রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
চেকার্ড ফ্ল্যাগ নাড়ানো শেষ। শুধু ফিনিশিং পয়েন্টে পৌঁছনো বাকি।
স্পিডোমিটার কাঁটা ঘুরছে তিনশো কিলোমিটারের আশেপাশে...অ্যাক্সেলেটরে চেপে বসেছে পা...শেষ ল্যাপে বাধা বলতে শুধু একদল ইংরেজ।
নয়ডার ‘বুদ্ধ সার্কিট’ নয়, এ বাঙালির অতি-পরিচিত ইডেন গার্ডেন্স। যেখানে কোনও বছর চব্বিশের সেবাস্তিয়ান ভেটেল নন, বরং আছেন তিরিশ বছরের এক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু প্র্যাক্টিসের শরীরীভাষাতেও তাঁর এমন বারুদ যে, বাইশ গজের বদলে রেসের ট্র্যাক তুলনায় আসবে আপনা-আপনি।
বেলা তখন সাড়ে বারোটা মতো। টিম ইন্ডিয়া কোচ ডানকান ফ্লেচার হাতে জলের বোতল নিয়ে প্র্যাক্টিস শেষ করে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিয়েছেন। পিছনে গুটি-গুটি রায়না, ইউসুফ, বিরাট কোহলি। সাংবদিককুল প্রস্তুত হচ্ছে ভারত অধিনায়কের প্রেস কনফারেন্সের জন্য। কিন্তু তাতে ধোনির মন কোথায়? রবিন উত্থাপ্পাকে পাঠিয়ে ভারত অধিনায়ক ফের ঢুকে পড়লেন নেটে। আর ঢুকেই মার! কী স্পিনার, কী পেসার। জাতীয় দলের উঠতি স্পিনার রাহুল শর্মা থেকে শুরু করে ময়দানের অনামী পেসার কাউকেই বাদ রাখলেন না। মঙ্গলবারে ম্যাচে চারটে শট ইডেনের গ্যালারিতে ফেলেছিলেন। শুক্রবার প্র্যাক্টিসে উড়ে গেল অন্তত দশ-বারোটা। ধরনটা এমন: ইংরেজদের ভারত-ছাড়া তো করবই, কিন্তু মুখে ঝামা ঘষে! |
আজ ধোনিদের ক্রিকেটেও থাকবে ফুটবলের মেজাজ? ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
শনিবার আবার ইতিহাসও ডাকছে ধোনিকে। ‘হোয়াইটওয়াশে’র পর আরও একবার। ইডেনে এই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি হচ্ছে। টিকিটের চাহিদা পাঁচ গোল দেবে মঙ্গলবারের ওয়ান ডে-কে। সিএবি কর্তারা ধরেই রাখছেন, অন্তত হাজার পঁয়তাল্লিশ লোক শনিবার মাঠে থাকবেন। ঘরের ছেলে মনোজ তিওয়ারি হয়তো শনিবার টিমে অনিশ্চিত, কিন্তু ঝলমলে আয়োজন নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা নেই। ম্যাচের শুরুতে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো থেকে শুরু করে মেডেল পরিয়ে সংবর্ধনা---সবই থাকছে।
কিন্তু তেমন প্রতিপক্ষ কোথায়? এ তো ইংল্যান্ড নয়, ইংল্যান্ডের জলছবি।
নামেই শুধু টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কিন্তু মর্যাদা, আভিজাত্য সবই গিয়েছে এই ইংল্যান্ডের। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিমে কলিংউড-ইওন মর্গ্যান ছিলেন, ছিলেন রায়ান সাইডবটম নামের এক ধুরন্ধর পেসার। আর এখানে কে? কেইসওয়েটার-বোপারা-ফিন। দু’তিন জন ক্রিকেটার পেটের সমস্যায় ভুগছেন। সবেধন নীলমণি একমাত্র কেভিন পিটারসেন, যাঁর পিছনে প্র্যাক্টিসের অর্ধেক সময় খরচ করেও ইংল্যান্ড টিম বলে উঠতে পারল না চোট সারিয়ে শনিবারের ম্যাচে তিনি নামছেন কি না? টিমের হাল দেখে স্কাই স্পোর্টসের সাংবাদিক টিম আব্রাহাম বলেই ফেললেন, “প্রিভিউয়ের অ্যাঙ্গেল একটাই মাথায় আসছে। ইংল্যান্ড এই সিরিজে একটা ম্যাচও জিততে পারবে কি না?” |
ইংরেজ অধিনায়ককেও যা ‘হুমকি’ সামলাতে হচ্ছে! অধিনায়ক অর্থাৎ, গ্রেম সোয়ান যিনি টি-টোয়েন্টির দায়িত্বে। দিন দু’য়েক আগে টুইটে মজা করে লিখেছিলেন, “অন্তত দু’শোটা মৃত্যুর হুমকি আমি পেয়েছি।” এ দিন সত্যিই ‘হুমকি’ এল, এবং সেটা ইংরেজ সাংবাদিকদের কাছ থেকে। ০-৫ হারার পর কী মনে হচ্ছে? সফর থেকে এতটুকু গর্ব নিয়ে ফেরা যাবে? পিটারসেনের সঙ্গে আপনার ঝামেলাই কী সিরিজে টিমের মনোবলের বারোটা বাজিয়ে দিল? উত্তর দিতে গিয়ে কেমন যেন থতমত খেয়ে গেলেন সোয়ান। কোনও রকমে বললেন, “কোথায়, পিটারসেনের সঙ্গে আমার কিছু হয়নি তো?” একটু থেমে ফের বললেন, “জানি যে, গর্ব বাঁচিয়ে ফেরার এটাই আমাদের শেষ সুযোগ।”
সোয়ান বললেন, রায়নারা শুনলেন এমন নয়। বরং শোনালেন। রবিন উত্থাপ্পা যেমন। ঠান্ডা চাউনি দিয়ে বলে গেলেন, “ক্লিন সুইপ চাইছি আমরা। আইসিং অন দ্য কেক বলে একটা কথা আছে না?” আর টি-টোয়েন্টিতে ভারতের যিনি সেরা বাজি, সেই সুরেশ রায়না আবার হোটেলে ফেরার রাস্তায় সিএবি-র একজনকে বলে গিয়েছেন, “জিততে তো হবেই। কিন্তু জিততে হবে ওয়ান ডে সিরিজে পিষে ফেলার মেজাজে।”
শুধু ধোনি নয়, গোটা টিমের মেজাজটা বোঝা যাচ্ছে? ইডেনের ‘ট্র্যাকে’ বিপক্ষের গাড়ি চুরমার না করে এই টিম ইন্ডিয়ার শান্তি নেই! |