পূর্ব কলকাতা
শুধুই পরিকল্পনা
বাধার প্রবাহ
কোথাও কচুরিপানায় আটকে জল, কোথাও আবার আবর্জনার স্তূপে। দু’পাড়েরও বেহাল দশা। অনেক জায়গায় পাড় দখল করে দোকান বসেছে। তৈরি হয়েছে বসতি। এই অবস্থা বেলেঘাটা খালের। এই খালেরই বিধাননগর অংশের নাম ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল। সেখানেও সরকারি প্রকল্পের জেরে দীর্ঘ দিন ধরে জলপ্রবাহ বন্ধ। যদিও খাল সংস্কার-সহ একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে নগরোন্নয়ন দফতর।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধুই পরিকল্পনা। কিন্তু খাতায়-কলমে কোনও কাজ হচ্ছে না। খালটি এখন মশার আঁতুর। অবশ্য সেচ দফতরের দাবি, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরকে নিয়ে সার্বিক একটি পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। বেলেঘাটা খাল সংস্কারও এই প্রকল্পের অন্তর্গত।
পাঁচ নম্বর সেক্টরের নিকাশি ও রাস্তার উন্নয়ন নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি। সে ক্ষেত্রে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল নিয়ে ইতিমধ্যেই নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেছেন। এই খালের দায়িত্বে রয়েছে নগরোন্নয়ন দফতর। নবদিগন্তের এগ্জিকিউটিভ অফিসার বদ্রীনারায়ণ কর বলেন, “ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল নিয়ে একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিছু সময় লাগবে। কিন্তু কবে জলপ্রবাহ চালু হবে তা বলতে পারছি না।”
দু’টি বক্স ব্রিজের কাজের জন্য ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে দীর্ঘ দিন জলপ্রবাহ বন্ধ ছিল। ওই কাজ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় মেট্রো প্রকল্পের কাজ। ফলে আজও ওই খালে জলপ্রবাহ বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কেষ্টপুর খালে জলপ্রবাহ থাকায় মশার প্রকোপ কম। ফলে শুধু সংস্কার হলেই হবে না, জলপ্রবাহ চালু করতে হবে। কিন্তু বেলেঘাটা খালে জলপ্রবাহ শুরু না হলে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে জল আসবে না।
খালপাড় সংলগ্ন কেবি-কেসি ব্লকের বাসিন্দা পার্বতী বসু বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে খালের সংস্কার হয় না। মশার আঁতুরঘর। জলপ্রবাহ চালু হলে সমস্যা থাকবে না।” বিধাননগর পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, এই খালটি তাঁদের এক্তিয়ারভুক্ত না হলেও পুরবাসীদের সমস্যা হচ্ছে। তাই এ নিয়ে তাঁরা ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বেলেঘাটা খালপাড় সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরও ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে শোনা গেলেও কোনও কাজ হয়নি। খাল জুড়ে আবর্জনার স্তূপ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অঞ্চলটি কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর বরোর অন্তর্গত। বরো চেয়ারম্যান তৃণমূলের স্বপন সমাদ্দার বলেন, “খালের দু’পাড়ে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে, সৌন্দর্যায়নের জন্য এবং মশা ও মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে অবিলম্বে খাল সংস্কার করার প্রয়োজন।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “শুধু সেচ দফতরের বিষয় নয়। বিভিন্ন সরকারি দফতর এর সঙ্গে যুক্ত। কলকাতা-সহ শহরতলির খালগুলি নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, কলকাতা পুরসভা-সহ বিভিন্ন দফতরের মধ্যে বৈঠকের পরে একটি কমিটি তৈরি হয়। তারা সমীক্ষা করে একটি রিপোর্টও দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য দফতরের কাছে তা পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মতামতের উপর ভিত্তি করে ও আর্থিক বিষয়ে আলোচনার পরে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হবে। এর মধ্যে বেলেঘাটা খালের সংস্কারের কাজও আছে।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.