ দিয়ে পুরোপুরি মজাকেই খেলিয়ে
দিতে চেয়েছেন আকাশে রঙিন ঘুড়ির মতো।
রোমান্টিক কমেডি হিসেবে ‘মৌবনে আজ’-এ প্রিয়ঙ্কার দাদু হিসেবে মনোজ মিত্রের সংলাপে আজকালকার ইতর ভাষার প্রচুর ব্যবহার আছে। যা শুনে বেশ মজা লাগে। তাই তো প্রিয়ঙ্কা স্ল্যাং ছাড়া কথাই বলতে পারেন না। “দাদুর মুখে অমন ভাষা না থাকলে নাতনি শিখবে কী করে?” হাসতে হাসতে বললেন মনোজ মিত্র। মূল কাহিনি সমরেশ মজুমদারের। কিন্তু রংরসের আরও খানিকটা প্রলেপ দিয়েছেন মনোজ। এমন জীবনরসিক নাট্যকার, শিরায় শিরায় তুখড় অভিনয়ের তরঙ্গ বয়ে যায় যাঁর, সেই মনোজ মিত্রও কিন্তু অভিভূত হলেন রঞ্জিত মল্লিকের প্রসঙ্গ উঠতে। বললেন, “ওঁর মতো শান্তশিষ্ট, মৃদুভাষী, সজ্জন আমাদের বিনোদন জগতে বিরল।”
‘দিদি নম্বর ওয়ান’ নিয়ে ব্যস্ত রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক দিন বাদে তাঁর অতি ছিপছিপে গড়ন আর সুন্দর হাসি নিয়ে সিনেমার সংলাপ বললেন। আর তাতে তাঁকে ভারী মিষ্টি দেখাল। আর কৌশিক সেন, তিনিও চাপা রোমান্সের মাধুর্যে, যেমন ভাবে তাঁকে চেনেন দর্শক, তেমনটাই অভিনয় করলেন। এই চরিত্রটাও মনোজেরই সংযোজন।
এক কথায় বলতে হয় ‘মৌবনে আজ’এর মতো অতি চেনা, অতি শোনা, অতি প্রচলিত গল্পের ব্যঞ্জন অম্লমধুর ঝাঁঝে রাঁধতে পরিচালক তো বটেই, হাত লাগিয়েছেন শিল্পীরা সকলেই।
যাতে খেতে হয় চমৎকার। |
|
|
|
|
|