আতসবাজির ‘দূষণ’ এ বার গত বারের চেয়েও বেশি
বাজি পোড়ার দূষণে গত বছরকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে এ বছরের কালীপুজো। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কলকাতা ও শহরতলির বাতাসে দৈনন্দিন দূষণের যে হিসেব দেয়, সেখান থেকেই এই প্রমাণ মিলেছে।
এ রাজ্যে কালীপুজোয় সবচেয়ে বেশি বাজি পোড়ে। গত প্রায় দশ বছর শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। কিন্তু অভিযোগ, বাজি পুড়িয়ে যে বিপুল বায়ুদূষণ হয়, তা নিয়ন্ত্রণে তেমন উদ্যোগী হয়নি পর্ষদ। বছর তিন আগে কালীপুজো-দীপাবলির রাতে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে আটকে থাকা ঘন ধোঁয়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিজ্ঞানীদের নজরে আসার পরেই দূষণের ভয়াবহ চেহারাটা সামনে আসে। বায়ুদূষণ পরিমাপক যন্ত্রেও দূষণের ওই মাত্রা ধরা পড়ে। ওই ধোঁয়ার বেশির ভাগটাই ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড। ওই বছর থেকেই কালীপুজো ও তার পরের কয়েক রাতে বাজির প্রভাব ধরতে দূষণ মাপার বিশেষ ব্যবস্থা করে পর্ষদ। বসত এলাকায় বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার সহনমাত্রা ১০০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার। কিন্তু এ বারের কালীপুজোর রাতে বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা অতিক্রম করে হয় ৩৩৬.৪২ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার। পর দিন কলকাতা ও শহরতলিতে তুলনামূলক ভাবে অনেক কম বাজি ফেটেছে। কিন্তু ওই দিনও প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২১৬.৮৯ মাইক্রোগ্রাম সূক্ষ্ম ধূলিকণা মিলেছে। বাতাসে এ ভাবে ধূলিকণা বাড়ার কারণ বাজিই। কারণ, কালীপুজোর ৩ দিন আগেও কলকাতার বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণার গড় পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৬২ মাইক্রোগ্রাম।
গত বছর কালীপুজোর রাতে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধূলিকণা ছিল কিছু কম, ২৬২.২৫ মাইক্রোগ্রাম। পর দিন তা হয় ২১৬ মাইক্রোগ্রাম। এই ধূলিকণা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ, এই কণা ১০ মাইক্রন বা তার কম হওয়ায় নাকের ঝিল্লি পেরিয়ে সহজেই ফুসফুসে পৌঁছয়। এই কণায় কার্বন ছাড়াও অনেক বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। সাধারণত নভেম্বরে কালীপুজো হয়। এ বার পুজো হয়েছে অনেক আগেই। ওই সময়ে রাতে কুয়াশা থাকায় বাজির ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলের উপরে উঠতে পারে না। তবুও দেখা যাচ্ছে, এ বছর কালীপুজোর রাতে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ ছিল বহু গুণ বেশি।
২০০৯-এ কালীপুজোর রাতে বাজির দূষণ কমাতে নির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ করে পর্ষদ। রাত ১১টার পরে যাতে বাজি না ফাটে, তা নিশ্চিত করতে একটি লিখিত প্রস্তাব তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রীর কাছে পাঠান পর্ষদের তদানীন্তন চেয়ারম্যান প্রবুদ্ধনাথ রায়। কিন্তু নির্বাচন এসে পড়ায় মন্ত্রী প্রস্তাব নিয়ে আর এগোতে রাজি হননি। প্রবুদ্ধবাবুর যুক্তি ছিল, শীতে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা বেড়ে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এমনিতে বাজির ধোঁয়ার সঙ্গে বেরেনো সূক্ষ্ম ধূলিকণা বায়ূমণ্ডলের উপরের দিকে উঠে যায়। কিন্তু রাত বাড়লে বাতাস ভারী হলেও ধূলিকণা উপরে উঠতে পারে না। বায়ুমণ্ডলের নীচেই জমাট বেধে থাকে।
তাই শব্দবাজিই হোক বা আতসবাজি, দূষণ থেকে কিন্তু নিষ্কৃতি নেই।
এ দিকে, বারাসত, মধ্যমগ্রাম, বিরাটি ও রাজারহাটে শব্দবাজির দাপট এ বার যথেষ্টই ছিল। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “প্রচুর শব্দবাজি আটকও হয়েছে। গ্রেফতারের সংখ্যাও প্রচুর। তবে তেমন কোনও গণ্ডগোল হয়নি।” শুক্রবার সকালে বারাসতের সাউথ ভাটরার কাছে রাস্তার আলো থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে খড়বোঝাই একটি ট্রাকে আগুন লাগে। পুলিশ ও দমকল আগুন নেভায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.