হার্টের বাইপাস অপারেশন হয়েছিল তাঁর। কান ফাটানো বাজির আওয়াজ সহ্য করতে পারছিলেন না। সে কথা জানাতে নিজেই গিয়েছিলেন স্থানীয় থানায়। অভিযোগ, পুলিশকে জানানোর পরেও শব্দবাজির দৌরাত্ম্য কমেনি। এর কিছু পরেই মারা যান ৭২ বছরের পীযূষকান্তি সরকার।
দক্ষিণ শহরতলির রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতের এই ঘটনা শব্দবাজির যথেচ্ছাচার এবং তা দমনে প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগকেই ফের সামনে নিয়ে এল। পীযূষবাবুর বাড়ির সামনে পাড়ার ছেলেরা শব্দবাজি ফাটাতে শুরু করলে তিনি তাঁদের বারণ করেন। কারণ তিনি ছিলেন হার্টের রোগী। বাজির শব্দে অসুবিধা বাড়তে থাকায় তিনি রবীন্দ্রনগর থানায় বিষয়টি জানান। কিন্তু পুলিশের দাবি, পীযূষকান্তিবাবু লিখিত অভিযোগ করেননি। তার পরে বাড়ি ফিরে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। হাসপাতালের পথে পীযূষবাবুর মৃত্যু হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই রাতে প্রতিবেশী অরুণ গোস্বামীকে সঙ্গে নিয়ে পীযূষবাবু রবীন্দ্রনগর থানায় গিয়ে শব্দবাজির দৌরাত্ম্যের কথা জানান। অরুণবাবু বলেন, “আমি আর পীযুষবাবু থানায় গিয়ে বাজির দৌরাত্ম্যের কথা জানাই।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ঠেকাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকদের একটি দল তখন ঘটনাস্থলের কাছেই ছিল। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটায় এলাকাবাসী বিস্মিত।
পীযূষকান্তিবাবুর ছোট ছেলে প্রবুদ্ধ সরকার বলেন, “থানা থেকে ফিরে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। একাধিক বার বারণ করা সত্ত্বেও শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ হয়নি।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই রাতে পীযূষবাবুর মৌখিক অভিযোগ অনুযায়ী এলাকায় তল্লাশি হয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশ গিয়ে টহলদারি চালিয়েছে।” পীযূষবাবুর পরিজনদের বক্তব্য, পুলিশি টহল সত্ত্বেও শব্দবাজি বন্ধ হয়নি। পীযূষবাবুর পরিবার সূত্রে খবর, তাঁরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করবেন।
তবে পরিবেশ সচিব আরপিএস কাহালো বলেন, “পুলিশের রিপোর্ট পেয়ে ব্যবস্থা নেব।”
পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার অবশ্য শব্দবাজির সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক আছে তা মানতেই নারাজ। তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়নি। পীযূষকান্তিবাবুর হার্টের রোগ ছিল। রক্তচাপও বেশি ছিল। সে কারণেই ওঁর মৃত্যু হয়েছে। এর সঙ্গে শব্দবাজির সম্পর্ক নেই।” তবে বাজির আওয়াজেই পীযূষকান্তিবাবুর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরা। হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ অশোক কর বলেন, “শব্দবাজির আওয়াজে হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পীযূষবাবুর যেহেতু বাইপাস হয়েছিল, তাই শব্দবাজির আওয়াজ বা এই ধরনের আচমকা কোনও ‘টেনশন’ থেকে হার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।” |