গ্ল্যামারের বুদ্ধ সার্কিট
হতে পারত কলকাতাতেই
ভ্রু...ম, ভ্রু...ম, ভ্রু...ম।
শব্দ ব্রহ্ম কী একেই বলে?
অবিশ্বাস্য রকমের গগনভেদী। আর তেমনি নেশা ধরানো।
শুক্রবার সকাল সওয়া দশটা। এক সঙ্গে চব্বিশটা ফর্মুলা ওয়ান গাড়ি গতির আগুন ছোটাচ্ছে বুদ্ধ সার্কিটে। ভারতীয় গ্রাঁ প্রি-র সরকারি প্রথম দিন। আর প্রথম দিনে এই শব্দটাই শরীরের মধ্যে তিরতিরে উত্তেজনার চোরা স্রোত বইয়ে দিয়ে গেল।
ফর্মুলা ওয়ান ম্যাজিক বলতে যেটা বোঝানো হয়, তাতে সুন্দরী, সুরা আর দুর্নিবার গতির ত্রহ্যস্পর্শের পাশে ফোর্থ ডাইমেনশন অবশ্যই এই শব্দটা। নয়ডার বুদ্ধ সার্কিটে সবার মুখে দিন ভর এই ভ্রু...ম, ভ্রু...ম, ভ্রু...ম। চার দিনের ফর্মুলা ওয়ান উৎসবের সপ্তমীতে আজ বুদ্ধ সার্কিটের জাদু প্রথম গ্যালারিতে বসে চাক্ষুস করলেন দর্শকেরা। তেরঙ্গা সিটগুলো এ দিন ভরার ধারেকাছেও যায়নি। কিন্তু রবিবার নাকি এক লক্ষ আসনের কোথাও তিল ধারণেরও জায়গা হবে না। ক্রমশ রঙবাহারি থেকে আরও রঙিন হচ্ছে ভারতের ঐতিহাসিক প্রথম ফর্মুলা ওয়ান রেস।
মনের কোণে একটা আফসোসের উঁকি মারা কিছুতেই ঠেকানো গেল না। ভারতের মাটিতে এমন আসাধারণ আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাটা তো দিল্লির না হয়ে হতে পারত কলকাতার! নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ভারতীয় অর্থনীতি তার দরজাগুলো খুলে দেওয়ার পর ফর্মুলা ওয়ান কর্তৃপক্ষ সবার আগে এসেছিল কলকাতাতেই। ট্র্যাক গড়তে বাছা হয়েছিল রাজারহাটকে। ভারতীয় রেসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণেই কলকাতার দাবি ছিল সবার আগে। ভারতে রেসিং ব্যাপারটা কলকাতাতেই প্রথম হয় ১৯০৪-এর ২০ অগস্ট। ক্যালকাটা মোটর স্পোর্টস ক্লাবের পত্তন ডেসমন্ড রেনডেলের হাতে। কলকাতার কিন্নি লালই প্রথম ভারতীয় হিসাবে রেসে নামেন ফর্মুলা থ্রি আর ফর্মুলা টু-এ।
শুক্রবার বুদ্ধ সার্কিটে ফর্মুলা ওয়ান গাড়িগুলোর দাপিয়ে বেড়ানো আফসোসটা আরও গভীর করে তুলল। কলকাতা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয় সেই ১৯৯৯ সালে। অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছিল প্রস্তুতি। ডার্ট ট্র্যাক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজে আগ্রহী ছিলেন। ট্র্যাকের নক্সার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল এই হার্মান টিলকেকেই, যে জার্মান বিশেষজ্ঞের তৈরি বুদ্ধ সার্কিট নিয়ে তারিফ থামছে না। সবই কলকাতার পাওনা ছিল। কিন্তু সিগারেট কোম্পানিদের খেলাধুলো স্পনসর করার উপর কেন্দ্রীয় সরকারের বিধিনিষেধের জেরে শেষ মুহূর্তে প্রকল্প থেকে সরে আসে সিগারেট কোম্পানি বি এ টি। লগ্নির অভাবে ২০০৫ নাগাদ চুরমার হয় কলকাতার ফর্মুলা ওয়ান স্বপ্ন।
