প্রীতম সাহা ও কুণাল বসু • কলকাতা |
কখনও টোলগের জন্য বল বাড়াচ্ছেন। কখনও রবিন সিংহ। বিপক্ষ চাপ বাড়ালে আবার ওপারা-নির্মলের সাহায্যে নেমে আসছেন রক্ষণেও। স্কটিশ প্রিমিয়ার লিগে দশ বছর ধরে ফরোয়ার্ড খেললেও, শনিবার যুবভারতীতে একজন মিডফিল্ডার হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে অ্যালান গাওয়ের।
শুক্রবার সকালে লাল-হলুদ অনুশীলনে গিয়ে দেখা গেল শুধু গাওয়ের লাফালাফি আর ছটফটানি। কে বলবে, আই লিগের প্রথম ম্যাচে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে খেলতে নামার দু’ঘণ্টা আগে হঠাৎ সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি? হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট দেখিয়ে।
গাওয়ের লাফালাফির সঙ্গে চোখ টানল একটা করুণ দৃশ্যও। স্কটিশ ফুটবলারের প্রতি যত মনোযোগ বাড়ছে মর্গ্যানের, ততই ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে এক নাইজিরিয়ান ফুটবলারের মুখ। ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠে তাঁর জায়গাতেই খেলবেন গাও। পেন ওরজি দৌড়োচ্ছেন, বলও বাড়াচ্ছেন। পার্থক্য একটাই, তিনি প্রথম দলে নেই। তা হলে কি গাওয়ের আবির্ভাবে নাইজিরিয়ান মিডিওর গুরুত্ব কমে যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গলে? ভবিষ্যৎ যাই হোক, আই লিগে পেনের প্রথম দলে ঢোকার সম্ভাবনা কমে যাবে, যদি শনিবারের ম্যাচে গাওয়ের সৌজন্যে ইস্টবেঙ্গল জিতে যায়!
শুধু মাঝমাঠ নয়, তিন কাঠির নীচেও পরিবর্তনের ছাপ পরিষ্কার। আর সন্দীপ বা অভ্র নন, মর্গ্যান মজে গুরপ্রীত সিংহকে নিয়ে। কালীঘাট থেকে আসা দেবজিৎ মজুমদারও চোখ টানলেন। অনুশীলনে মর্গ্যান আলাদা গুরুত্ব দিলেন দু’জনকেই। তবে গাওয়ের নতুন ভূমিকা ঘিরে চরম অস্বস্তি বাড়ছে ইস্টবেঙ্গল অন্দরমহলে।
চার্চিলের কাছে হারের পর শনিবার প্রয়াগ ইউনাইটেডকে যে করেই হোক হারাতে মরিয়া ইস্টবেঙ্গল। তবে কাজটা যে সহজ হবে না সেটা মেনে নিলেন মর্গ্যান। এমনিতে প্রয়াগ টিমটা দাঁড়িয়ে তিন জনের ওপর। রক্ষণে স্টপার বেলো রাজাক সব ঝড়ঝাপটা সামলান। মাঝমাঠ এবং উইথড্রল ফরোয়ার্ডে ইউসুফ ইয়াকুবু খেলাটা তৈরি করেন। ফরোয়ার্ডে গোল-সন্ধানী জোসিমার। এঁদের মধ্যে ইয়াকুবু বেশ মারাত্মক।
ইউনাইটেড কোচ সঞ্জয় সেন অবশ্য প্রথম দল কী হবে, সেটা গোপনই রাখলেন। তবে অনুশীলনে প্রতিআক্রমণের ওপরই বাড়তি নজর দিতে দেখা গেল তাঁকে। বলছিলেন, “আমার দলে কোনও নির্দিষ্ট তারকা নেই। সবাই তারকা।” ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রতিবার ভাল খেলে প্রয়াগ ইউনাইটেড। সঞ্জয় ওই প্রসঙ্গে বলছিলেন, “ফেড কাপে আমরা ভাল খেলে হেরেছিলাম। এ বারও ভাল খেলব।” তাঁর প্র্যাক্টিসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সেট পিস নিয়ে আলোচনা। ইস্টবেঙ্গলের টোলগের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান ইউনাইটেডের ভিনসেন্ট। শনিবার তো বন্ধুর বিরুদ্ধে খেলা শুনে ভিনসেন্ট বললেন, “দু’জনের অবস্থাই এক রকম। কেউ গোল পাচ্ছে না।”
ইস্টবেঙ্গল কোচ মুখে কিছু না বললেও অন্দরের দৃশ্যমাল্যটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। যন্ত্রের সাহায্যে যদি মানুষের ভয় মাপার কোনও ব্যবস্থা থাকত, তা হলে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের মস্তিষ্কের প্রত্যেক কোষে কোষে দেখা যেত ইয়াকুবু। ভয় ইয়াকুবু। আতঙ্ক ইয়াকুবু। চিন্তা ইয়াকুবু। গত বছর ইয়াকুবু ছিলেন সালগাওকরে। তাঁকে আটকানোর দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা দু’জনেই শুক্রবার অনুশীলন করলেন। গুরবিন্দর সিংহ খেলবেন না। ওপারা খেলবেন। দলের প্রধান স্টপারের অভিমত, “ইয়াকুবুকে আটকে দেব। কোনও অসুবিধা হবে না।”
পালাবদলের মধ্যে দিয়ে নতুন সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখছেন ট্রেভর মর্গ্যান। কতটা সফল হতে পারবেন, সেটার জন্য চব্বিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
এ দিকে শুক্রবারের অন্য ম্যাচে সালগাওকর ৪-০ হারাল পৈলানকে। শিলং লাজং ১-০ হারাল হ্যালকে। পুণে এফসি ২-২ ড্র করেছে স্পোর্টিং গোয়ার সঙ্গে।
|
ইস্টবেঙ্গল : প্রয়াগ ইউনাইটেড (যুবভারতী ৩-৩০)
চার্চিল : এয়ার ইন্ডিয়া (মারগাও) |