|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
রবীন্দ্র সরোবর |
প্লাস্টিক-রাজ |
কৌশিক ঘোষ |
আশ্বাসই সার। বদলালো না রবীন্দ্র সরোবরের ছবি।
এখনও জলে ভাসছে প্লাস্টিক। পাড়ে ডাঁই করা রয়েছে প্লাস্টিক। যত্রতত্র প্লাস্টিক ছড়িয়ে আছে। কিন্তু এই অঞ্চলকে অনেক দিন আগেই প্লাস্টিক-নিষিদ্ধ অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েক মাস আগেই রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার রবীন্দ্র সরোবর পরিদর্শন করেন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এই সরোবরের কোথাও প্লাস্টিক পড়ে থাকবে না। পরিবেশ দফতর প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য বোর্ড লাগিয়েছে। এই সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের ভার কলকাতা পুরসভাকে হস্তান্তরেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “প্লাস্টিক নিষিদ্ধ অঞ্চল করতে প্রয়োজন সরোবরের চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ এবং নিয়মিত প্রহরার ব্যবস্থা করা। কলকাতা পুরসভা এই সরোবরের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আলোচনা চলছে। অর্থেরও প্রয়োজন।”
কিন্তু কেন এই অবস্থা? |
|
কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিষ কুমার জানান, হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি পরিবেশ দফতরের পাশাপাশি কলকাতা পুরসভাও সরোবরের ভেতরে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বোর্ড লাগিয়েছে। আগামী দু’-এক মাসের মধ্যেই কলকাতা উন্নয়ন সংস্থার (কেআইটি) কাছ থেকে পুরসভা সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের ভার নেবে। দেবাশিসবাবু বলেন, “ভার নেওয়ার পরেই সরোবরকে প্লাস্টিকমুক্ত করার জন্য পরিকাঠামো বাড়াতে হবে। কর্মীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।”
এখনও এই সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণ করে কেআইটি। কেআইটি সূত্রে খবর, রবীন্দ্র সরোবর জাতীয় সরোবর হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পরে ‘ন্যাশনাল লেক কনজারভেশন প্রজেক্ট’-এ কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৪ সালে প্রায় ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। এর মধ্যে সরোবরের জল দূষণমুক্ত করার জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কেআইটি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই আড়াই কোটি টাকার মধ্যে খুব সামান্য অর্থই জলের মান পরীক্ষার জন্য ব্যয় হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, জলের মান ঠিকই আছে। কিছু জলজ উদ্ভিদও ছাড়া হয়েছিল। জলের জন্য বরাদ্দ বাকি অর্থ ব্যয় হয়নি। বাকি অর্থে সৌন্দর্যায়নের কিছু কাজ হয়েছে। ওই অর্থে আর কিছু হয়নি।
|
|
কেআইটি কর্তৃপক্ষ জানান, সরোবরকে প্লাস্টিক-মুক্ত করার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও কর্মী তাঁদের নেই। সরোবরে মোট ছ’টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। সরোবরের পাশে গোবিন্দপুর রেলকলোনি বরাবর পাঁচিল থাকলেও রবীন্দ্র সরোবরের অন্যান্য জায়গা অরক্ষিত। কেআইটি-র এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুধীন নন্দী বলেন, “রবীন্দ্র সরোবরের চার দিকই কার্যত খোলা। বিনা বাধায় অনেকে প্লাস্টিকের নানা জিনিস নিয়ে ঢুকছেন। জলেও প্লাস্টিক ফেলছেন। কর্মীর অভাবে সব সময় নজরদারি করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া হকাররাও প্লাস্টিকের নানা জিনিস
নিয়ে আসেন।”
কেআইটি সূত্রে খবর, বছর চারেক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে এই সরোবর সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়। কী ভাবে সরোবরের পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে সরোবরের চার দিকে প্রাচীর নির্মাণ করা হবে সেই বিষয়ে একটি পরিকল্পনাও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমা দেন। আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও সরোবরের মধ্যের ক্লাবগুলিকেও এই এলাকা প্লাস্টিক-মুক্ত রাখতে নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
|
|
কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রবীন্দ্র সরোবরের সৌন্দর্যায়ন এবং প্লাস্টিক-মুক্ত করার জন্য পুরসভা সব রকম ব্যবস্থা নেবে। এই খাতে অর্থ সংস্থানের বিষয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চলছে। অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে কোনও অসুবিধা হবে না।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|