উত্তর কলকাতা
মেডিক্যাল কলেজ
স্বাস্থ্যকর নয়
ত্বর নোংরা না করার আবেদন জানানো হয়েছে দেওয়ালে। অথচ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশপথের প্রথম গেটের বাঁ দিকে জঞ্জাল ভরা কন্টেনার থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কাছেই জমে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল। একটু দূরে এমসিএইচ ভবনের পিছন দিকে কার্ডিয়াক বহির্বিভাগ বিল্ডিংয়ের নীচে পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত বালিশ, তোষক ও চাদর। চার পাশে প্রস্রাবের তীব্র গন্ধ। প্রতি দিন মেডিক্যাল কলেজে আসা অসংখ্য রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের এই পরিস্থিতির মধ্যেই যাতায়াত করতে হয়।
মেডিক্যাল কলেজের এক নম্বর গেট দিয়ে ঢোকার সময়ে বাঁ দিকে চোখে পড়বে জঞ্জাল ফেলার দু’টি বড় কন্টেনার। অধিকাংশ সময়ে তা আবর্জনায় পূর্ণ। কাক বসছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর। পাশেই খালি জমিতে প্লাস্টিকের বোতলের স্তূপ। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতি দিন বহু রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা এই পথে যাতায়াত করেন। তাঁদের বাধ্য হয়ে নাকে চাপা দিয়ে যেতে হয়।
প্রথম গেটের পাশেই রয়েছে এমসিএইচ ভবন। এখানে ফিমেল মেডিসিন, ফিমেল কার্ডিয়াক, মেল মেডিসিন, মেল কার্ডিয়াক, হেমাটোলজি ছাড়াও কার্ডিয়াক বিভাগের বহির্বিভাগ রয়েছে। কিন্তু ভবনের ঠিক নীচে জড়ো করা রয়েছে পরিত্যক্ত বালিশ, তোষক ও চাদর। তা ছাড়া শৌচাগারের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। ২ নম্বর গেটের ভিতরে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের পাশে মহিলাদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র শৌচাগার। পুরুষদের জন্য রয়েছে একটি উন্মুক্ত শৌচাগার। ফলে অনেকেই হাসপাতালের ফাঁকা জায়গায় প্রস্রাব করেন। দুর্গন্ধ বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া রোগীর আত্মীয়দের ব্যবহার করা খাবারের প্যাকেট, খবরের কাগজ, চায়ের কাপও হাসপাতাল চত্বরে পড়ে থাকে।
কিন্তু কেন এই অবস্থা? হাসপাতাল সূত্রে খবর, হাসপাতালে সাফাইকর্মী আছেন প্রায় ৫৬ জন। তিনটি শিফটে কাজ হয়। এক সাফাইকর্মীর অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজের বিশাল চত্বরের তুলনায় এই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। কেউ অনুপস্থিত থাকলে সমস্যা আরও বাড়ে। তাই হাসপাতাল চত্বর ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না। ওয়ার্ডের ও হাসপাতাল চত্বরের জঞ্জাল দু’জায়গায় জমা পড়ে। কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে দু’টি জায়গায় কন্টেনার রাখা আছে। এক নম্বর গেটের পাশের কন্টেনারে শুধু হাসপাতাল চত্বরের বর্জ্য এবং ইডেন ওয়ার্ডের পাশে রাখা কন্টেনারে হাসপাতাল চত্বর ও মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলা হয়। ওয়ার্ডের বর্জ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় পুড়িয়ে ফেলা হয়।
পুরসভা সূত্রে খবর, প্রতি দিন এক বার পুরসভা কন্টেনারগুলি খালি করে ময়লা নিয়ে যায়। তবে গাড়ি কম থাকলে কয়েক দিন দেরি হয়। পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার বললেন, “হাসপাতালের ভিতরের জঞ্জাল আমরা পরিষ্কার করতে পারি না। ওঁদের নিজস্ব সাফাইকর্মীরা আবর্জনা কন্টেনারে জমা করেন। পুরসভা প্রতি দিন সকালে কন্টেনার থেকে ময়লা তুলে নেয়।” কিন্তু ব্যবহৃত বালিশ, তোষক বা চাদর কী করে হাসপাতাল চত্বরে বিল্ডিংয়ের নীচে পড়ে থাকে? হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, “সাধারণত যে সব রোগীর ছোঁয়াচে অসুখ থাকে তাঁদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রই ফেলে দেওয়া হয়। এর পরে সেগুলি পুড়িয়ে ফেলা হয়।”
মেডিক্যাল কলেজের সুপার সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর কথায়: “সমস্যা আছে। অনেক বার সমাধানেরও চেষ্টা হয়েছে। হাসপাতালের নিজস্ব সাফাইকর্মীর সংখ্যা খুব কম। তবে কোনও ভবনের নীচে তোষক, বালিশ পড়ে আছে বলে আমার জানা নেই।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.