নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ইডেনের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। একে স্মরণীয় করে রাখার যাবতীয় আয়োজনই সেরে ফেলেছিল সিএবি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফের ‘বোল্ড’ আইসিসি-র ‘গুগলি’-তে।
ঠিক যেমন গত বিশ্বকাপের সময় শেষ মুহূর্তে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ, তেমনই শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ আইসিসি-র দুর্নীতিদমন শাখার কোপে পড়তে হল সিএবি-কে। ঠিক ছিল, শুক্রবার সন্ধেয় সিএবি আয়োজিত নৈশভোজে বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের পাশাপাশি ম্যাচে অংশগ্রহণকারী দুই দলকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। থাকবেন ধোনি ও তাঁর বাহিনী আর অতিথি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। নৈশভোজের কক্ষে থাকবে ইডেনের ইতিহাস সংক্রান্ত নানা ছবির প্রদর্শনী। দেখানো হবে, ইডেন নিয়ে তৈরি ৫ মিনিট ২২ সেকেন্ডের নতুন একটি তথ্যচিত্রও।
প্রস্তুতি সবই ছিল, কিন্তু দুপুর নাগাদ আইসিসি-র দুর্নীতিদমন শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্তা ধর্মবীর সিংহ যাদব নির্দেশিকা জারি করে জানান, আইসিসি-র নিয়ম অনুযায়ী কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগের দিন সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের নৈশভোজে দু’দেশের ক্রিকেটারদের আমন্ত্রণ জানানো যায় না। সিএবি-র তরফে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল ধর্মবীরকে। কিন্তু চিঁড়ে ভেজেনি। |
অনুশীলনে ব্যস্ত ধোনি। দর্শক সতীর্থরা। শুক্রবার ইডেনে উৎপল সরকারের তোলা ছবি। |
ঘটনা হল, নিষেধাজ্ঞা শুধু নৈশভোজ নিয়েই নয়, ইডেনের ড্রেসিংরুমের লাগোয়া করিডোর ও তার আশপাশের এলাকা নিয়েও। ধর্মবীর স্বয়ং রাতে টিম হোটেলে দাঁড়িয়ে বললেন, “কিছু নির্দেশিকা আমরা জারি করেছি। কিন্তু সেগুলো প্রচারমাধ্যমের সামনে বলতে বাধ্য নই। কাল মাঠেই সব দেখতে পাবেন।”
জানা যাচ্ছে, গত ২৫ অক্টোবর ভারত-ইংল্যান্ড ওয়ান ডে-তে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে আটকে দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে ড্রেসিংরুমের লাগোয়া এলাকায় নিরাপত্তার বলয় কড়া হচ্ছে আরও। আজ শনিবার বিশেষ ব্যারিকেড থাকবে সেখানে। ওই অংশে ম্যাচে অংশগ্রহণকারী ক্রিকেটাররা ছাড়া আর কারও প্রবেশাধিকার থাকবে না।
অধিকাংশ ক্রিকেটারই জানতেন নৈশভোজ হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার জেরে অন্য ব্যবস্থা দেখতে হয়েছে তাঁদের। রাতে তাঁদেরই এক জন হোটেলের কফিশপে বসে আনন্দবাজারকে বললেন, “দুপুর পর্যন্ত জানতাম টিম-ডিনার আছে। বিকেলে শুনলাম হবে না। তাই এখানে খেতে এসেছি।”
সিএবি আয়োজিত নৈশভোজে বোর্ড সভাপতি শ্রীনিবাসন-সহ হাজির ছিলেন শীর্ষস্থানীয় সব কর্তাই। ছিলেন আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল, জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান অনিল কুম্বলে-সহ আরও অনেকে। নৈশভোজে প্রথমে কেক কেটে ইডেনে অনুষ্ঠেয় প্রথম টি-টোয়েন্টিকে স্বাগত জানানো হয়। তার পর দেখানো হয় ইডেনের ইতিহাস নিয়ে তথ্যচিত্র। নৈশভোজ যখন চলছে তখনই নির্বাচকদের সঙ্গে বাদানুবাদে ব্যস্ত ছিলেন ভারত অধিনায়ক ধোনি। সভা শেষে অবশ্য হাসতে হাসতে বেরিয়ে ধোনি বললেন, “আমি কিছু বলব না। যা বলার নির্বাচকরা বলবেন।”
হঠাৎ করে আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখার এমন কড়া নির্দেশনামায়, আইসিসি সভাপতি শরদ পওয়ারের ‘কালো হাত’ দেখতে পাচ্ছেন সিএবি-কর্তাদের একাংশ। মনে করা হচ্ছে, পওয়ার আরও এক বার বুঝিয়ে দিলেন, সিএবি-র ব্যাপারে তিনি এখনও কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ঠিক যেমন বিশ্বকাপের ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল সিএবি-র কাছ থেকে।
সন্ধেয় সিএবি সভাপতি জগমোহন ডালমিয়াকে ধরা হলে তিনি অবশ্য বলেন, “এটা রুটিন নৈশভোজ। প্রত্যেক ম্যাচের আগেই হয়ে থাকে। কার্ড ছাপানো হয়। বোর্ডের সবাইকে পাঠানোও হয়। ক্রিকেটারদের তো আজ ডাকা হয়নি। শনিবার মাঠেই তো ওদের সংবর্ধনা হবে।”
ডালমিয়া মুখে যা-ই বলুন, দু’দেশের ক্রিকেটারদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা যে করা হয়ে গিয়েছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ইংল্যান্ডের টিম ব্রেসনানও লবিতে দাঁড়িয়ে তাঁর এক টিমমেটকে বললেন, “অফিসিয়াল ডিনার বাতিল হয়েছে। আমরা যাচ্ছি না।”
যা দাঁড়াচ্ছে, ইতিহাসের ম্যাচেও কিন্তু বিতর্ক পিছু ছাড়ল না ইডেনের। |