|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা |
জলসঙ্কট |
শিবঠাকুরের আপন দেশে |
স্বপন দাস |
জলের চাপ কম। তাই গোটা বেহালা জুড়েই চলছে পানীয় জলের জন্য হাহাকার। বাদ পড়েনি খোদ মেয়রের ওয়ার্ডও, গোটা কলকাতার জল সরবরাহই রয়েছে যাঁর দায়িত্বে।
সঙ্কটে পর্ণশ্রী, বনমালী নস্কর রোড, পঞ্চাননতলা লেন, গাবতলা লেন-সহ বহু অঞ্চলও। কিছু এলাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে বা জলের গাড়ি পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা চলছে। এ দিকে, বেহালার দু’টি বরোর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এখনও জলের পাইপ লাইন না থাকায় একটি নলকূপই ভরসা। আর তা খারাপ হলে অবস্থা আরও চরমে উঠছে। কিছু কিছু অঞ্চলে গভীর চৌবাচ্চা থাকলেও জলের নাগাল পাওয়া যায় না। পুরসভার তরফেও এ কথা স্বীকার করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, চোঙারবন, শীলপাড়া, সরশুনা, ঠাকুরপুকুর, সখেরবাজারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলের পাইপলাইনই নেই। পাইপলাইন পৌঁছয়নি ১২০-১৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন গলিতেও। |
|
সংযোজিত এলাকা হিসেবে বেহালাকে যখন কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হল, তখন গভীর নলকূপের জল বড় বড় জলাধারে ধরে রেখে পাইপলাইন মারফত তা সরবরাহ করা হত। এখনও কিছু অঞ্চলে সেই সমস্ত লাইন ও বন্ধ হয়ে যাওয়া জলাধারগুলি আছে। আশির দশকের গোড়ায় বেশ কিছু এলাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে আলাদা একটি জল সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, এই ব্যবস্থাগুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ব্যাপারে মাথা ঘামায়নি পুরসভা। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগ সূত্রে খবর, শহর কলকাতায় একটি আবাসন বা পরিবারে প্রতি দিন মাথাপিছু ২০০ লিটার ও বস্তি অঞ্চলে ১০০ লিটার জলের প্রয়োজন ধরে পরিকল্পনা করা হয়। বেহালা অঞ্চলে গত ১০ বছরে জনবসতি যা বেড়েছে, জল সরবরাহ সেই মতো বাড়েনি। নতুন লাইন বসালেও জল সরবরাহ একই থাকায় জলের চাপ কমেছে। ফলে জল পৌঁছয় না সব জায়গায়। অবশ্য গার্ডেনরিচের নতুন প্রকল্প চালু হলেই এ সমস্যার প্রায় সবটাই মিটবে বলে পুরসভার দাবি।
সমস্যার কথা স্বীকার করে বেহালার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “জনসংখ্যা বাড়লেও জল সরবরাহ একই থেকে যাওয়ায় জলের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এখন গার্ডেনরিচ গঙ্গা থেকে জল কম তোলায় পরিশুদ্ধ জলের অভাব রয়েই যাচ্ছে। পুরসভার তরফে আমরা গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প অধিগ্রহণ করেছি। ধাপে ধাপে তার উন্নয়ন করা হবে। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।”
শীলপাড়ার বাসিন্দা রবীন চক্রবর্তীর কথায়: “আমাদের এলাকায় লাইনই বসেনি। ১০ বছর ধরে আর্জি জানাচ্ছি। কাউন্সিলর আশ্বাস দিলেও কাজ হচ্ছে কই?”
এ দিকে, আগামী দিনে জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে ওয়ার্ডপিছু বরাদ্দ অর্থে কী করে সামাল দেবেন, তা নিয়ে চিন্তিত অনেক কাউন্সিলরই। যে টাকা দেওয়া হয়েছে তা যৎসামান্য। তা দিয়ে কিছু করা প্রায় অসম্ভব। ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিপ্রা ঘটক বলেন, “জলের চাপ কম। এখনও ওয়ার্ডের বহু এলাকায় জলের পাইপলাইন পৌঁছতে পারিনি। তার উপর যোগ হয়েছে আমার এলাকার বিভিন্ন আবাসনের নানা উপায়ে জল চুরি। |
|
রিজার্ভারে পাম্প লাগিয়ে জল টেনে নেওয়া হচ্ছে। কিছু সিল করে দিলেও চুরি পুরোপুরি আটকাতে পারিনি। তাই যেখানে সামান্য হলেও জল পাওয়া যেত, তাও ব্যাহত হচ্ছে। ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদীপ পোল্যে বলেন, “জলই নেই, তাতে নতুন পাইপলাইন বসালে অন্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। লাইনে জল না পেয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। অবশ্য ঠাকুরপুকুরের দাসপাড়া বুস্টিং স্টেশন থেকে লাইন টানা হচ্ছে। তাতে সমস্যা কিছুটা মিটবে। যে সব বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পাইপলাইন নেই, সেখানে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করতে হবে।” ১২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সংহিতা দাস বলেন, “জল সমস্যা মেটাতে গভীর নলকূপ বসিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে।”
কলকাতা পুরসভার নলকূপ বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিংহের কথায়: “বাম আমলে শুধু ভোটের দিকে তাকিয়েই বেহালাকে কলকাতা পুরসভার আওতায় আনা হয়েছে। ওই সময় এই এলাকার উন্নয়নের কথা চিন্তা না করায় এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৫০টি পরিবার পিছু একটি করে নলকূপ দেওয়ার নিয়ম আজও আছে। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। চেষ্টা করছি কী করে সব সামাল দেওয়া যায়। তবে গার্ডেনরিচের নতুন জলপ্রকল্প শুরু হলে পুরো জলটা বেহালা পাবে। সমস্যা মিটবে।”
পাশাপাশি, ১৪ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান মানিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অর্ধেক বেহালাই জলসমস্যায় ভুগছে। দ্রুত এর সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। যে সব এলাকায় পাইপলাইন নেই, দ্রুত তা বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে দ্রুতই সমস্যা মিটবে।” |
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|