|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর |
বরাহনগর |
অগ্নিগর্ভ |
কাজল গুপ্ত |
ঘিঞ্জি বসতি। তার ভিতরে রঙের কারখানা। অভিযোগ, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দূর অস্ত্, বৈদ্যুতিন ব্যবস্থারও বেহাল দশা। বরাহনগর পুর-এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের চেহারা এমনই।
সম্প্রতি তাঁতিপাড়ায় একটি বাড়িতে চালু থাকা এমনই এক রঙের কারখানায় আগুন লাগে। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভীত স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এ ঘটনা নতুন নয়। বরাহনগরের পুর এলাকা জুড়ে এমন অনেক ছোট-বড় রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। অধিকাংশেরই কার্যত কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তাঁদের প্রশ্ন, কী ভাবে এই কারখানাগুলি অনুমোদন পেল? প্রশাসন আজও কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি।
বাসিন্দাদের কথা সমর্থন করে বরাহনগর পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের অশোক রায় বলেন, “বহু ছোট-বড় কারখানা এই পুর এলাকায় রয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার সময় কিংবা পুনর্নবীকরণের সময় পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এগুলি পরীক্ষা করার বা ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিকাঠামো পুরসভার নেই। অগ্নি-সুরক্ষার বিষয়টি দমকল দেখে। কিন্তু তাঁদের তরফেও কোনও প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না।” কিন্তু তৃণমূলের কাউন্সিলর অঞ্জন পালের অভিযোগ, “কোনও দিনই এই পরিকাঠামো পুরসভার ছিল না। বাম জমানায় কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে আমরা ইতিমধ্যেই বরাহনগরে একটি দমকল কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছি।” |
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা রঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ রকম ঘটনা আগেও ঘটেছে। অনেকে নিজের বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে এই ধরনের ব্যবসা করছেন। কিন্তু বেশির ভাগ কারখানায় ঠিকমতো বিদ্যুৎ এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখা হয় না। প্রশাসনের তরফেও ব্যবস্থা নিতে দেখি না।”
গঙ্গার কাছেই বরাহনগর পুর এলাকার একটি বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে রঙের কারখানা রয়েছে। কিন্তু বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা মান্ধাতা আমলের। কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। গলি দিয়ে দমকলের গাড়িও ঢোকে না। নেই ধোঁয়া বেরনোর উপায়। কর্মীরা জানান, দীর্ঘ দিন এ ভাবেই চলছে। বিটি রোড ধরে দু’ধারে বিদ্যায়তন সরণি, নিউ ন’পাড়া কলোনি, কুঠিঘাট এলাকা-সহ নানা জায়গায় এ ভাবেই কারখানা চলছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, বরাহনগর এলাকায় হাজার পাঁচেক কারখানা আছে। ন’পাড়ার বাসিন্দা কমল দাসের কথায়: “রুজি-রোজগারের বিষয় বলে কেউ কিছু বলেন না। রোজ গ্যাস ও ধোঁয়ায় চার দিক ভরে যায়। আগুন লাগলে আশপাশের বাড়িরও ক্ষতি হয়।” নিয়োগীপাড়ার বাসিন্দা সনাতন রায় বললেন, “বরাহনগরের সর্বত্র দমকলের গাড়ি ঢোকার মতো চওড়া রাস্তা নেই। ফলে আগুন লাগলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রশাসন অবিলম্বে বিষয়টি দেখুক।” যদিও বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, “অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে পুরকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
|
ছবি: বিতান ভট্টাচার্য |
এই সমস্যার কথা স্বীকার করে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে। তাই আমরা একটি পরিকল্পনা করছি। প্রয়োজনে কোনও বিশেষজ্ঞ এজেন্সি নিয়োগ করে কলকাতা, শহরতলি ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি দেখভাল করা হবে। এর ফলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বরাহনগরের মতো বিভিন্ন এলাকার সমস্যা কমবে।” |
|
|
|
|
|