বুদ্ধ সার্কিটের ট্র্যাকে আবার এ দিন ঘটে গেল প্রথম বিপত্তি। ইঞ্জিন বিগড়ে বারো নম্বর টার্নের কাছে বনবন করে ঘুরে থেমে গেল ফের্নান্দো আলন্সোর ফেরারি। মাত্র চারটে প্র্যাক্টিস ল্যাপ সেরেই। গাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটা লাগালেন স্প্যানিশ তারকা। ট্র্যাকের সেক্টর ছয়ের এই ঘটনা নিজের দলের সঙ্গে সামাল দিলেন কলকাতার ফর্মুলা ওয়ান মার্শাল জন মুখোপাধ্যায়। ভার্জিন রেসিংয়ের ডি’অ্যাম্ব্রোসিওর গাড়িও দুর্ঘটনায় পড়ল প্রায় একই জায়গায়। সার্কিটের মাথার দিকে ওই গোল করে ঘুরে আসা মোড়টার কাছেই। বিকালে চালকরা প্রত্যেকেই প্রায় এক কথা বললেন। “দারুণ সার্কিট। কয়েকটা রিস্কি র্টান আছে বলে আরও চ্যালেঞ্জিং।”
ঝুঁকি নিতে গিয়ে গুনাগার দিতে হল লুইস হ্যামিল্টনকে। এদিনও গতি কমাতে বলা হলুদ ফ্ল্যাগের তোয়াক্কা না করে বেশি জোরে চালাতে গিয়ে তিন গ্রিডের শাস্তি পেলেন। মানে, শনিবার পোল পজিশনের লড়াইয়ে তিনি যত নম্বরেই যোগ্যতা অর্জন করুন, রেসে নামতে হবে তার থেকে তিন ধাপ পিছিয়ে। হ্যামিল্টন স্বীকার করে নিলেন, “দোষ আমারই।”
গুটি গুটি পৌঁছে যাচ্ছেন ফর্মুলা ওয়ানের বিদেশি ফ্যানরা। রাতারাতি দুম করে বেড়ে গিয়েছে সোনালী চুল, নীল নয়নাদের সংখ্যা।
ভারতীয় গ্ল্যামারে ছোঁয়া নিয়ে এলেন গুল পানাং। প্রাক্তন ভারত সুন্দরী নিজে র্যালি করেন। প্রিয় দল রেড বুল। তবে সমর্থন করবেন সহারা ফোর্স ইন্ডিয়াকেও। প্রিয় চালক? “শুমাখারে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় কি?” উল্টে করলেন প্রশ্নটা। গ্যালারিতে আর পিট লেনের উপরে প্যাডক ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে ঝড় বয়ে গেল অবশ্য তাঁর আসায়। যতক্ষণ ছিলেন আর যে ক’বার হাত নাড়ালেন, মাতিয়ে দিয়ে গেলেন বিপাশা বসু। সহারা জানাল, রবিবার সপরিবারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আসা পাকা।
ভারতীয় প্রভাবটা আরও গাঢ় করতে লিফ্ট ম্যানরাও পাগড়ি আর চাপকানে। লাগাতার লাইভ ভাংড়া। ঢোলের তালে তালে মাঝে মাঝেই দুলে উঠছেন জার্মান, ব্রিটিশ, সুইস, জাপানি। খানা-পিনার ঢালাও আয়োজন পাডক ক্লাবে। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এই উত্তেজনা, এত আবেগ, সবই তো দিল্লির না হয়ে কলকাতার হতে পারত!
সেই ১৯১১-র দিল্লির কাছে দেশের রাজধানী হওয়ার গৌরব হারিয়েছিল কলকাতা।
ঠিক একশো বছর পরে ফর্মুলা ওয়ানের লড়াইটাও জিতে নিল দিল্লিই।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.